26 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"নিশাচর" বইটির 'পূর্বাভাস' নামক অংশ থেকে নেয়াঃ
অন্ধকারে ছেয়ে আছে আকাশটা। এক কোণায় এক চিলতে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠতেই সে অন্ধকারটা সাময়িক দূর হলাে বটে, কিন্তু পরক্ষনেই..
TK. 140TK. 110 You Save TK. 30 (22%)
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
Product Specification & Summary
"নিশাচর" বইটির 'পূর্বাভাস' নামক অংশ থেকে নেয়াঃ
অন্ধকারে ছেয়ে আছে আকাশটা। এক কোণায় এক চিলতে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠতেই সে অন্ধকারটা সাময়িক দূর হলাে বটে, কিন্তু পরক্ষনেই আরাে গভীর অন্ধকার ঘনিয়ে এলাে চারপাশে। দূরে কোথাও বজপাতের শব্দ কানে যেতেই লােকটার নীরবতা ভাঙলাে।
লােকটা চুপচাপ বসে আছে গম্ভীর মুখে। ঠোঁটে থাকা সিগারেটের ধােয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘরের ভেতরটা। শ্যামলীর একটু ভেতরের দিকের এক ভবনের চারতলার এই ঘরটি অন্ধকার হলেও, জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রাস্তার নিয়ন বাতির এক চিলতে আলাে তার মুখে এসে পড়ছে। সে আলাে-ছায়ার মাঝে লােকটাকে আরও রহস্যময় লাগছে। - অবশ্য তার জীবনটাও কম রহস্যপূর্ণ নয়। কপালের কুঁচকে থাকা চামড়ার ভাঁজে ফুটে ওঠা কয়েক বিন্দু ঘাম। সে কিছু ভাবছে। মনের ভেতর জেগে থাকা এক অদৃশ্য ঘড়ি যেন তাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, সময় আসছে। আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। তারপরই শেষ হবে তার এ অপেক্ষার। সাইড টেবিলে রাখা মােবাইল ফোনটা বেজে উঠতেই চোখ মেলে তাকালাে সে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করলাে।
“বলাে...”
তারপরে আর কোন কথা না বলে সে চুপচাপ কিছুক্ষণ শুনে গেল অপরপ্রান্তের লােকটির বলা কথাগুলাে।
“ওকে! এবার তাহলে ধামাকা হােক, বড় ধামাকা! খােদা মেহেরবান!” নিচু, ভরাট কণ্ঠে কথাগুলাে বলে কিছুক্ষণ পর ফোনটা রেখে দিলাে সে। কণ্ঠে আবেগ গােপন রাখতে পারাটা তার বহুদিনের অভ্যাসের ফল।
লম্বা, ছিপছিপে গড়নের মাঝবয়সি লােকটার পরনে একটি কালাে শার্ট আর খাকি কালারের পায়জামা। সাধারণ মানুষ থেকে তাকে আলাদা করে চেনাটা কষ্টকর। তবে তার তীক্ষ্ণ চোখে যে অসীম বুদ্ধিমত্তা আর হিংস্রতার ছায়া, সেটাই তাকে আলাদা করে দেয়।
ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেলে টেবিলের উপর রেখে হেটে গেল জানালার কাছে। পর্দা কিছুটা সরিয়ে নিচে তাকালাে। ঢাকার রাস্তায় মানুষের নিত্য চলাচলের ব্যস্ততা দেখছে সে। আজকের সন্ধ্যার এই ইলিশেগুঁড়ি বৃষ্টিকেও যেন তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে ব্যস্ত। সবাই ছুটছে অধরা কোন এক সুখের আশায়। আর কিছুক্ষণ পরেই, শহরের মানুষের সব ব্যস্ততা আর সুখ পরিণত হবে তীব্র শােক আর আতংকে। সে কথা ভাবতেই লােকটার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলাে। খুব সূক্ষভাবে তাকালে বােঝা যায়, সে হাসিতে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ পৈশাচিকতা। লােকটির অধীনে যারা কাজ করছে, তারা আজ ব্যাপারটা দেখে খুব খুশি হতাে। কারণ, তারা সবাই জানে এই নিষ্ঠুর লােকটির মুখে হাসি দেখা কতটা কষ্টসাধ্য আর বিরল ব্যাপার। এমনকি, দেড় বছর আগে যখন এই লােকটার করা এক ভয়াবহ পরিকল্পনায় ঢাকা শহরের এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে ঝরে গিয়েছিলাে ২২টি তাজা প্রাণ, তখনাে তার মুখে এমন খুশির চিহ্ন দেখা যায়নি।
আহ, কী এক রাত ছিলাে সেটা। কোথাও কোন মানুষের আনাগােনা নেই। গােটা শহরটাই যেন স্তব্ধ হয়ে থমকে গিয়েছিলাে। বিষাক্ত সাপের নিঃশ্বাসের মতই শীতল জড়তায় পুরাে দেশবাসি হতভম্বের মত দেখেছিলাে হিংসতার এক নতুন রূপ। টিভি মিডিয়ার কল্যাণে গােটা বিশ্বেই সে ঘটনার আতংক ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির একটি ছিলাে সেটি। লােকটির প্ল্যান মােতাবেকই সব হয়েছিলাে। আর সেটা বাস্তবে রূপ দিয়েছিলাে তারই গড়ে তােলা কিছু পথভ্রষ্ট যুবক। অবশ্য, এমন মানুষদের জন্মই যেন হয় তার মতাে মানুষের কথায় বিপথে চলার জন্য।
লােকটির নাম সিকান্দার। অবশ্য তার মতাে লোেকদের কাছে নাম আর ধর্ম, দেশ আর জাতি বুঝে বদলে যায়। তারকাছেও, মূল ধর্ম একটাই। টাকা। আর আতঙ্ক হচ্ছে সে টাকা অর্জনের মাধ্যম। এ আতঙ্কের বানিজ্য সচল রাখতে, সারা বিশ্বজুড়েই মাঝে মাঝে তারা ঘটায় কোন রক্তাক্ত অভিযান। আজকেও তেমন এক অভিযানের সফলতার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সে। আর কয়েকঘন্টা পরই এ শহরে হবে শােকের মাতম। সেটাই হবে এ অঞ্চলে তার শেষ অভিযান।
নিজের সব পরিকল্পনা গুছিয়ে সিকান্দার এখন প্রস্তুত শেষ আঘাত হানার জন্য। পরিকল্পনার সফলতা নিয়ে তার মনে কোন সন্দেহ নেই। অনেকবার মহড়া দেয়া হয়েছে। অনেক ছক কষা হয়েছে। চাল দেয়া হয়ে গিয়েছে। এবার শুধু অপেক্ষা। ধামাকা হবে এবার!
বিকট শব্দে দূরে কোথাও ট্রান্সমিটার বাস্ট হলাে।
লােডশেডিংয়ের কবলে অন্ধকারে ডুবে গেল শহরটা। অদূর দূঃসময়ের এক দূত হয়েই যেন তার আগমন ঘটলাে।