আদিম ধারাবাহিক ইতিহাস পর্ব সযতেœ রেখে বুকের পাশটিতে
প্রস্তর যুগ পার করা অগ্নি উপাসকের গর্ভে
লালিত নেটিগ্র, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, বৈদিকতার কবচ পরে
অনার্য থেকে আর্য হতে সময় গিয়েছে অনেক,
তার পর স্বপ্নের মাঠ চষে বুনো হাঁসের পাশে হেঁটে হেঁটে
রাঢ়, সূহ্ম, পুÐ্র, বঙ্গ, সমতট, হরিকেল মৃত্তিকায় শরীর
রাঙিয়ে বাংলা থেকে বঙ্গ
অতঃপর বাঙালি হতে চালিয়েছি জীবনের রথ কত।
স্বাধীন নরপতি শশাঙ্ক থেকে অদ্যাবধি, অতঃপর,
অন্ধকার এসেছে ভাগীরথী, গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র,
কর্র্ণফুলি তটধরে অজ¯্র রক্ত ¯্রােতে,
কষ্টের বীজাধারে জন্ম হয়েছে হাজার কান্নার,
পরাধীনতার শিকল পড়েছে গলায় বারবার,
থেমে থাকেনি অনার্য থেকে আর্য এ জাতি,
পরগাছারা এঁটে ধরেছে কণ্ঠনালি
অপরাপর চেষ্টায় আত্মস্থ করেছি বৈদিক যুগের মর্মবাণী,
আক্ষরিক গৌড়ি অপভ্রংশে রচে চর্যাপদ নিজস্ব আঙ্গিকে
ঘটিয়েছি বর্ণমালার বিপ্লব,
বন্য ঘোড়ার খুরের ঘূর্ণি বায়ে উড়িয়ে চৈত্রের ধুলাবালি
বর্গির দল অপবিত্র করেছে ডিম্বদানি, হয়েছি সংকরী,
তার পরও অপ্রতিরোধ্য, বড়– চÐীদাস, রামায়ণী কৃত্তিবাস,
শুনেছি কৃষ্ণকলি রাধিকা বয়ান,
কদম কুসুমে ভাঙায়েছে অভিমান,
টুকরো টুকরো মেঘে খেয়ে গেছে পূর্ণিমা জ্যোৎ¯œা
তুর্কি, সুলতানি, মোঙ্গল, ইংরেজ, পরাক্রমশালী স¤্রাট
গিলেছে জমিন, সম্ভ্রম, সম্মান,
কখনো মেঘে ঢাকা সূর্য, একচিলতে রোদ্দুর
আবার অন্ধকার, জেগেছে রক্তহীন ফ্যাকাশে জানোয়ার,
বর্ণবিবাদী অকল্যাণী অভিশপ্তক, অন্তঃক্ষরণে ঝরেছে রক্ত,
পলিল মৃত্তিকা ভিজে লাল,
তার পরও বঙ্গ জাতি সংশপ্তক, মাঙ্গলিক দ্বীপ জ্বলেছে দুর্মর,
বেতসলতার মতো ¤্রয়িমাণ জাগ্রত বঙ্গ জীবাশ্ম,
বিন্দু থেকে বৃত্তায়ন, বঙ্গ থেকে বাংলা, ঘটেছে দুর্বৃত্তায়ন,
নতজানু রাষ্ট্রায়ন, মেধাহীন উচ্ছ¡সিত আকাক্সক্ষার উল্কাপতন,
পূর্ব-পশ্চিম চিন্তার, ভাষার, রঙের দ্বৈততার নব মেরুকরণ,
বিচ্ছিন্ন স্বপ্নগুলি সম চেতনার ঝড়ে
জড় হয় একই বৃন্তে, এক প্রান্তে, রাঢ়, পাÐু, সমতটে,
জাগ্রত বাতিঘরে প্রজ্বলিত হয় শত, হাজার, লক্ষ কোটি বাতি,
ছড়িয়ে দেয় নব প্রজন্মের সূর্যরশ্মি
কত পথ, শত মত, শত লক্ষ মৃত্যু,
শশাঙ্ক, থেকে ইখতিয়ার, ইলিয়াছ শাহ থেকে সিকান্দার
অতঃপর পলাশীর বিশ্বাসঘাতকতা,
সূর্যের অন্ধকার ছায়ায় দুই শত বর্ষের রক্তভেজা পোড়ামাটির কান্না
বেদনার অগ্ন্যুৎপাতে বিদগ্ধ বিবেকের তপ্ত লাভায়
পরাধীনতার শিকল ভেঙে সূর্য ওঠে দুভাগে, রংচটা বিবর্ণ,
উনিশ শত সাতচল্লিশ, কান্নাগুলি ঢেকে যায় ছোপ ছোপ রক্তে
অত্যাসক্ত অস্পষ্ট বিশ্বাস দাঁড় করায় প্রভেদ দেয়াল,
শৃঙ্খলের বিষাক্ত একুশটি বছর,
তীরবিদ্ধ হংসের অসহ্য যন্ত্রণায় দাপাদাপি,
চিন্তার বৈপরীত্য, প্রাপ্যতার গোলমেলে ভুল হিসেবের মারপ্যাঁচে
রাত্রিগুলি দীর্ঘশ্বাসের বাতাসে বিষাক্ত হতে থাকে
চিন্তা-চেতনার অশুভ দাম্ভিকতা ন্যায়ের দÐ দুমড়েমুচড়ে
গড়ে তোলে বালির বাঁধ, পরিশুদ্ধ দাবির জলে ভেঙে যায় ওসব।
গর্জে ওঠে ন্যায়ের আগ্নেয়াস্ত্র, জাগ্রত স্বপ্নগুলি জড় হয় রেসকোর্স মাঠে,
পঠিত হয় শতাব্দীর সেরা কবিতাটি
আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বঙ্গ আমার জননী,
শ্রæত সুমধুর কণ্ঠ বাণী
বুকের জমিন ফুঁড়ে তরতর লতিয়ে ওঠে স্বপ্নের সুবর্ণলতা,
প্রতিবাদী পতাকা রক্তে রেঙে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে
সূচিত হয় সূতিকাগার, ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গজননী,
দুর্মর বাঙালি, দুর্মর বঙ্গভ‚মি,
সুদীর্ঘ ইতিহাস, নিরন্তর সংগ্রাম, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, দুর্দমনীয় পরম্পরা,
এসব আমাদের গল্প, কবিতা, বর্ণমালা,
বৃত্ত থেকে বৃত্তায়ন, জন্ম থেকে প্রজন্ম,
আমি বাঙালি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব বাঙালি \