439 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"ইছামতী (রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত)"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ইছামতী
ইছামতী একটি ছােট নদী। অন্তত যশাের জেলার মধ্য দিয়ে এর যে অংশ প্রবাহিত, সেটুকু। দক্ষিণে ইছ..
TK. 350TK. 263 You Save TK. 87 (25%)
In Stock (only 4 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"ইছামতী (রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত)"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ইছামতী
ইছামতী একটি ছােট নদী। অন্তত যশাের জেলার মধ্য দিয়ে এর যে অংশ প্রবাহিত, সেটুকু। দক্ষিণে ইছামতী কুমির-কামট-হাঙ্গর-সংকুল বিরাট নােনা গাঙে পরিণত হয়ে কোথায় কোন্ সুন্দরবনে সুদৃরি-গরান গাছের জঙ্গলের আড়ালে বঙ্গোপসাগরে মিশে গিয়েছে, সে খবর যশাের জেলার গ্রাম্য অঞ্চলের কোনাে লােকই রাখে না।
ইছামতীর যে অংশ নদীয়া ও যশাের জেলার মধ্যে অবস্থিত, সে অংশটুকুর রূপ সত্যিই এত চমত্তার, যারা দেখবার সুযােগ পেয়েছেন তাঁরা জানেন। কিন্তু তারাই সবচেয়ে ভালাে করে উপলব্ধি করবেন, যারা অনেকদিন ধরে বাস করচেন এ অঞ্চলে। ভগবানের একটি অপূর্ব শিল্প এর দুই তীর, বনবনানীতে সবুজ, পক্ষী-কাকলিতে মুখর। | মড়িঘাটা কি বাজিতপুরের ঘাট থেকে নৌকো করে চলে যেও চাদুড়িয়ার ঘাট পর্যন্ত দেখতে পাবে দুধারে পলতেমাদার গাছের লাল ফুল, জলজ বন্যেবুড়াের ঝােপ, টোপাপানার দাম, বুনাে তিৎপল্লা লতার হলদে ফুলের শােভা, কোথাও উঁচু পাড়ে প্রাচীন বট-অশ্বথের ছায়াভরা উলুটিবাচড়া-বৈচি ঝােপ, বাঁশঝাড়, গাঙশালিখের গর্ত, সুকুমার লতাবিতান। গাঙের পাড়ে লােকের বসতি কম, শুধুই দূর্বাঘাসের সবুজ চরভূমি, শুধুই চখা বালির ঘাট, বনকুসুমে ভর্তি ঝােপ, বিহঙ্গ কাকলি-মুখর বনান্তস্থলী। গ্রামের ঘাটে কোথাও দু’দশখানা ডিঙি নৌকো বাঁধা রয়েছে। কৃচিৎ উঁচু শিমুল গাছের আঁকাবাঁকা শুকনাে ডালে শকুনি বসে আছে সমাধিস্থ অবস্থায়— ঠিক যেন চীনা চিত্রকরের অঙ্কিত ছবি। কোনাে ঘাটে মেয়েরা নাইচে, কাঁখে কলসি ভরে জল নিয়ে ডাঙায় উঠে, স্নানরতা সঙ্গিনীর সঙ্গে কথাবার্তা কইচে। এক-আধ জায়গায় গাঙের উঁচু পাড়ের কিনারায় মাঠের মধ্যে কোনাে গ্রামের প্রাইমারি ইস্কুল; লম্বা ধরনের চালাঘর, দরমার কিংবা কঞ্চির বেড়ার ঝাপ দিয়ে ঘেরা; আসবাবপত্রের মধ্যে দেখা যাবে ভাঙ্গা নড়বড়ে একখানা চেয়ার দড়ি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা, আর খানকতক বেঞ্চি।
সবুজ চরভূমির তৃণক্ষেত্রে যখন সুমুখ জ্যোৎস্নারাত্রির জ্যোৎস্না পড়বে, গ্রীষ্মদিনে সাদা থােকা থােকা আকন্দফুল ফুটে থাকবে, সেঁদালি ফুলের ঝাড় দুলবে নিকটবর্তী বনঝােপ থেকে নদীর মৃদু বাতাসে, তখন নদীপথ-যাত্রীরা দেখতে পাবে নদীর ধারে পুরােনাে পােড়াে ভিটের ঈষদুচ্চ পােতা, বর্তমানে হয়ত আকন্দঝােপে ঢেকে ফেলেচে তাদের বেশি অংশটা, হয়ত দু-একটা উইয়ের ঢিপি গজিয়েচে কোনাে কোনাে ভিটের পােতায়। এইসব ভিটে দেখে তুমি স্বপ্ন দেখবে অতীত দিনগুলির, স্বপ্ন দেখবে সেইসব মা ও ছেলের, ভাই ও বােনের, যাদের জীবন ছিল একদিন এইসব বাস্তুভিটের সঙ্গে জড়িয়ে। কত সুখদুঃখের অলিখিত ইতিহাস বর্ষাকালে জলধারাঙ্কিত ক্ষীণ রেখার মতাে আঁকা হয় শতাব্দীতে শতাব্দীতে এদের বুকে। সূর্য আলাে দেয়, হেমন্তের আকাশ শিশির বর্ষণ করে, জ্যোৎস্না-পক্ষের চাদ জ্যোৎস্না ঢালে এদের বুকে।
সেইসব বাণী, সেইসব ইতিহাস আমাদের আসল জাতীয় ইতিহাস। মূক-জনগণের ইতিহাস, রাজা-রাজড়াদের বিজয়কাহিনী নয়।
১২৭০ সালের বন্যার জল সরে গিয়েছে সবে।
পথঘাটে তখনাে কাদা, মাঠে মাঠে জল জমে আছে। বিকেলবেলা ফিঙে পাখি বসে আছে। বাবলা গাছের ফুলে-ভর্তি ডালে। | নালু পাল মােল্লাহাটির হাটে যাবে পান-সুপুরি নিয়ে মাথায় করে। মােল্লাহাটি যেতে নীলকুঠির আমলের সাহেবদের বটগাছের ঘন ছায়া পথে পথে। শ্রান্ত নালু পাল মােট নামিয়ে একটা বটতলায় বসে গামছা ঘুরিয়ে বিশ্রাম করতে লাগলাে।