‘পালামৌ’ বইটির মূল কাহিনীঃ
‘পালামৌ’ বইটি সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সার্থক সাহিত্যের অন্যতম ভ্রমণকাহিনী ।
লেখক পালামৌ যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা থেকে শুরু করে সাধু ভাষায় বর্ণিত হয়েছে "পালামৌ" অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা, সামাজিক রীতিনীতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড়, পর্বত, নদী,বন ও গাছগাছালির গল্প।
পালামৌ অঞ্চলটি ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত।
বইতে লেখক মূলত "কোল " সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনধারা সহজ ও সরল ভাষায় রসাত্বকরূপে বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন শহর তো দূরের কথা গ্রামও নয়। পাহাড় জংগলে পরিপূর্ণ এক অঞ্চল।
লেখক এভাবে, পাহাড়ের বর্ণনা দিয়েছেন।
পালামৌ পরগণায় পাহাড় অসংখ্য পাহাড়,তাহার পর পাহাড়, আবার পাহাড় ;যেন বিচলিত নদীর সংখ্যাতীত তরঙ্গ।"
এই অধ্যায়েই লেখক "কোল" দের শারীরিক গঠন ও রূপের বিবরণ দিয়েছেন।করেছেন সেই বিখ্যাত উক্তিটি "বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, "।
লেখক বাঘ শিকারের বিবরণ দিয়েছেন।
"কোল " নারীদের নৃত্যের বর্ণনা দিয়েছেন। কোল উপজাতিদের বিবাহের বর্ণনা দিয়েছেন।
লেখক কোল যুবক -যুবতীদের পোষাক, তাদের অলঙ্কার,তাদের গৃহস্থালির বর্ণনা দিয়েছেন।
সর্বোপরি এই বইটি পড়ে পালামৌ অঞ্চলের ভ্রমণস্বাদ অনুভব করা যাবে বলে লেখক মনে করেন।
"ভারত ভ্রমণের দিনলিপি" উপক্রমণিকা
শাহ্ মোস্তফা খালেদ লিখিত ভারত ভ্রমণের দিনলিপি একটি অসাধারণ ভ্রমণ কাহিনী। গ্রন্হাকার শাহ্ মোস্তফা খালেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনা করেন। ইতিপূর্বেই তার কিছু লেখা পরেছি, অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও সাবলীল। বিজ্ঞানের ছাত্র, তাও আবার কম্পিউটার বিজ্ঞানের। আজকের জগতে কম্পিউটার বিজ্ঞান সব কিছুকে হার মানিয়ে দিচ্ছে। এখানে সৃষ্টি কুশলতার কোনো অন্ত নেই।
শাহ্ মোস্তফা খালেদ ও তার স্ত্রী দুজনে একসঙ্গে এই ভ্রমণে অংশ নেন। এই ভ্রমণ কাহিনীতে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ রয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তারাই মুখ্য। কিন্তু এর ফাঁকে ফাঁকেই শাহ্ মোস্তফা খালেদের রোমান্টিকতা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখায়। গদ্য আকারে ভ্রমণ কাহিনী লেখা হলেও লেখার সর্বত্রই বেশ একটা ছন্দ এবং কাব্যিক ভাব রয়েছে। প্রকৃতি, মানুষ, ইতিহাস ইত্যাদি নানা বর্ণে, নানা ভাবনায় চিত্রিত হয়েছে এই ভ্রমণ কাহিনীতে। কখনো কখনো মনে হয়েছে, লেখক গল্প বলছেন। ভ্রমণ কাহিনীতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ছিলেন একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল। উভয়ের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া কখনো কখনো কাব্যিক ছোঁয়া পেয়েছে। রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভাবনা। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শাহ্ মোস্তফা খালেদের মমতা ও স্নেহের যে কোনো পরিমাপ নেই, এই ভ্রমণ কাহিনীতে তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
নিজেও আমি ভারত ভ্রমণ করেচি। ১৯৮৩ সালে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারতের শ্রেষ্ঠ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তৃতা করতে হয়েছিল। সেই সুবাদে তিন মাস ভারতের প্রায় সর্বত্রই ভ্রমণ করতে হয়েছে। মিশতে হয়েছে সেখানকার জনজীবনের সঙ্গে। শাহ্ মোস্তফা খালেদ যেসব স্থানে বেড়িয়েছেন, তার প্রায় সব জায়গায় আমিও গেছি। কিন্তু এমন অসাধারণ নিখুঁত কাব্যিক, সরস এবং রোমান্টিক বর্ণনা আমি অন্য কোনো ভ্রমণ বৃত্তান্তে পাই নি। প্রতিটি বর্ণনা আকর্ষণীয় শুধু নয়, মরমীয় এবং জীবন্ত হয়েই পাঠকের কাছে ধরা পড়ে। কখনো কখনো মনে হয়েছে শাহ্ মোস্তফা কালেদ শব্দ নিয়ে খেলছেন। আমি অবাক হলা, কী অপরিসীম দক্ষতায় লেখার মাধুর্যে তিনি নিজের ভ্রমণ কাহিনীকে অসাধারণ ব্যঞ্জনায় ফুলের সৌরভ এনে দিয়েছেন প্রতিটি বৃত্তান্তে।
আমি নিজেও লিখি। কিন্তু শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখা পড়ে আমিও অভিভূত। তরুণ বয়সে যাযাবর (বিনয়মুখোপাধ্যায়* ছিলেন আমার প্রিয় লেখক। এখনো তার ‘দৃষ্টিপাত’ আমাকে টানে। সৈয়দ মুজতবা আলীর নানা সরস বর্ণনা আমাকে পুলকিত করতো। গল্পে সুবোধ ঘোষের মিষ্টি মাধুর্য ও রোমান্টিকতায় আমি মুগ্ধ হতাম। নিজেও একসময় কিছু গল্প-কবিতা লিখেছি, সেসব প্রকাশিতও হয়েছে। কিন্তু গবেষণায় নিয়োজিত হওয়ায় সব ভাবনা সুদূরে মিলিয়ে গেছে। শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখা পড়তে গিয়ে যেন আমার সেই তরুণ বয়সের ভালোলাগা ফিরে এল।
আগ্রা, তাজমহল, আজমির শরিফ, যমুনা, বৃন্দাবন, পুরী, কোণার্ক, ভুবনেশ্বর, মাদ্রাজের সমুদ্রতট, ব্যাঙ্গালোরের বৃন্দাবন গার্ডেনস, হায়দ্রাবাদ, বর্তমান মুম্বাই, দিল্লি, কাশ্মীরসহ নানা স্থানে ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। তাজমহল সম্রাট শাহজাহানের এক অসাধারণ প্রেমের অপরূপ শিল্পকর্ম। মমতাজকে তিনি ভালোবাসতেন। ভালোবাসার এমন নন্দিত কবিতা যে পাথরেও পরিস্ফুট হতে পারে, তা বোধকরি সম্রাট শাহজাহানই প্রথম ও শেষ। জন ডান মেটাফিজিক্যাল কবিতায় ভালোবাসার দৈহিক ও আ্যধাত্মিক ভাবনার মেলবন্ধন করেছেন। কিন্তু শাহজাহানের তাজমহল কবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখনীতে তাজমহলকে কেন্দ্র করে সম্রাট শাহজাহানের চেতনা যেন আবারও ফিরে পেয়েছি।
আমার ভ্রমণকালে ট্রেন-বাস যখন যেটা পেয়েছি, তাতেই পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করেছি। কাশ্মীরের ডাল লেক-এর উপর হাউস বোটে দিন কাটানোর কথাও মনে পড়ছে। কিন্তু শাহ্ মোস্তফা খালেদের বর্ণনায় আমার সেদিনের ভারত দর্শন কী অবাক করা নিপুণ ভাষার কারুকার্যে একেবারে জীবন্ত হয়ে ফিরে এল! মনে হলো, আমি বুঝি শাহ্ মোস্তফা খালেদের সহযাত্রী। প্রতিটি শব্দে ছবি ফুটে উঠেছে, পড়তে চমৎকৃত হতে হয়। লেখাটি অনেকাংশে ডায়েরির আদলে মনে হলেও শাহ্ মোস্তফা খালেদের লেখায় শুধু যে ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়েছি তা নয়, একজন সুদক্ষ সাহিত্যিকের সুন্সিয়ানাও ফুটে উঠেছে তার লেখায়।
রোমান্টিক যুগল দম্পতির চলমান বাস ও ট্রেনে যেতে যেতে একে অপরের প্রীতিময়তা ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি এড়িয়ে পাঠকের চোখও ধরা পড়েছে। কোনো কোনো সময়ে বাক্য গঠনের রঙ্গরস তার বর্ণনায় শিল্প সুষমায় ভরে উঠেছে। ধারাটি ধরে রাখতে পারলে বাংলা সহিত্যে এই সাহিত্যকর্মটি নতুন সংযোজন হতে পারে। শাহ্ মোস্তফা খালেদের অধ্যাপনা শুধু যে ক্লাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, তা বুঝি নয়, লেখা পড়ে মনে হয়েছে, ক্লাসের বাইরেউ তার অধ্যাপনা ছাত্রছাত্রীদের মনে শিক্ষার এক নান্দনিক কুশলতা ও আবীর ছড়াতে সক্ষম হয়েছে।
শাহ্ মোস্তফা খালেদ আমাদের সাহিত্যে এক নতুন চমক এনেছেন তার এই ভ্রমণ বৃত্তান্তে। উত্তরাধিকার সূত্রে ধরে বলতে গেলে তার দাদি ছিলেন কবি। পিতা সাংবাদিক এবং গবেষক। মা অর্থনীতির অ্যধাপক। এ ছাড়াও পারিবারিক উত্তরধিকারে সংস্কৃতি-ভাবনা নানা চিত্রে-বিচিত্রে তার কাছে প্রতিভাত হয়েছে। আগামীতে তার থেকে আরো লেখা প্রত্যাশা করি।
সূচিপত্র
*
উপক্রমণিকা
*
মুখবন্ধ
*
ভারত ভ্রমণের দিনলিপি
*
যাত্রা-০১
*
আজমির এক্সপ্রেস-০৬
*
প্রেম ও সমাধির আগ্রা-১০
*
জয়পুর-২০
*
পাহাড়ের হাতছানি-২৭
*
সিমলাঃ নিঃশব্দ পাহাড়ের পবিত্রতায়-৩৮
*
বিয়াসের উজান পথে-৪৪
*
মানালিঃ শুভ্র তুষারের খোঁজে-৫২
*
মর্ত্যধামের পথে-৬৪
*
ইতিহাসের সাক্ষী দিল্লি-৭৪
*
দিল্লির মুসাফির-৯৩
*
বাংলার পথে-১১৬
*
কলকাতার আখ্যান-১৩৪
*
ঘরে ফেরা-১৫৮
"মুনল্যান্ড : হিমাচল প্রদেশ ও লাদাখসহ জম্মু-কাশ্মীর ভ্রমণ" ফ্ল্যাপে লিখা কথা
একজন সত্যিকার পর্যটক কেবল ভ্রমণের উদ্দেশ্যই ভ্রমণ করে । জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া তেমন একজন। তিনি ভ্রমণপিপাসু। ভ্রমণটা তার কাছে পেশা নয় নেশা। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। এবার তিনি পা রেখেছে সুদূর হিমাচল জন্মু-কাশ্মীর আর লাদাখের দুর্গম অথচ নয়নাভিরাম নৈসর্গিক বিচিত্র পরিবেশে। ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। নতুনের সঙ্গে পরিচয়ের ফলে আনন্দ ও অভিজ্ঞতা লাভ করে। জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া নিজেকে সেই কথা, সেই আনন্দ ও অভিজ্ঞতার কথা এবার মুনল্যান্ড বইটিতে উপস্থাপন করেছেন সহজ-সরল ভঙ্গিতে।
বইটির সঙ্গে বিভিন্ন ছবি যুক্ত করে জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া তাঁর ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার বিষয়টি আরো চমৎকারভাবে নিয়ে এসেছে ভ্রমণপ্রিয় পাঠকদের সামনে।
সূচিপত্র
যাত্রার প্রস্তুতি ও সূচনা
কুলু ও মানালির পথে
পৃথিবীর উচ্চতম গিরিপথে রোমাঞ্চর অভিযাত্রা
চাঁদের দেশে
সোমোরিরি লেকের তীরে তাঁবুর হোটেল
পৃথিবীর সর্বোচ্চ মোটরপথে
অপরূপ প্যাংগং সরোবরে
হেমিস গুম্ফার হেমিস উৎসবে
শ্রীনগর ও কারগিলের পথে
ভূস্বর্গ দর্শন
স্বর্গ থেকে বিদায় -জাম্মুর পথে
ভূমিকা
ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে নুতন করে সৃষ্টি করে। ভ্রমণকালে নতুনের সাথে পরিচিত হয়ে হৃদয়-মন আনন্দে আপ্লুত হয়। একজন সত্যিকারের পর্যটক শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যই ভ্রমণ করেন। পেশা অন্য হলেও আমার নেশা পর্যটন। তাই বহুকাল থেকে চাকরি জীবনের ফাঁকে ফাঁকে এবং চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর স্বদেশের আনাচে-কানাচে ও দেশের বাইরে বহু দেশ ঘুরে বেড়েয়েছি। তবু মনে হয়, এখনো আরো কত বাকি রয়ে গেছে। কম বয়সে সময়ের অভাব আর বৃদ্ধ বয়সে শরীরের অক্ষমতা ভ্রমণে বড় বাধা। তাছাড়া ভ্রমণেচ্ছু মধ্যবিত্তের আর্থিক অক্ষমতাও ভ্রমণকে সীমিত করে।
দীর্ঘদিন ধরে ভারতের হিমাচলের কুলু-মানালি এবং কাশ্মীর তথা লাদাখ ভ্রমণের ইচ্ছে পোষণ করে আসছিলাম। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। অবশেষে জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে ৬৫ বছর বয়সে সাহস করে লাদাখ ভ্রমণের দুরূহ যাত্রায় বের হয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমার এই বয়সে ঝঁকি নিয়ে এভাবে একা বেরিয়ে পড়া, পরিবারের কারো তেমন মনঃপূত হয় নি। কিন্তু ভ্রমণের ব্যাপারে আমি কারো কোনো কথা শুনি না বলে, কেউ প্রাকাশ্যে কোনো উচ্চবাচ্য করে নি।
এর আগে আরো বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছি। বৈচিত্র্যময় বিশাল দেশ ভারত। এর এক একটি রাজ্য বা অঞ্চলের অধিবাসীদের ভাষা, পোশাক-আশাক, খাদ্যভ্যাস, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার সম্পূর্ণ আলাদা। ভৌগলিক অবন্থান ভেদে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক রূপও বিচিত্র। কোথাও রয়েছে নদী-নালা বেষ্টিত বৃষ্টিবহুল বিশাল সমভূমিতে বিস্তীর্ণ শষ্যক্ষেত্র বা ঘন চিরিহরিৎ বৃক্ষের অরণ্যানী, কোথাও বা চরম ভাবাপন্ন বৃষ্টিহীন রুক্ষ মরুভূমি, কোথাও সাগর বন্দিত গিরি-মেখরলার সীমাহীন সমুদ্রতট, কোথাও শুভ্র তুষারচ্ছাদিত সুউচ্চ পর্বতমালা, কোথাও নানা বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ পাহাড়-পর্বতের ঢালে অন্তহীন সবুজ অরণ্য, আবার কোথাও বৃক্ষলতাহীন রুক্ষ ধূসর পাহাড়-পর্বত।
নয়নাভিরাম নৈসর্গিক শোভা এবং বিচিত্র বনজ ও পশুজ সম্পদে ভরা হিমালয়ের কোলে হিমাচল প্রদেশ। ইরাবতী, বিপাশা, চন্দ্রভাগা ও শতদ্রুর উদ্দাম নৃত্যে বয়ে যাওয়, বসন্ত ও গ্রীষ্মে হাজারো ফুল-ফলের সৌরভে অমোদিত কুলু, চাম্বা, কাংড়া ও লাহুল-স্পিতি উপত্যকার পাগলপারা সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন দেশ-দেশান্তরের পর্যটক।
ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মীর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি-পর্যটকদের আনন্দ নিকেতন। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার ও সন্ত্রাসীদের কারণে কাশ্মীরের শ্রীনগরে এলাকায় প্রায় সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে। সেজন্য ইচ্ছে করলেই যে কোনো সময়ে কাশ্মীর তথা শ্রীনগর ও তার আশেপাশের এলাকায় ভ্রমণে যাওয় নিরাপদ নয়।
ভারতের জন্ম-কাশ্মীর রাজ্য অলিখিতভাবে তিন ভাগে বিভক্ত; এক, হিন্দু অধ্যুষিত জম্ম, দুই. মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীর উপত্যকা এবং তিন. বৌদ্ধ অধ্যুষিত বিশাল লাদাখভূমি। ভারতের শেষ ভূখন্ড লাদাখ। এ যেন ভারত নয়, হিমালয় নয়, হিমালয় পারে লাদাখ। ভারত এখানে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত।
লাদাখকে বলা হয় লিটল টিবেট বা ছোট তিব্বত। লাদাখে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। লাদাখের আকাশ ঘন-নীল, সে আকাশে মেঘ নেই বৃষ্টি নেই। বৃক্ষহীন রঙিন পাহাড়গুলো নীল আকাশকে চুম্বন করছে। দুপুরের উজ্জ্বল রোদে লাদাখকে মনে হয় ’চাঁদের দেশ’। তাই লাদাখের অপর নাম ‘মুনল্যান্ড’।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নন্দনকানন হিমাচলের কুলু-মানালি ও লাহুল-স্পিতি, ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মীরের শ্রীনগর উপত্যকা এবং অপরূপ বৈচিত্র ও রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা লাদাখভুমি ভ্রমণের দীর্ঘদিনের লালায়িত স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে জুন-জুলাইতে বাস্তবায়িত হলো। সেই দুঃসাহসিক ভ্রমণের দুর্লভ অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের জন্য তুলে ধরলাম।
"ভারত ভ্রমণ" ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
সমগ্র বসুন্ধরাই তো মানুষের গন্তব্যস্থল। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করলে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি না। ভারতসহ যে দেশেই যেতে চাই না কেন দেখতে পাই পাসপোর্ট, ভিসা আরও কত কি ঝামেলা। দেখতে পাচ্ছি কোথাও যাওয়ার কাঁটাতারের বাঁধন আলগা হয় না, লৌহকপাটও থমকে নেই। আগ্রা, দিল্লি, জয়পুর, আজমির, চেন্নাই, মুম্বাই, গৌহাটি, দার্জিলিং শিলং, শিমলা, শ্রীনগর, জম্মু ছুটছে তো ছুটতেই। বিশাল ভারত ঘুরে দেখা যেন এক জনমেও শেষ হয় না। হবেও না। ভারতে কতগুলো প্রদেশ তা ক’জনেই বা জানেন। ভারতের প্রতিটি প্রদেশ ঘুরে ঘুরে লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন আকর্ষণীয় ভ্রমণ সম্পর্কিত পুস্তিকা এটি। ভারতের কোন শহরে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী কী দেখবেন এরই বর্ণনা রয়েছে এই পুস্তিকায়-যা পড়ে ভ্রমণ পিপাসুরা হয়তো ছুটবেন দূর দেশে বেড়ানোর জন্য।