27 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"আমার ভালোবাসা মাওলানা ভাসানী" বইটির ‘আমি কান পেতে রই' অংশ থেকে নেয়াঃ
নামকরণে ভালােবাসা’ সজ্ঞানে রেখেছি। তাঁকে অবলােকন ও পর্যবেক্ষণ সবখানে আমার ভালােবাসা জুড়ে আছ..
TK. 300TK. 258 You Save TK. 42 (14%)
Related Products
Product Specification & Summary
"আমার ভালোবাসা মাওলানা ভাসানী" বইটির ‘আমি কান পেতে রই' অংশ থেকে নেয়াঃ
নামকরণে ভালােবাসা’ সজ্ঞানে রেখেছি। তাঁকে অবলােকন ও পর্যবেক্ষণ সবখানে আমার ভালােবাসা জুড়ে আছে। আবেগ থাকলেও তিনি এত প্রকাশ ও সত্য যে, অতিকথনের আশ্রয় নিতে হয় না।
কিন্তু বড় সত্য হলাে, মওলানা ভাসানী রাজীতিবিদ। শুধু তাঁর রাজনীতি বহন করে চললে ভালােবাসা’ কোথাও না-কোথাও বিষন্ন হতে বাধ্য। রাজনীতিবিদ্ধ মানুষটিকেও নিরন্তর ভালােবাসা যায়। শর্ত হলাে, তার জীবনবােধের উৎস কোথায় জানা চাই।
এ গ্রন্থে অত্যল্প যা লিখেছি, তাতেও দাবি করতে পারি, মওলানা ভাসানীর জীবন ও সংগ্রামের গভীরে ভাববার উপাত্ত উপাদান উপস্থাপন করেছি। নিঃসন্দেহে তিনি ব্যতিক্রম। ৩টি যুগেই তিনি তাঁর মত। ব্রিটিশ যুগে স্বাধীনতার পাশাপাশি চেয়েছেন সমাজ-পরিবর্তন। জমিদারতন্ত্র মহাজনতন্ত্র থাকা চলবে না। সামন্ত শােষণের কোন হাতিয়ার বরদাশত করা হবে না; তাই ১৯১৭ থেকে কেবলই রাজপথে, গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে, এমনকি দুর্গম বিধ্বস্ত জনপদে; কখনাে পদব্রজে, কখনাে গাে-মােষের শকটে। ১৯৩৭ হতে বিচরণ ক্ষেত্র ঐসব রেখেও সংযােজন করলেন সংসদীয় জীবনআসামে। তিনি তখন দলের সভাপতি এবং এম.এল.এ-ও তাঁর দল ক্ষমতাসীন হলে কি হবে, বিরােধী দলের চেয়ে তিনিই বড় সমালােচক, তিনিই ত্রাস। তিনি ভালােবাসবেন এবং তাঁকে ভালােবাসবেন রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন যেন কেউ ছিল না। পূর্ব বাংলায় তাঁকে চলে আসতে হলাে।
পাকিস্তান-যুগে প্রথমে মনে হলাে, ভালােবাসার মানুষ তিনি পেয়ে গেছেন। মুসলিম লীগকে আওয়ামের (সর্বসাধারণের) করতে অপূর্ব প্রতিভাধর নিষ্ঠাবান ভালােবাসার মানুষ অনেক পেলেন। বিস্তর সাধ্য-সাধনার পর যারা ক্ষমতাসীন হলেন, মওলানা ভাসানীর বিপরীতে তাঁরা রাবণ সেজে গেলেন। এবারের রাবণ শিলং গৌহাটির ক্ষুদ্র গণ্ডির নয়, এঁদের লালন-পালনকারী খােদ মার্কিন মুলুক, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। অকুতােভয় মওলানা ভাসানী প্রমাদ গুণলেন। ১৯৫৭’র ফেব্রুয়ারিতে কাগমারী সম্মেলন মওলানা ভাসানীকে বুঝিয়ে দিল, তােমাকে যারা ভালােবেসেছিল তাদের ভালােবাসা মসনদ পর্যন্ত। আবারও তােমাকে নতুন করে ভাবতে হবে, নতুন করে চলতে হবে।
এবার ভালােবাসার মানুষ সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী দুর্দান্ত দেশপ্রেমিক। অনেক স্বপ্ন ছড়িয়ে দেয়া হলাে। মানুষ আর শােষিত হবে না। মানুষ আর বৈষম্যের নিপীড়নে বঞ্চিত হবে না, অপমানিত হবে না। কিন্তু না, শেষ বিচারে দেখা গেল, কেউ-তাে মওলানা ভাসানীর মত পথকে ভালােবাসে না, ভালােবাসে নিজ দর্পণে দেখা আপন ভূবনকে। যখন তিনি বললেন, স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ- কূট তর্কই সার হল। তাঁর ভালােবাসার মানুষগুলাে কোথাও ছিন্ন কোথাও ন্নি হয়ে গেল।
বাংলাদেশ যুগে এক অর্থে তিনি একা। সমকালীন কেউ বেঁচে নেই। তবু বার্ধক্যক্লান্তি তাঁকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। আধিপত্যবাদের মুকাবিলায় তিনি চল্লিশপঞ্চাশ দশকের মতােই তারুণ্যদীপ্ত। দুর্নীতি দুর্ভিক্ষ স্বেচ্ছাচার সবকিছুর বিরুদ্ধে তিনি সােচ্চার। মিছিল দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। ফারাক্কা দিয়ে শেষ করলেন।
দুঃস্থ-দুর্বলের ভালােবাসা নিয়ে জীবন কাটালেন। নিঃশর্তে ও নিঃস্বার্থে তারাই শুধু তাঁকে ভালােবেসে ছিলেন। তাঁদেরকে ভালােবেসেই চিরবিদায় নিলেন।