'বাঘ ও ব্যাঙের গল্প' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা:
আলী ইমাম এবং শিশুসাহিত্য-দুটোই সমার্থক । প্রায় ৫০ বছর ধরে নিরন্তর স্বপ্নবিলাসী শিশুসাহিত্য রচনার। এক দক্ষ রাজকুমার তিনি। শিশুমানস, শিশুজগত, শিশুকল্পনাকে ধারণ করে বহু বিচিত্র রচনা সম্ভারে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি বাংলা শিশুসাহিত্য। চিরায়ত রচনাভঙ্গি, ধ্রুপদ কাহিনি নির্মাণ এবং ক্লাসিক্যাল শিশুসাহিত্যের মর্মকে তিনি কর্মে রূপান্তর করেছেন । পাঁচ শতাধিক গ্রন্থের আয়নায় আলী ইমামকে প্রতিবিম্বিত করলে বিস্মিত হতে হয়। শিশুসাহিত্য জগতের যাবতীয় অনুষঙ্গ ও কলকজাকে সযত্নে তিনি আত্মস্থ করেছেন। শব্দজালে বন্দি করেছেন মধুর রূপকল্পনাকে। আলী ইমাম সেই বিরল বাক্য। শ্রমিকদের একজন-ত্যাগ ও মোহের ছলনে যিনি শিশুসাহিত্যের স্বপ্নময় পথ থেকে কখনই সরে দাঁড়াননি।
কমপ্লিট শিশুসাহিত্যিক বলতে যা বোঝায় আলী ইমাম তারই স্বয়ম্ভ প্রতীক। শুধুই অর্থহীন কল্পনার। উডডীন ফানুস নয়, আলী ইমামের রচনা বাস্তব পৃথিবীর ধুলিকণাকেও স্পর্শ করেছে। আলী ইমামের মূল ক্ষেত্র গদ্য রচনা। গল্প, উপন্যাস, ফিচার, ভ্রমণকাহিনি, বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা, প্রবন্ধ-বিন্দু বিন্দু বহু রত্নকণায় তিনি আমাদের শিশুসাহিত্যকে পত্রপুষ্প-পল্লবে সজ্জিত করেছেন। আলী ইমাম নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছেন স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে । নিষ্ফলা, অনুর্বর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিভাবকহীন আমাদের শিশুসাহিত্যকে তিনি সাবালক করেছেন । অজস্র, অবিরাম, ক্লান্তিহীন রচনা তার । দূর লক্ষ্যপানে একাকী অভিলাষী যাত্রা তার। আলোর মশাল হাতে, গভীর ও সুপ্তি-ভাঙানিয়া, তিমিরবিদারী অভ্যুদয়ের সৈনিক তিনি। এক সামগ্রিক জীবন-মগ্নতায় শিশুচৈতন্যকে যিনি লালন করেন, তার মতো সার্থকনামা শিশুসাহিত্যিক সমগ্র। বাংলাসাহিত্যের প্রেক্ষাপটেই খুঁজে পাওয়া ভার। দ্বিধাহীন বাক্যে লেখা যায়, আলী ইমাম একমেবাদ্বিতীয়ম।
প্রচ্ছদ : বিদেশি চিত্র অবলম্বনে
মশিউর রহমান
সূ চি পা তা:
বাঘ ও ব্যাঙ ৫
এক পায়ে দাঁড়িয়ে ৯
বুনো হাঁসের ডিম ১৩
ঝিনুক আর সারস ২০
হলদে-কালো ছানাগুলো ২৫
বানর ও কাঁকড়া ৩৪
রাখাল ৪৩
পাতাপুতি ৪৮
লেখক পরিচিতি:
জন্ম : ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫০ ব্রাহ্মণবাড়িয়া । পিতা : মরহুম আলী আকবর, মাতা : শাহজাদী বেগম।
শিশু সংগঠক, সুবক্তা এবং ৫৩০টি শিশুসাহিত্যবিষয়ক গ্রন্থের রচিয়তা। প্রকৃতি, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রাণিজগত, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে লিখেছেন। সাহিত্যের সবকটি শাখা, ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, জীবনী, ভ্রমণকাহিনি, অনুবাদ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি রচনা করেছেন ।
১৯৬৬ সালে ঢাকার নবাবপুর স্কুল হতে ম্যাট্রিকুলেশন । ১৯৬৭৬৯-এ জগন্নাথ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র। কলেজের ছোটগল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ।
প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ : ১৯৭৬ সালে গল্প সংকলন “দ্বীপের নাম মধুবুনিয়া'। প্রকাশক : বর্ণ মিছিল, ঢাকা। বাংলা একাডেমীর ফেলাে। দেশের বিশিষ্ট সব পত্রপত্রিকায় লিখেছেন প্রচুর। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক । তাকে পেশাগত কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরতে হয়েছে। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আরব আমীরাত, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ব্রাজিল প্রধান।
তিনি তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য যে সমস্ত পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলা একাডেমী পুরস্কার (২০০২), শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ইকো সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ স্বর্ণপদক, নওয়াব সলিমুল্লাহ পদক, নবকুঁড়ি পদক, সমাজকল্যাণ কর্মী সংঘ। পুরস্কার, জসীমউদদীন স্মৃতি সংসদ পুরস্কার, হোসনে আরা শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২ বার), ছোটদের কাগজ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, লুবনা জাহান সাহিত্য পুরস্কার, সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কার, নওয়াব ফয়জুননেসা স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার (২০১২), চন্দ্রাবতী একাডেমি পুরস্কার (২০১৫)।
স্ত্রী : রাজিয়া ইমাম লিপি
পুত্র : তানভীর ইমাম অন্তু।
কন্যা : সাবিনা ইমাম অনিতা
পৌত্র : মুনতাকা ইমাম অমিয়,
শামিন মুস্তাকিন