‘কাজল চোখের মেয়ে’ বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ
কবিতা কী গল্প নয়? আমার কাছে সকলই গল্প । কিন্তু গল্প বলার ধরণগুলো কেবল আলাদা। আলাদা বলেই আমি ছ’পৃষ্ঠার একটা গল্পে যা বলি, কখনো কখনো তা হয়তো এমন দুই লাইনেই বলে ফেলতে পেরেছি বলে মনে হয়‘কোথায় যাবে তোমার মানুষ রেখে? মানুষ কেন হারিয়ে গেলে, মানুষ পাওয়া শেখে?
কিংবা
“শোনো, কাজল চোখের মেয়ে, আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে কিংবা, ততটুকু দিও, যার পরে আর কিছু চাইবার, বাকী না থাকে! ততটুকু নিও, যার পরে আর, পিছু চাইবার, ফাকি না থাকে! যেতে হলে, এখুনি যাও, পরে গেলে মায়া বেড়ে যাবে, থেকে গেলে, এখুনি থাকো, বেলাশেষে ছায়া বেড়ে যাবে। আমি যা লুকিয়ে রাখি, গভীর, গোপন, তার সবটুকুই তোমার আপন। মেঘের মতো ভার হয়ে রয় বুক, মেঘের মতো থমথমে কী ব্যথা! মেঘ তো তবু বৃষ্টি হয়ে ঝরে, আমার কেবল জমছে আকুলতা। ততটুকু হোক দেনা, যতটুকু হলে, ফিরে আসবার পথটুকু থাকে চেনা। কাজল চোখের মেয়ে বুকের ভেতর পাখির ভেজা পালকের স্পর্শে তিতির বয়ে যাওয়া অজস্র অনুভূতির নদী ছুঁয়ে দেয়ার গল্প, চাইলে তাকে আপনি কবিতা বলতে পারেন, নাও পারেন। কিন্তু স্পর্শ বলবেন, স্পর্শিত হবেন, তা নিশ্চিত।
আমি একদিন নিখোঁজ হবো –বইয়ের ফ্লাপে লেখা কথা
এই বইটি কিসের?
বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে লেখা বিচ্ছিন্ন কিংবা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবনার-অনুভুতির প্রকাশে বাঙ্ময় হয়ে ওঠা এই বইয়ের পঙক্তিগুলো লেখকের কাছে অকবিতা। কিন্তু পাঠকের কাছে কী? অকবিতা, না কবিতা?
“আমাকে হারাতে দিলে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর…”
কিংবা
“শোনো, কাজল চোখের মেয়ে,
আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে, তোমার চোখে চেয়ে।”
কিংবা
“আমি একদিন নিখোঁজ হবো, উধাও হবো রাত প্রহরে, সড়ক বাতির আবছা আলোয়, খুঁজবে না কেউ এই শহরে। ভাববে না কেউ, কাঁপবে না কেউ, কাঁদবে না কেউ একলা একা, এই শহরের দেয়ালগুলোয়, প্রেমহীনতার গল্প লেখা।”
প্রিয় পাঠক, সাদত হোসাইন-এর তুমুল জনপ্রিয় এমন সব পঙক্তি নিয়েই এই বই।
আমি একদিন নিখোঁজ হবো।
আমি একদিন নিখোঁজ হবো –বইয়ের ভূমিকা
এই বইটি কিসের?
বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে লেখা বিচ্ছিন্ন কিংবা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবনার-অনুভূতির প্রকাশে বাঙ্ময় হয়ে ওঠা এই বইয়ের পঙক্তিগুলো অনেক পাঠকের কাছেই কবিতা। কিন্তু আমার কাছে কী?
আমি এগুলোকে বলি অকবিতা । সাদাত হোসাইন-এর অকবিতা।
কারণ, আমার ধারণা, আমি কবিতা বুঝিনা। বুঝি না মানে এই নয় যে কবিতা আমার ভালো লাগে না। কবিতা আমার অসম্ভব ভালো লাগার বিষয়। কবিতা আমার কাছে গভীরতম বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবনা, বিমূর্ত অর্থের ঝংকার কিংবা ‘প্রকৃত’ অর্থ খুঁজতে গিয়ে অথৈ জলে থই না পেয়ে দিশেহারা বোধ করবার কোনো বিষয় নয় । কবিতা আমার কাছে প্রবল দহনে টুপ করে পড়া শীতল প্রশান্তির বৃষ্টি ফোটার মতন। কী প্রগাঢ় মমতায়, স্পর্শে সে বুকের ভেতর কেমন তিরতির করে ছুঁয়ে দেয়! আহা জীবন, আহা কবিতা! আমার ধারণা পাঠক হিসেবেও আমি খুবই সাধারণ। আমি পড়তে ভালোবাসি, তবে সেই পড়াটাও আমার জন্য সহজ হতে হয় । সহজ মানুষের মতন, সহজ জীবনের মতন, জলের মতন।
যাকে হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেয়া যায়, মন বাড়ালেই কাছে পাওয়া যায়, ডুবে যাওয়া যায়। কিন্তু কবিতার নানান ব্যাকরণ, নিয়ম, প্রকরণ একজন অতি সহজ সাধারণ পাঠক হিসেবে আমাকে কবিতার ওই সহজিয়া,স্পর্শময়তার ভাবটাকে কেমন যেন দূরের করে ফেলে। ফলে আমি কবিতা পেড়তে গেলেও কবিতার দুর্বোধ্য হয়ে উঠাটাকে নিতে পারি না। এ এক সহজ পাঠকের সরল স্বীকারোক্তি। আর লেখার ক্ষেত্রে? লেখার ক্ষেত্রে কবিতা লিখতে গেলে আমার নিজেকে বড় অসহায় লাগে। সংশয় লাগে, মনে, হয় কবিতা লেখা কী এতই সহজ? নিশ্চয়ই নয়।
এ বরং এক সাধানার, গভীরতম উপলদ্ধির, নানান নিয়ম-কানুনের ব্যাপার । কিন্তু আমি যা লিখি, তা তো ‘সহজ’! হয়তো অতি সহজই ।
এ কেবল আমর অনুভূতির ছন্দোবদ্ধ প্রকাশ। আর এই ছন্দোবদ্ধ প্রকাশের বই হয়ে ওঠার পেছনে বিষেশ কৃতজ্ঞতা বন্ধু, প্রিয় মানুষ নিশাত জাহানকে।
আচ্ছা, এই সহজ , সাধারণ, ছন্দোবদ্ধ প্রকাশকে কী কবিতা বলা য়ায়?
এ নিয়ে আমি বেশ দ্বিধায়ও ছিলাম, হয়তো এখনো আছি। আর তাই, আমি আমর এমন লেখাগুলোকে কবিতা বলতে সাহস পাই না, আমি বলি অকবিতা!
তাই এটা হয়তো একটি অকবিতার বই-ই। সাদাত হোসাইন-এর অকবিতা।
অকবিতা বলার আগে, এতকিছু বলার কারণ হয়তো পাঠক। আসলে লেখার মূল বিচারক শেষ অবধি ওই পাঠকই। পাঠক যদি বলেন, এ কবিতা, তবে তা কবিতা-ই, আর পাঠক যদি বলেন, এ অকবিতা, তবে অকবিতাই….
অথচ সেই পাঠককে দূরে রেখে আমরা খুঁজে ফিরি কত শত কাছের ভুলকে পাঠক রয়ে যায় দূরেই, বহুদূরে “যার কাছে যাই , ভুল করে যাই, ঠিক পড়ে রয় দূরে, ভাঙা মাস্ত্তলে, ছেঁড়া পাল তুলে, অচেনা সমুদ্দেরে।”