9 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"দুয়ার হতে দূরে" বই নিয়ে কিছু কথা:
বইটির একেবারে শেষাংশে লেখক জানাচ্ছেন, ‘কৈশোরের সমাপ্তি এখানেই। আবার যদি কখনো...। ’ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আবার তিনি লিখবেন। এখানেই তাঁর আত্মজী..
TK. 200TK. 150 You Save TK. 50 (25%)
Product Specification & Summary
"দুয়ার হতে দূরে" বই নিয়ে কিছু কথা:
বইটির একেবারে শেষাংশে লেখক জানাচ্ছেন, ‘কৈশোরের সমাপ্তি এখানেই। আবার যদি কখনো...। ’ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আবার তিনি লিখবেন। এখানেই তাঁর আত্মজীবনী শেষ নয়। এই চার খণ্ড তো তাঁর আত্মজীবনীর ভূমিকা মাত্র। জীবন তো এখনো শুরুই হয়নি তাঁর। কত কত অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনে! কত স্মৃতি! কত মানুষের সঙ্গে তিনি চলেছেন, কত বর্ণাঢ্য তাঁর কর্মজীবন, সাহিত্য জীবন! আমরা পাঠকরা জানতে চাই তাঁর পরবর্তী জীবনের কথাও। আশা করি, তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না। আমরা অপেক্ষায় আছি তাঁর আত্মজীবনীর পরবর্তী খণ্ডের জন্য।
আত্মজীবনীতে লেখক নিজেই নিজের কথা লেখেন। নিজেই কাহিনিকার, নিজেই চরিত্র এবং নিজেই ওই চরিত্রের সমালোচক। আত্মজীবনী হতে পারে বহু বৈচিত্র্যপূর্ণ। সেখানে থাকে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা; শৈশব, তারুণ্য, যৌবন ও বার্ধক্যের কথা। যে ভৌগোলিক পরিবেশে লেখক বেড়ে ওঠেন, যাঁদের সান্নিধ্যে তিনি সময়কে অতিবাহিত করেন, যে কুসুমাস্তীর্ণ বা কণ্টকাকীর্ণ পথ তিনি অতিক্রম করে আসেন, থাকে সেসব কথাও। থাকে জীবনের পাপ-পুণ্য বোধের কথা, প্রেম-ভালোবাসা, আশা-হতাশা, স্বপ্ন কিংবা স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত। আত্মজীবনী কখনো কখনো ইতিহাসেরও অংশ হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে লেখকের সমকালীন যুগমানসের চিত্রও পাওয়া যায়। উপন্যাসের মতো আত্মজীবনীও কখনো কখনো শিল্পের আঙ্গিকসমূহকে আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়। আত্মজীবনী এখন একটি বিশেষ সাহিত্য বা শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচিত।
‘দুয়ার হতে দূরে’ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের আত্মজীবনী। এটি তাঁর আত্মজীবনীর চতুর্থ খণ্ড। এর আগের তিনটি খণ্ড হচ্ছে যথাক্রমে ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’, ‘এই পুরাতন আখরগুলি’। পূর্ববর্তী তিনটি খণ্ডে তিনি লিখেছেন তাঁর শৈশবের দিনগুলোর কথা। বর্তমান খণ্ডে লিখেছেন তাঁর ফেলে আসা কৈশোরের কথা। এই চার খণ্ড আত্মজীবনীর মধ্যে আমরা জানতে পারছি একজন কথাসাহিত্যিকের বর্ণাঢ্য শৈশব-কৈশোর, তাঁর বেড়ে ওঠা এবং সেই কালের মানুষ, সমাজ ইত্যাদি সম্পর্কে।
অতুলনীয় এই কথাসাহিত্যিকের বর্ণনাভঙ্গির জন্য রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। খুব সামান্য বিষয়কেও রূপ দিতে পারেন গল্পে। এটি তাঁর অনন্য ক্ষমতা। তিনি যখন কথা বলেন, আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি। তিনি যখন লেখেন, আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ি। তাঁর গল্প-উপন্যাসের মতো আত্মজীবনীও সুখপাঠ্য। একবার শুরু করলে শেষ না করে আর রাখা যায় না। মনে হয় না কারো আত্মজীবনী পড়ছি, যেন উত্তম পুরুষে লেখা কোনো গল্প-উপন্যাস পড়ছি। গল্পের কাঠামোতে, উপন্যাসের কৌশলে তিনি নিজের জীবনস্মৃতি বলে গেছেন আলোচ্য ‘দুয়ার হতে দূরে’ বইটিতেও। লেখার জন্য যে খনন করতে হয়, সেই খননটা করেন হাসান আজিজুল হক। খননের কায়দা-কানুন তাঁর জানা। তাঁর শাবলটি বেশ ধারালো, শক্তিশালী। তিনি জানেন শাবলটা ঠিক কোন জায়গায় কোন কায়দায় ফেলতে হবে। এ কারণেই তাঁর আত্মজীবনীতেও আমরা উপন্যাসের ঘ্রাণ পাই, হয়ে ওঠে সুখপাঠ্য।
‘দুয়ার হতে দূরে’ বইটিতে তিনি মেলে ধরেছেন নিজেকে। প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই এই কথাশিল্পী যেভাবে নিজের কৈশোরকালের বর্ণনা দিয়েছেন বইটিতে, পড়তে গিয়ে আমাদের মনে হয়, সেসব দিনের একটি ঘটনাও তিনি ভোলেননি। সব যেন এখনো সজীব। স্মৃতি তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেনি। সবই তাঁর মনে আছে। স্মৃতির ডায়েরিতে টুকে রাখা ঘটনাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তিনি দিচ্ছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
বইয়ের ছোট্ট ভূমিকা অংশে তিনি লিখেছেন, ‘গাঁয়ের নিভৃত ছোট্ট দুয়ার দিয়ে বাইরে এসে চারদিকে শত শত দুয়ারের দেখা পাই। তাদের কোনোটি খোলা, কোনোটি বন্ধ। হাট করে খোলা, আধা-খোলা, ঠেলা দিলেই খোলা যাবে কিংবা চিরকালের জন্য বন্ধ অথবা উই-ধরা, বুনো ঘাস-গজানো, পরিত্যক্ত—সামান্য চেষ্টাতেই ঢোকা যায়—কতো না দুয়ার এই মুক্ত পৃথিবীতে। সব ফেলে আমি দাঁড়িয়েছি অজানা অথচ নির্দিষ্ট একটি দুয়ারে।