36 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"প্রাচীন হরিকেল রাজ্য ও মধ্য চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
অবিভক্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রায় ১৬৬ মাইল দীর্ঘ। এই দীর্ঘ ভূখরে ভূপ্রকৃতি ও জনসংস্কৃতির ম..
TK. 200TK. 166 You Save TK. 34 (17%)
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
Product Specification & Summary
"প্রাচীন হরিকেল রাজ্য ও মধ্য চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
অবিভক্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রায় ১৬৬ মাইল দীর্ঘ। এই দীর্ঘ ভূখরে ভূপ্রকৃতি ও জনসংস্কৃতির মধ্যে কিছুটা আঞ্চলিক বিভিন্নতা পরিদৃষ্ট হয়। উদাহরণ স্বরূপ, মীর সরাই এর অধিবাসীদের কথ্যভাষার সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিবাসীদের কথ্যভাষার মধ্যে পার্থক্য সহজেই বােঝা যায়। সন্দ্বীপের অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ডের লক্ষনীয় পার্থক্য রয়েছে।
কেবলমাত্র ভাষার দিক দিয়ে নয়, সংস্কৃতির দিক দিয়েও উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড হিসাবে মধ্য চট্টগ্রাম (কর্ণফুলী নদী ও শংখ নদের মধ্যবর্তী ভূভাগ) এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই বিশেষত্বের দিকে লক্ষ্য রেখেই বর্তমান গ্রন্থের শিরােনাম এবং বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে।
মধ্য চট্টগ্রামের একটি বিশেষত্ব হলাে এখানেই প্রাচীন যুগে হরিকেল নামে একটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়েছিল। কালক্রমে সমগ্র চট্টগ্রামে এই রাজ্যের প্রসার ঘটেছিল। প্রাচীন বাংলার এই বিস্তৃত ও সমৃদ্ধিশালী রাজ্য সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান এতই সীমিত ছিল যে রাজ্যটি সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু আলােচনা হয় নাই। এমন কি, বহুদিন পর্যন্ত রাজ্যটির অবস্থান সম্বন্ধেও পণ্ডিতবর্গ নিশ্চিত হতে পারেন নি। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক কালে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। হরিকেল রাজ্যের ইতিহাসের বেশ কিছু নূতন উপাদান সংগৃহীত হওয়ার ফলে এই রাজ্যের অবস্থান এবং প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে আমরা মােটামুটি একটা ধারণা করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রাচীন হরিকেল রাজ্যের তিনটি স্থান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এই তিনটি স্থান হলাে রাজধানী বর্ধমানপুর, প্রধান বন্দর দেবগ্রাম এবং প্রধান বিদ্যাচর্চা কেন্দ্র পণ্ডিত বিহার। এই তিনটি স্থান সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা করা হয়েছে।
হরিকেল রাজ্য যে একটি সমৃদ্ধিশালী রাজ্য ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। শিক্ষা, শিল্প, অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, জ্ঞানচর্চা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে হরিকেল রাজ্য প্রাচীন বাংলার একটি অগ্রগামী রাজ্য ছিল। এই বিষয় সমূহের উপরও আলােকপাত করা হয়েছে।
প্রাচীন হরিকেল রাজ্য প্রায় পাঁচশত বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তারপর ইতিহাসের নিয়মে হরিকেল রাজ্যের পতন ঘটে। প্রধানত, বহিঃশত্রুর আক্রমণের ফলে হরিকেল রাজ্য খণ্ডবিখণ্ডিত হয়ে পড়ে। হরিকেল রাজ্যের বিলুপ্ত স্থানে চক্রশালা ও দেগ্রাম এ দুটি রাজ্যের প্রাধান্য স্থাপিত হয়।
চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম মুসলিম শাসকের দ্বারা বিজিত হলেও মধ্য চট্টগ্রামে ষােড়শ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত মুসলিম অধিকার বিস্তৃত হয় নি। খ্রীস্টীয় ষােড়শ শতাব্দীতে মধ্য চট্টগ্রাম গৌড় সুলতান, ত্রিপুরা রাজ এবং আরাকানি রাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরূপ পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে যে জনজীবন বিঘ্নিত হয়ে পড়তাে তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। অবশেষে সুলতান হােসেন শাহ্ কর্তৃক চট্টগ্রাম বিজিত হয়। কিন্তু ত্রিপক্ষীয় সংগ্রাম ষােড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত চলেছিল।
খ্রীস্টীয় ষােড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে ও সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চট্টগ্রামে আরাকানি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে আরাকানি আধিপত্য কোনরূপ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। উত্তর চট্টগ্রামকে জনশূন্য করা হয় এবং মধ্য চট্টগ্রামকে পাের্তুগীজ জলদস্যুদের দিয়ে দেওয়া হয়। কেবলমাত্র দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। এরূপ অবস্থা চট্টগ্রামের পক্ষে মােটেই সুখকর ছিল না।
১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম মােগলদের দ্বারা বিজিত হয়। মােগল বিজয়ের ফলে উত্তর চট্টগ্রামে পুনরায় জনবসতি শুরু হয়। মধ্য চট্টগ্রামে পাের্তুগীজদের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৭৬০ সালে চট্টগ্রাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনভুক্ত হয়। ১৮৬১ সাল পর্যন্ত কোম্পানির শাসন বলবৎ ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার স্বহস্তে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। বিদ্রোহ যাতে পুনরায় না ঘটতে পারে ইংরেজ সরকার একের পর এক কঠোর আইন প্রণয়ন করতে থাকে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বাঙালীদের মননশীলতার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। সাধারণভাবে এই পরিবর্তনকে রেনেসাঁস আন্দোলন বলা হয়ে থাকে। শিক্ষা, সাহিত্যচর্চা, সমাজ সংস্কার, সমাজ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেনেসাঁস আন্দোলনের প্রভাব সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। সমাজের আধুনিকীকরণে রেনেসাঁসের ব্যাপক অবদান রয়েছে।
সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে জন্মলাভ করে স্বাধীনতা সংগ্রাম। রাজনৈতিক সচেতনতা ও স্বাধীনতা সংগ্রাম উভয় ক্ষেত্রে মধ্য চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।