247 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
‘যোগী কথামৃত’ বইয়ের গ্রন্থকার প্রসঙ্গেঃ
“পরমহংস যোগানন্দ হলেন ভারতের গৌরব, প্রাচীন মুনি-ঋষিদের এক আদর্শ প্রতিনিধি। তিনি যেন এক অমেয় মূল্যের বিরল রত্ন, যার তুল্য কাউ..
TK. 440
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Product Specification & Summary
‘যোগী কথামৃত’ বইয়ের গ্রন্থকার প্রসঙ্গেঃ
“পরমহংস যোগানন্দ হলেন ভারতের গৌরব, প্রাচীন মুনি-ঋষিদের এক আদর্শ প্রতিনিধি। তিনি যেন এক অমেয় মূল্যের বিরল রত্ন, যার তুল্য কাউকে পৃথিবী আগে দেখেনি।” — মহামান্য স্বামী শিবানন্দ, হৃষিকেশের ‘দি ডিভাইন লাইফ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
“ইহজগতে যোগানন্দের উপস্থিতি ছিল তমসার মাঝে দীপ্যমান প্রদীপ্ত জ্যোতির তুল্য। একমাত্র মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন দেখা দিলে তবেই তাঁর মত মহাপুরুষ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন।” — মহামান্য শ্ৰী চন্দ্ৰশেখরেন্দ্ৰ স্বরস্বতী, শঙ্করাচাৰ্য্য কাঞ্চীপুরম
১৮৯৩ সালের ৫ই জানুয়ারী উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরে শ্ৰীশ্ৰী পরমহংস যোগানন্দ জন্মগ্রহণ করে, সকল জাতি ও ধর্মের মানুষকে নিজেদের জীবনে মানবাত্মার শোভনতা, মহত্ব ও দিব্যতার আরও অনুভব ও প্রকাশে সাহায্য করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।
১৯১৫ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে তাঁর গুরু শ্ৰীশ্ৰী স্বামী শ্ৰীযুক্তেশ্বর গিরির থেকে তিনি সন্ন্যাস লাভ করেন। শ্ৰীযুক্তেশ্বরজী পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ভারতের সুপ্রাচীন ধ্যান প্রক্রিয়া “ক্রিয়া যোগ” কে সারা বিশ্বে প্রসারিত করাই হবে শ্ৰী যোগানন্দের জীবনের লক্ষ্য। ১৯২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে আয়োজিত ইণ্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ রিলিজিয়স লিবারোল্স-এ ভারতীয় প্রতিনিধিরূপে যোগদানের আমন্ত্রণ তিনি গ্রহণ করেন।
তাঁর শিক্ষাবলীকে প্রসার ও প্রচারের কাজের মাধ্যম হিসেবে পরমহংস যোগানন্দ, যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইণ্ডিয়া/সেল্ফ-রিয়ালাইজেশন ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর রচনার দ্বারা এবং ভারতবর্ষ, আমেরিকা ও য়ুরোপের বিস্তৃত অঞ্চলে ভাষণ দিয়ে ও অসংখ্য আশ্রম ও ধ্যানকেন্দ্র স্থাপন করে তিনি হাজার হাজার সত্যসন্ধানীকে প্রাচীন যোগের বিজ্ঞান ও দর্শন এবং তার ধ্যান প্রণালীর সার্বজনীন প্রবিধির সঙ্গে পরিচয় করান। ১৯৫২ সালের ৭ই মার্চ লস অ্যাঞ্জেলসে পরমহংসজী মহাসমাধিতে লীন হন।
শ্ৰীশ্ৰী পরমহংস যোগানন্দজী আধ্যাত্মিক ও মানবসেবার যে কার্যধারার সূচনা করে যান, আজ শ্ৰীশ্ৰী মৃণালিনী মাতাজীর তত্ত্বাবধানে তা শ্ৰীশ্ৰী পরমহংস যোগানন্দজী শ্ৰীশ্ৰী মৃণালিনী মাতাজীকে স্বয়ং মনোনীত করে প্রস্তুত করেন। যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইণ্ডিয়া/সেল্ফরিয়ালাইজেশন ফেলোশিপের সঙঘমাতা ও অধ্যক্ষারূপে শ্ৰীশ্ৰী মৃণালিনী মাতাজী পরমহংস যোগানন্দজীর শিক্ষাকে বিশ্বময় প্রসারিত করতে তাঁর আদর্শ ও সদিচ্ছাকে নিষ্ঠার সঙ্গে বহণ করে চলেছেন।
মুখবন্ধঃ
ডব্লু. ওয়াই. ইভান্স-ওয়েনৎস, এম.এ, ডি,লিট., ডি.এস.সি., জিসাস কলেজ, অক্সফোর্ড
টিবেটান য়োগা এণ্ড সিক্রেট ডাকট্ৰিন্স, টিবেটস গ্রেট য়োগী মিলারোপা, দি টিবেটান বুক অফ দি ডেড় প্রভৃতি প্রাচ্যদেশীয় যোগ ও প্রাচ্য জ্ঞান সম্বলিত উচ্চকোটি গ্রন্থের লেখক ও অনুবাদক।
যোগানন্দজী লিখিত ‘অটোবায়োগ্রাফি’র বিশেষত্ব হলো এইখানে যে, ভারতীয় সাধুমহাত্মাদের প্রসঙ্গে মুষ্টিমেয় যে ক’খানি বই ইংরেজী ভাষায় লিখিত হয়েছে, এ হলো তাদের অন্যতম। বইটি কোন সাংবাদিক বা বিদেশীর রচনা নয়; এ রচনা তাঁর যিনি ঐ মহাত্মাদেরই একজন ও তাঁদেরই ন্যায় কৃতবিদ্য। সংক্ষেপে বলতে হলে বলা যায়—বইটি এক যোগী লিখিত যোগীদের বৃত্তান্ত। আধুনিক হিন্দু ঋষিদের অসাধারণ জীবন ও শক্তির এ এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ; সে’কারণে বইটির গুরুত্ব যেমন কালোপযোগী, তেমনি কালাতীত। গ্রন্থটির খ্যাতনামা লেখক—যাঁর সঙ্গে ভারতে ও পাঠকেরই সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। তাঁর অনন্য জীবনচরিতের মধ্যে দিয়ে আমরা হিন্দু মানস ও হৃদয়ের গভীরতা, এবং ভারতীয় অধ্যাত্ম সম্পদের প্রকৃষ্ট পরিচয় পাই। পাশ্চাত্যে এরূপ প্রকাশনা আগে আর হয়নি।
গ্ৰন্থখানিতে যে সকল সাধুমহাত্মার জীবন-কাহিনীর বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্ৰীযুক্তেশ্বর গিরিজীর সঙ্গে পরিচিত হবার অসীম সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমার ‘Tibetan Yoga and Secret Doctrines’* বইটির প্রচ্ছদে পূজনীয় সেই সন্ন্যাসীর একটি ছবি রয়েছে। শ্ৰীযুক্তেশ্বরজীর সঙ্গে আমার দেখা হয় বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী উড়িষ্যার পুরী শহরে। তিনি তখন সমুদ্রতটের কাছে নিরিবিলি এক আশ্রমের অধ্যক্ষ হিসেবে কয়েক জন নবীন শিষ্যদের অধ্যাত্ম প্রশিক্ষণেই মূলতঃ ব্যাপৃত থাকতেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা সমগ্র আমেরিকায়, এমনকি ইংল্যণ্ডবাসীদের কুশল সংবাদ শুনতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে, ১৯২০ সালে প্রতিনিধি করে আমেরিকায় পাঠানো তাঁর প্রধান শিষ্য—যাঁকে তিনি আন্তরিক ভালবাসতেন—সেই পরমহংস যোগানন্দের সুদূর ক্যালিফোৰ্ণিয়ার কাজকর্ম সম্বন্ধে আমার থেকে অনেক খোঁজখবরও নেন।
শ্ৰীযুক্তেশ্বরের প্রকৃতি ও কথাবার্তা ছিল শান্ত ধরণের, সান্নিধ্য মনোরম, এবং তাঁর শিষ্যেরা স্বতঃই তাঁকে যে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন, তার একান্তই উপযুক্ত। যারা তাঁকে চিনতেন, তাঁরা শ্ৰীযুক্তেশ্বরের নিজের সম্প্রদায়ের হোন বা নাই হোন—সবাই তাঁকে উচ্চ সম্মান করতেন। আমার সুস্পষ্ট মনে পড়ে তাঁর দীর্ঘ, ঋজু, ঋষিসুলভ চেহারার কথা। গৈরিক বসন পরিহিত সংসারত্যাগী এই সন্ন্যাসী, আশ্রমদ্বারে আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ কুঞ্চিত কেশ ও দাড়ি সমন্বিত মুখশ্ৰী। দেহটি তাঁর দৃঢ় পেশীযুক্ত, কৃশকায় অথচ সুগঠিত। পদক্ষেপ বলদৃপ্ত। ধরাধামে মনোনিত তাঁর আবাস ছিল পবিত্র পুরীধাম, যেখানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত ধর্মপ্ৰাণ হিন্দু প্রতিদিন বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরে তীর্থভ্ৰমণ করতে আসেন। এই পুরীধামেই শ্ৰীযুক্তেশ্বরজী ১৯৩৬ সালে চোখ বুজে ক্ষনস্থায়ী দৃশ্যাবলীর থেকে চেতনা গুটিয়ে পরলোকে পাড়ি দেন—এই অববোধ নিয়ে যে ইহজীবনের কাজ তাঁর সুসম্পন্ন হয়েছে।
শ্ৰীযুক্তেশ্বরের সমুচ্চ ও পূতচরিত্রের প্রশংসাকীৰ্ত্তন লিপিবদ্ধ করতে পেরে আমি সত্যিই প্রীত। জনসমাজের বহুদূরে সুখে নিবাস করে, অকপটে ও শান্তিতে তিনি এক আদর্শ জীবন অনুসরণ করে গেছেন, যা তাঁর শিষ্য পরমহংস যোগানন্দ আগামী প্রজন্মের জন্যে এখানে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।