3 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
‘উত্তরকাল’ বইয়ের কথাঃ
একটি প্রার্থিত শব্দ হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্য সব লেখকের মধ্যেই সমান যন্ত্রণা। সব লেখকের মধ্যেই একজন প্রতিনিয়ত ঘা-খাওয়া হতাশায় ম্লান সাধারণ মানুষ থাকে। লে..
TK. 360TK. 270 You Save TK. 90 (25%)
Product Specification & Summary
‘উত্তরকাল’ বইয়ের কথাঃ
একটি প্রার্থিত শব্দ হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্য সব লেখকের মধ্যেই সমান যন্ত্রণা। সব লেখকের মধ্যেই একজন প্রতিনিয়ত ঘা-খাওয়া হতাশায় ম্লান সাধারণ মানুষ থাকে। লেখক আমজাদ হোসেনের এবারের তৈরি মানুষটির নাম-মংলু। ছেলেবেলা থেকেই স্বজনহারা মংলু একা-নি:সঙ্গ। বাবার চেহারা কেমন ছিল, অস্পষ্ট ভাবেও মনে পড়ে না। শেষ আশ্রয়টুকু ছিল মায়ের কোল। বৃষ্টির নিঝুম রাতে, মায়ের কান্নাভরা কণ্ঠে, বেহুলা-লক্ষিন্দরের গান শুনে শুনে ঘুমিয়ে পড়তো। ভয়াবহ এক বর্ষার অন্ধকারে জল-তোলপাড় করা ঘোলাটে ব্রহ্মপুত্র, বিকট শব্দে পাড় ভাঙার সময় তার মাকেও গ্রাস করে নেয়। সেই থেকে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে তার আড়ি-জেদাজেদি। দিনরাত ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গেই সে লড়াই করে বড় হয়। এখনও গভীর রাতে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে সে কথা বলে, ঝগড়া করে, ঢিল ছোঁড়ে- কখনও কখনও আবার এই ব্রহ্মপুত্রকেই সাক্ষী মানে- কালো চকচকে মংলু ছয় ফুট লম্বা। চওড়া বুক। ছোট ছোট চোখ। ঝাঁকড়া চুল। শরীরে অসূরের শক্তি। ক্ষেত-খামারের দিন মজুর। পাঁচ ছ’জন চাষীর কাজ সে একাই করতে পারে অনায়াসে। নিশাচর প্রাণীর মতো রাতে তার চোখের জ্যোতি বাড়ে। গভীর-গভীর অন্ধকারে ঝোপঝাড় জংলা পথে, সাপের চেয়েও দ্রুত গতিতে হাঁটতে পারে। তার কোনো ভয় নেই, আছে শুধু একটা গনগনে আগুনের মতো জেদ। তা কি এই শোষিত নিষ্পেষিত অভাব-গ্রস্ত সমাজের বিরুদ্ধে? বিস্ফোরণের মতো তার এই জেদ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে। ন’মাস যুদ্ধ করে, মুখ বোঝাই দাঁড়ি আর কাদাটে- কম্বল জড়িয়ে স্টেনগান হাতে নিয়ে যখন সে গ্রামে ফিরে আসে- হাজার হাজার মানুষ তখন মংলুকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠে। কারবালার মতো এই দৃশ্য যে দেখে- সেও কাঁদে। মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে দগ্ধ করে মংলুর অনুশোচনা- যে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের দু’তলা বাড়ি গ্রেনেড ছুঁড়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো- আজ তারই ক্ষেত-খামারে দিন মজুরের কাজ করতে হচ্ছে তাকে। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বসে, রাতের অন্ধকারে একা একাই মংলু নি:শব্দে কাঁদে। আয়না তাকে সান্ত্বনা দেয়। আয়না সেই মেয়ে, যে শুধু মংলুকে ভালোবেসে আলোক-স্তম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকে নীরবে।
চৈত্রের খরতপ্ত মধ্যাহ্নে স্বামীর পিপাসায় এক গ্লাস শীতল জল হতে চায়, তার বেশি কিছু নয়। বিষয়াশ্রয়, বিন্যাসের পরিপাট্য, নির্মাণদক্ষতা, ভাষার স্বচ্ছ ও সাবলীল গতি এবং জীবনের মূল্য বোধের প্রতি শ্রদ্ধ ও বিশ্বাস, সব কিছুকেই ঔপন্যাসিক আমজাদ হোসেন তার কলমে অপরিসীম নিপুনতায় এঁকেছেন। ধ্বংসের মুখ থেকে আত্মনির্মাণের- সংযত ভাষায় তার ঈঙ্গিত আছে। লেখক নিজেই বাংলা সাহিত্যে তার এই উপন্যাসের দীর্ঘায়ু নির্ধারণ করে দিয়েছেন। লেখক পরিচিতিঃ
আমজাদ হোসেন
আমজাদ হোসেন (জন্ম :১৯৫৪) বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। ১৯৫৮ সালে তাঁর য়ৌবনের প্রথম কবিতা ছাপা হয় পশ্চিমবঙ্গের ‘দেশ’ পত্রিকায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত কৃত্তিবাস পত্রিকায় ছাপা হয় ছোটগল্প ‘স্থিরচিত্র’। ছোটগল্প ও উপন্যাসের অবদানের জন্য পরপর দুইবার অগ্রণী ব্যাঙ্ক পুরস্কার (১৯৯৩-৯৪) এবং বাংলা একাডেমী পুরস্কারে (২০০৪) ভূষিত হোন। এছাড়া তিনি নাটক ও চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি ( ইউ এস এস আর উইম্যান অ্যাসোসিয়েশন এবং ইউ এস এস আর জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সুভেনর পুরস্কারসহ) পুরস্কার। আমজাদ হোসেন ১৯৯৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হোন।