31 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"মেহেরজান" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
মিহির সেনগুপ্তের লেখা বিষাদবৃক্ষ’ পড়ে মনে হয়েছিল আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ অনিষ্টতা ঘটে সমাজেরই অন্তর্নিহিত কারণেই। অথচ পাঠ্য ..
TK. 320TK. 224 You Save TK. 96 (30%)
Product Specification & Summary
"মেহেরজান" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
মিহির সেনগুপ্তের লেখা বিষাদবৃক্ষ’ পড়ে মনে হয়েছিল আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ অনিষ্টতা ঘটে সমাজেরই অন্তর্নিহিত কারণেই। অথচ পাঠ্য বইয়ে দারুণভাবে সঙ্গবদ্ধ সামাজিক চেতনার কথা বলা হয়েছে। আফ্রিকান হিমবাহ থেকে শুরু করে রােমানিয়ার জিপসিদের কথাই ধরুন, শুধুমাত্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনােভাব না থাকায় সীমাবদ্ধতা ও খুব সাধারণ জীবনমান সত্ত্বেও মানুষগুলাে দারুণ শৃঙ্খল ও শান্তিতে বসবাস করছে। সমাজ সৃষ্ট হিংসা বিদ্বেষের কারণেই আমাদের ব্যক্তিজীবন বিনষ্ট হচ্ছে। অথচ যৎসামান্য চাহিদা ও অল্পতে তুষ্ট থাকা এবং মেনে নেবার প্রবণতাই পারে সমাজকে শান্তিময় করতে। এসব ছােটো ছােটো ভূমিকায় সমাজও সমৃদ্ধ হয়।
ব্যক্তিগত চেতনার সাথে পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ববােধের যে দৃশ্যমান পার্থক্য, সেটা আলাদা করে সমাজে একজন নারীর বাস করা দূরহ হয়ে ওঠে। প্রকৃতিও কখনাে কখনাে এমন কিছু সংগঠিত করে যা সামাজিকভাবে সিদ্ধ নয়। সমাজবদ্ধ মানুষ কালে কালে প্রকৃতির সেই বিরুদ্ধাচরণ মেনেও নিয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা পুরুষের জন্য। একজন নারীর সেই আচরণের জন্য সমাজ কখনােই তাকে গ্রহণ করতে পারে না! সামাজিক ও মানসিকভাবে তাকে। নিগ্রহের শিকার হতে হয়। অবস্থাদৃষ্টিতে অনেক কিছুই অপরাধ হলেও নীতিনৈতিকতার মাপকাঠি সমাজ নির্ধারণ করে না, নৈতিকতা হৃদয়ে নির্ধারিত হয়। এর ব্যত্যয়ই কেবল নৈতিক স্খলন, সেটা পুরুষ মহিলা সবার ক্ষেত্রেই।
উপন্যাসটিতে ‘মেহেরজান' এমন এক নারী, যে সুখ আর দুঃখের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে এমনসব অন্তর্নিহিত সামাজিক ব্যাধি দেখাতে সক্ষম হয় যেটা আসলে আমাদের চারপাশে যত্রতত্র ঘটলেও খােলা চোখে মেনে নিতে পারি না। আমাদের চেতনা ও হৃদয়ের মাঝে সমাজ এমন এক শব্দপর্দা টেনে দিয়েছে। যা ভেদ করে মেহেরজান বের হয়েছিল। দৃশ্যত তা হয়ে ওঠে একটা একটা জীবন্ত সামাজিক গল্প। মেহেরজান উপন্যাস কোনাে প্রশ্নের উত্তরের গল্প নয়। মেহেরজান মূলত অন্তর্গত সমাজের নারীর গল্প। যে আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নভঙ্গ ও প্রাপ্তির নানা রঙেঅবয়বে আমাদের পাশে বাস করা সাধারণ কেউ, মেহেরজান নামটা শুধু তাদেরই প্রতিচ্ছবি।
উপন্যাসটিতে কিশােরী থেকে গৃহবধূ হয়ে ওঠা মেহেরজান চরিত্র শুনিয়েছে পারিবারিক দায়বদ্ধতার পূর্ণ গল্প। তাই শুধু কয়েক শ শব্দে মেহেরজানকে জানা যাবে না। সমাজের মেহেরজানদের গল্প জানতে হলে পুরাে বইটি পাঠ করতে হবে।
দুই বছর আগে যখন মেহেরজানের এই সামাজিক আখ্যান লিপিবদ্ধ করতে শুরু করি, আমাকে ফিরে যেতে হয়েছিল বছর পনেরাে আগে। কিন্তু শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে সামাজিক গল্প আর কতটা জীবন্ত করা যায়! তাও যদি হয় ব্যক্তিকে ভিত্তি করে সামাজিক আখ্যান। পুরুষ হিসাবে একজন নারীকে বাহির থেকে কতটা জানি, তাও ছিল বিশেষ এক চ্যালেঞ্জ। হৃদপটকে স্পর্শ করা এই গল্পকে আমি ফেলে দিতে চাইনি-তাই ধীরে ধীরে চরিত্রের খুব গভীরে ঢুকে উপলব্দি করতে হয়েছে একজন নারীর মনস্তত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক ভাবনা। চরিত্রকে গল্পে জীবন্ত করতে একজন নয় বরং সমাজের বহু আটপৌরে নারীর জীবনের গল্প শুনতে হয়েছে। কিশােরী থেকে তরুণীদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সমাজ ও পরিবার বিষয়ে তাদের মতামতের ওপরে ভিত্তি করেই এগিয়ে গিয়েছে এই গল্প।