16 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
“মানসিক চাপ মুক্তির উপায়" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
যদি মানসিক চাপ মাপার যন্ত্র থাকতাে, দেখা যেতাে ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৮০ জন মানসিক চাপের শিকার। আমরা যতােটা মানসিক চাপে..
TK. 160
In Stock (only 2 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
“মানসিক চাপ মুক্তির উপায়" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
যদি মানসিক চাপ মাপার যন্ত্র থাকতাে, দেখা যেতাে ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৮০ জন মানসিক চাপের শিকার। আমরা যতােটা মানসিক চাপে ভুগি, ততােটা সচেতন নই। অনেক কাজের চাপ, অফুরন্ত চাহিদা, পারিবারিক সমস্যা, সময়ের অভাব, ঋণ শােধের তাগিদ, অসুস্থতা- এসবের কারণে আমাদের মানসিক চাপ কেবলি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাওল হার্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ৮ বছর চিকিৎসাসেবার কাজ করে এবং ৬ বছর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এ থাকার সময় আমি হৃদরােগীদের চিকিৎসা করেছি- জীবনধারণ প্রণালি পরিবর্তনের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা যােগ করে। পরিকল্পিত জীবনধারণ প্রণালিতে মূল উপদেশ ছিল- মানসিক চাপ প্রশমন ও যােগ-অভ্যাসের মাধ্যমে ধ্যানে নিমগ্ন হওয়া। এর দ্বারা হাজার হাজার হৃদরােগী, উচ্চ রক্তচাপের রােগী, ডায়াবেটিস রােগী, হতাশাযুক্ত এবং অনুরূপ রােগাক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন। জীবনধারণ প্রণালি পরিবর্তনের উপাদানের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানসিক চাপ প্রশমন ও ধ্যানাভ্যাস। অন্য যেসব উপাদান আছে তা নিয়মিত ব্যায়াম, স্বল্প চর্বিযুক্ত খাদ্য, যােগাভ্যাস এবং হাঁটাহাঁটি।
মানুষ আমাকে প্রশ্ন করেন- আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানের লােক হয়েও ঐশ্বরিক আদর্শের অনুসারী হয়েছি কেন? আমি কেন ব্যতিক্রমঃ ১৯৮৬ সালে কলকাতা থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে আমি যখন দিল্লি যাই, তখন ছিলাম চিকিৎসাবিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সেবক। শিক্ষকরা যা শিখিয়েছেন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের মূল বইগুলাে পড়ে আমি ছিলাম ওষুধ ও শল্যচিকিৎসার অন্ধ অনুসারী। যােগাভ্যাস, ধ্যানাভ্যাস, আয়ুর্বেদ, হারবাল ইত্যাদি যাকিছু এলােপ্যাথি নয়, তা বিশ্বাস করতাম কিন্তু দিল্লিতে হাসপাতালে কাজ করার সময় একজন রােগীর মৃত্যু আমার জীবনপ্রবাহ ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়। আমি পথ পরিবর্তন করলাম। এলােপ্যাথি চিকিৎসাকে ঐশ্বরিক পরিষেবায় রূপ দিলাম। ১৯৮৬ সালের ঘটনাটি এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করছি।
ঐ বিশেষ রােগীটি হাঁটলে বুকে ব্যথার অভিযােগ নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেন। একাধিক টেস্টের পর আমি তাকে হৃদরােগী হিসেবে শনাক্ত এবং প্রয়ােজনীয় ওষুধ দিয়ে তার চিকিৎসা শুরু করি। তার জীবনধারণ প্রণালিতে ছিল অত্যধিক মানসিক চাপ ও ধমপানে আসক্তি। খাদ্যাভ্যাস ছিল অনুপযােগী। দৈনন্দিন জীবন ছিল পরিশ্রমহীন। বহির্বিভাগীয় একেক জন রােগীর জন্য নির্ধারিত ৫ মিনিট সময়ে আমার সুযোেগ ছিল ঐ রােগীকে জীবনধারণ প্রণালি সম্বন্ধে সচেতন করার। যখন তার অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করলাে, বুকের ব্যথা উপশম করার জন্য তাকে বিশেষ ওষুধ আরও বেশি করে দিতে থাকলাম। ব্যথার সাময়িক উপশম হলাে, কিন্তু কয়েকদিন পরে তার হার্ট অ্যাটাক হলাে। তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে যথাসাধ্য চিকিৎসা করলাম, কিন্তু বাঁচানো গেল না।
এ ঘটনা হৃদরােগীদের চিকিৎসার বিষয়ে আমার পথকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। আমি উপলব্ধি করলাম হৃদরােগীদের ক্ষেত্রে জীবনধারণ প্রণালির পরিবর্তন একান্ত প্রয়ােজন। তাদের হৃৎপিণ্ডবান্ধব খাদ্য, মানসিক চাপ প্রশমনের শিক্ষা ও নিয়মিত ব্যায়াম খুবই প্রয়ােজন। তখন থেকে শুরু হলাে আমার দ্বারা হৃদরােগ চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি- SAAOL: Science And Art of Living.
গত ১৪ বছর হৃদরােগীদের চিকিৎসা করে উপলব্ধি করেছি, জীবনধারণ প্রণালি পরিবর্তনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। তবে প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানসিক চাপকে প্রশমিত করা। তাই আমার কাজ ছিল রােগীরা কিভাবে মানসিক চাপকে প্রশমিত করতে সমর্থ হবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত করা। আমি তাই মানসিক চাপ কমানাের প্রশিক্ষণের পদ্ধতিকে খুব বাস্তবমুখি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে করে থাকি। যে ব্যক্তির মানসিক চাপ কম, সে অন্যদের চেয়ে সহজে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। এ কারণে আমার প্রশিক্ষণ প্রােগ্রামে রােগীদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এ উপমহাদেশে পারিবারিক ব্যবস্থা খুব শক্তিশালী। জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য মানসিক চাপ হ্রাস করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আমি ধ্যানাভ্যাসকে আমার মানসিক চাপ প্রশমন প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার অঙ্গীভূত করেছি। কারণ এটি রােগীর আবেগতাড়িত মস্তিষ্ককে আয়ত্তাধীন এবং মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করে। ধ্যানের সঙ্গে যােগাভ্যাসকে সাহায্যকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমি যতই রােগীদের চিকিৎসা কুরেছি এবং তাদের প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করেছি আমার প্রশিক্ষণ দক্ষতা ততই বাড়াতে পেরেছি। সাওল হার্ট প্রােগ্রাম সকলের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য- পেশাদার অপেশাদার, শিক্ষিত অশিক্ষিত, ব্যবসায়ী কিংবা গৃহিণী সবাই আমার রােগী। সাওল প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের পর একেক জন দেখা দিয়েছেন সম্পূর্ণ রূপান্তরিত ব্যক্তি হিসেবে ক্রোধ কমিয়ে ফেলেছেন, কথা বলার ধরন পাল্টে ফেলেছেন। অনেকে অভিভূত হয়ে সন্তানদের আমার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পাঠিয়েছেন, তারা হৃদরােগী না হওয়া সত্ত্বেও। আবার কেউ কেউ একই কথা শুনতে একাধিকবার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে এসেছেন। রােগীরা আমাকে বারবার অনুরােধ করেছেন- আমি যা কিছু প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বলি তা লিখে দিতে। যাতে তারা প্রশিক্ষণের বিষয়গুলাে বারবার অনুশীলন করতে পারেন। তাদের অনুরােধের ফলশ্রুতিই এই বইয়ের আত্মপ্রকাশ।