62 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
অবতরণিকা
“বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী’র নাম প্রফুল্লচন্দ্র রায়। বাঙালির কাছে তিনি বিজ্ঞানী, ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে তিনি বিপ্লবী। তাঁর নিজের ভাষায় “আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই..
TK. 500TK. 375 You Save TK. 125 (25%)
In Stock (only 2 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
অবতরণিকা
“বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী’র নাম প্রফুল্লচন্দ্র রায়। বাঙালির কাছে তিনি বিজ্ঞানী, ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে তিনি বিপ্লবী। তাঁর নিজের ভাষায় “আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই আমার কাজ, কিন্তু এমন সময় আসে যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহ্বানে সাড়া দিতে হয়।” সাধারণ বেশভূষায় ও সাদাসিধে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এই স্বদেশি দেশসেবক, বিদগ্ধ পণ্ডিত, ছাত্রবৎসল অধ্যাপক, আবিষ্কারক বিজ্ঞানী, অগ্রগণ্য সমবায়ী, দরদি সমাজকর্মীর নাম প্রফুল্লচন্দ্র রায়। বাংলাদেশের খুলনার মানুষ এই মনীষী তৎকালীন ভারতবর্ষের সেরা রসায়নবিজ্ঞানী ও সার্থক শিল্পোদ্যোগী হিসেবে সম্মানিত।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরঘেঁষা রাড়ুলীর কাটিপাড়ায় ২ আগস্ট ১৮৬১ সালে (১২৬৮ সন, ১৮ শ্রাবণ বঙ্গাব্দ)। পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। তাঁর ডাকনাম ফুলু। পিতা হরিশ্চন্দ্র ছিলেন পণ্ডিত ও বহুভাষাবিদ। মাতা ভুবনমোহিনী দেবী সেবাপরায়ণা, উদারমনা, সংস্কারমুক্ত এবং নারীশিক্ষায় উৎসাহী আদর্শ নারী ছিলেন। জ্ঞানসাধনা ও সঙ্গীতচর্চার কেন্দ্র হিসেবে এ পরিবারের যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। পিতা বাড়িতে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, ভূগোল এবং বিজ্ঞানের অসংখ্য উন্নত পুস্তকের বিশাল সংগ্রহ ছিল। 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা', 'বিবিধার্থ সংগ্রহ হিন্দু পত্রিকা', 'অমৃত প্রবাহিনী' এবং 'সোমপ্রকাশ পত্রিকা’ প্রভৃতি নিয়মিত রাখা হত। আত্মকথায় প্রফুল্লচন্দ্র জানিয়েছেন, “প্রতিদিন সন্ধ্যায় বহির্বাটিতে সঙ্গীতচর্চা হত। ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীর সুযোগ্য শিষ্য হরিশ্চন্দ্র রায় সঙ্গীতসাধনা করতেন। যারা বাংলার সঙ্গীতসাধনায় অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর ও ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী তাঁদের মধ্যে অন্যতম।"
ছোটবেলাতেই প্রফুল্লচন্দ্রের মেধার বিকাশ ঘটে। বইপড়ার নেশায় খাবারে অনিয়ম হত এবং ছোটখাটো অসুখ-বিসুখকে অবজ্ঞা করতেন। অসুস্থতার জন্যে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ রাখতে হত। সেই সময় তিনি শেক্সপিয়র, কার্লাইল, এমার্সন, ডিকেন্স প্রমুখের রচনা ও বাংলা সাহিত্য গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে অধ্যয়নের সুযোগ পান।
১৮৭৯ সালে প্রফুল্লচন্দ্র প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮১ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এফএ পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বি.এ. (বি) ক্লাসে ভর্তি হন। এ সময় গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ বছর বাংলার প্রফুল্লচন্দ্র ও বোম্বাই-এর বাহাদুরজি নামে দুই ছাত্র গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ৩৩ দিন জাহাজে যাত্রার পর তিনি ইংল্যান্ডে পৌঁছে ১৮৮২ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র ও প্রাণিবিদ্যা নিয়ে বি.এসসি.-তে ভর্তি হন। ১৮৮৫ সালে বি.এসসি. ডিগ্রি লাভের কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সিপাহি বিদ্রোহের আগে ও পরে’ বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বৃত্তি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও তিনি ভারতের জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। প্রবন্ধটি ব্রিটিশ শিক্ষিত সমাজে প্রশংসিত হলেও প্রবন্ধের কারণে তিনি ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন। এটি এডিনবরায় পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়। পুস্তিকার ভূমিকায় প্রফুল্লচন্দ্র ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে আবেগময় আবেদন রাখেন।