1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
আমাদের ছড়ার ভুবনে ‘রাঙা শালুক’
লুৎফর রহমান রিটন
‘রাঙা শালুক’ হাতে তরুণ এক ছড়াবন্ধুর আগমন সংবাদে আনন্দিত আমি।
বাংলা ছড়াকে প্রথম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন রামে..
TK. 400TK. 300 You Save TK. 100 (25%)
Product Specification & Summary
আমাদের ছড়ার ভুবনে ‘রাঙা শালুক’
লুৎফর রহমান রিটন
‘রাঙা শালুক’ হাতে তরুণ এক ছড়াবন্ধুর আগমন সংবাদে আনন্দিত আমি।
বাংলা ছড়াকে প্রথম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। আজ থেকে একশ ঊনিশ বছর আগে বাংলা ১৩০৬ সালে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমনির ছড়া’ বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে তিনিই প্রথম ‘ছড়াসাহিত্য’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। ছড়াকে ছড়াসাহিত্যের মর্যাদায় সমুন্নত রাখতে ছড়াকারদের চেষ্টার কমতি নেই। কখনো প্রবীণদের প্রদর্শিত পথে হেঁটে, কখনো প্রবীণদের প্রদর্শিত পথকে অস্বীকার করে নবীন ছড়াকাররা ছড়াকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
অতীতে ছড়া রচিত হতো মুখে মুখে। গ্রামের অক্ষরজ্ঞানহীন সহজ সরল মানুষেরা মুখে মুখে বানাতেন ছড়া। গাঁয়ের বধূরা তাঁদের শিশুসন্তানকে মমতা আর আদরে সিক্ত করতে খেলাচ্ছলে ছড়া বানাতেন মুখে মুখে। কেউ সেটা লিখে রাখত না বা লিখে রাখার সুযোগ তখন ছিল না। মা-খালাদের মুখ থেকে শুনে শুনে অন্যেরা সেটা আওরাতে চাইতেন। এরকম আওরাতে গিয়ে শ্রুতিনির্ভর স্মৃতিতে ধরে রাখা ছড়াটির কোনো কোনো শব্দ বা অংশ যেতো পালটে। ভুলে যাওয়া শব্দটির জায়গায় অবলীলায় নতুন শব্দ বসিয়ে নিতেন তাঁরা অপরূপ দক্ষতায়। গ্রামের অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষদের এই দক্ষতাকে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন অশিক্ষিতের পটুত্ব। লোকমুখে সেই ছড়া ছড়িয়ে পড়ত। আর ছড়িয়ে পড়ার ধারাবাহিক পরিক্রমায় মূল ছড়াটির আদল কিছুটা বদলে যেতো। সে কারণেই প্রাচীন একটি ছড়ার বেশ কয়েকটি রূপ আমরা দেখতে পাই। অশিক্ষিতের পটুত্বের নিদর্শন সেই ছড়াগুলোর রচয়িতার নামটি আমরা আর খুঁজে পাই না। ছড়াটি টিকে থাকে লোকমুখে লোকসমাজে কিন্তু ছড়াকার যান হারিয়ে।
ক্রমে ক্রমে লিখতে জানা মানুষেরা গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে থাকা সেই মণিমাণিক্যগুলো অর্থাৎ ছড়াগুলো তুলে এনেছেন লেখ্য রূপে। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমনির ছড়া’ সেই রকম একটি রত্ন ভান্ডার।
এরপর দিন গড়িয়েছে। মানুষ আরো আধুনিক হয়েছে। আধুনিক শিক্ষিত মানুষজন ছড়া রচনায় আগ্রহী হয়েছেন। ছড়ার সেই দীর্ঘ পথপরিক্রমার ধারাবাহিক অভিযাত্রায় শামিল হয়েছেন তরুণরাও। ছড়াকে ভালোবেসে ছড়াকেই আরাধ্য করেছেন অনেক মেধাবী তরুণ। সেই তরুণদের মেধার দীপ্তিতে আলোকিত হয়েছে ছড়ার ভুবন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছড়ার ধারায় প্রতিশ্রুতিশীল তরুণদের তালিকায় একটি নতুন মুখের দেখা পেলাম। নাম তার মঈনুল হাসান। বয়সে তরুণ এই ছড়াকারের দ্বিতীয় ছড়ার বই ‘রাঙা শালুক’-এর পা-ুলিপি পড়ার সুযোগ করে দিলো প্রীতিভাজন কথাশিল্পী মোজাফ্ফর হোসেন। রাঙা শালুকের সাতান্নটি ছড়া পাঠ করে মঈনুল হাসানের ছড়ার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আমি নিজে ছড়া রচনার সময় ছন্দ এবং মিলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। মঈনুল হাসানের ছড়াগুলো পড়ে মনে হলো এই ব্যাপারে তাকে আরো মনোযোগী হবার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। গুরুজনেরা উপদেশ দেন আর বন্ধুরা দেয় পরামর্শ। ছড়াবন্ধু মঈনুলের জন্যে পরামর্শটা দিয়েই ফেললাম।
রাঙা শালুক আমাদের ছড়ার ভুবনকে রাঙিয়ে দিক বর্ণিল আলোর বিভায়।
নিরন্তর শুভ কামনা ছড়াবন্ধু মঈনুল হাসানের জন্যে।
অটোয়া ১৮ জানুয়ারি ২০১৯