5 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য্য কথা
ভূমিকা
বুদ্ধ ভগবান অপ্রকট হবার পরে অনেক-বুদ্ধের প্রকাশ লোকায়ত এই জনপ্রিয় ধর্মকে শাখায় প্রশাখায়, জীবন থেকে অতিজীবনে নিয়ে গেছে। বৌদ্ধ..
TK. 540
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Product Specification & Summary
বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য্য কথা
ভূমিকা
বুদ্ধ ভগবান অপ্রকট হবার পরে অনেক-বুদ্ধের প্রকাশ লোকায়ত এই জনপ্রিয় ধর্মকে শাখায় প্রশাখায়, জীবন থেকে অতিজীবনে নিয়ে গেছে। বৌদ্ধশাস্ত্রে পঞ্চবিংশতি বুদ্ধের উল্লেখ আছে। আমাদের এই সমুদ্র বিধৌত পূর্বদেশে তথা ব্রহ্মপ্রদেশে যে ঈশ্বরকোটিক ভারতভূখণ্ডে অলংকৃত ব্রাহ্মণবর্ণ ছাড়াও যে জ্ঞান তপস্যা সম্ভব হয়েছিল, তথাকথিত দলিত, ব্রাত্য, অন্ত্যজ যে ভারতভূখণ্ডকে অলংকৃত করেছিল, তারই এই পর্যবেক্ষণ, বাংলা তথা ভারতীয় ধর্মসাধনা ও কৃষ্টির এক অবলুপ্ত ইতিবৃত্ত—বৌদ্ধ সিদ্ধাচাৰ্য কথা ৷৷
পালবংশের রাজত্বকালে বাংলা শিক্ষাসংস্কৃতির এক সুবর্ণময় যুগ সৃষ্টি হয়েছিল মূলতঃ বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির বাতাবরণে। এই সময়ের চুরাশি জন সিদ্ধাচার্যের মধ্যে অন্ততঃ পঞ্চাশ জন সিদ্ধাচার্য বাংলার ভূমিপুত্র ছিলেন। এঁদের রচনার তিলমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল “চর্যাচর্য-বিনিশ্চয়” নামক চর্যাপদের ছোট পুঁথিতে। সেই চর্যাপদের ছোট গবাক্ষ দিয়েই বাঙালি মনীষা বিরাট নীলাকাশের দর্শন পেয়েছিল। চর্যাপদের পদকর্তা হিসেবে তেইশজন সিদ্ধাচার্য আমরা পেয়েছি।
তিব্বতে যে চুরাশি জন মহাসিদ্ধাচার্যের নাম স্বীকার করা হয়েছে, তাঁদের নামের তালিকায় লুইপাদ বা মৎস্যেন্দ্রনাথের উল্লেখ আছে। লুইপাদের সময় সম্পর্কে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন—“লুইয়ের সময় ঠিক করতে হইলে এই কথা বলিলেই যথেষ্ট যে, তাঁহার একখানি গ্রন্থে দীপংকর শ্রীজ্ঞান সাহায্য করিয়াছিলেন। দীপংকর শ্রীজ্ঞান ১০৩৮ সালে বিক্রমশীলা বিহার হইতে আটান্ন বৎসর বয়সে তিব্বত যাত্রা করিয়াছিলেন।”
তাহলে দেখা যায় খ্রীস্টিয় দশম শতাব্দীর শেষের দিকে বা একাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে লুইপাদ সহজতত্ত্ব প্রচার করেছিলেন। দারিকাপাদ লুই পাদকে নিজের গুরু বলে স্বীকার করেছিলেন। সিদ্ধাচার্য লুইপাদের প্রসাদে দারিকাপাদ বুদ্ধত্ব অর্জন করেছিলেন।
এই গ্রন্থে তাই সিদ্ধাচার্যদের তালিকায় মীনাপাদ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ প্রথমে, তারপর লুইপাদের নাম আছে। বিভিন্ন সিদ্ধাচার্যের নাম ছিল একাধিক। যেমন, কান্হপাদ কৃষ্ণাচার্য, কৃষ্ণচারী প্রভৃতি নামান্তরে বিখ্যাত ছিলেন। ভুসুকুপাদাচার্য্য রাউত, শান্তিদেব প্রভৃতি নামেও পরিচিত ছিলেন। গোরক্ষনাথ, মীননাথ, কৃষ্ণাচার্য, জালন্ধর, শবর, শান্তিপাদ প্রভৃতি নাথ সম্প্রদায়ের বলে স্বীকৃত। বৌদ্ধসাহিত্যের সঙ্গে নাথ ধর্ম ও সাহিত্যের আচার আচরণের অনেক মিল আছে। মহাযানের শূন্য’তত্ত্ব” নাথ ধর্মেও ছিল। বৌদ্ধ শাস্ত্রের
দশমীদুআর, চান্দ-সুজ বা রবিশশী, গঙ্গাজউনা মনপবণ, ভব নঈ প্রভৃতি পারিভাষিক পদগুলি নাথ পরিভাষায় দশমীদ্বার, চান্দসুরজ, গঙ্গাযমুনা, মনপবন, ভবনদীরূপে পরিচিত। ভুসুকুর চতুরাভরণের ইঙ্গলা পিঙ্গলা নাথ সাহিত্যে উল্লেখিত। সহজসিদ্ধির সাধনপ্রণালী—চিত্ত স্থির করা, নিঃশ্বাস প্রশ্বাস সংযম, বিন্দু ধারণ প্রভৃতি নাথ ধর্মেরও সাধন পদ্ধতি। বাংলার বাউল সাধনা এই সিদ্ধাচার্যদের সাধনার উত্তরণ।