12 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
নেপােলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের সুবিশাল কাহিনি নিয়ে মহান গ্রন্থ 'যুদ্ধ ও শান্তি' রচিত হয়েছিল ঘটনার ..
TK. 1000TK. 750 You Save TK. 250 (25%)
Product Specification & Summary
"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
নেপােলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের সুবিশাল কাহিনি নিয়ে মহান গ্রন্থ 'যুদ্ধ ও শান্তি' রচিত হয়েছিল ঘটনার প্রায় ৫০ বছর পর। বাংলাদেশের এতবড় একটা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু লেখা হচ্ছে না— এই বিষয়ে আক্ষেপ ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক পর পর সময়ের। মুক্তিযুদ্ধের কুড়ি বছর পরে সম্ভবত এই খেদ এখন আর তেমন নেই, যদিও এই বিশাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নিয়ে ‘অসাধারণ গ্রন্থ রচিত হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করার সময়ও এখন পর্যন্ত আসেনি, তথাপি ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের ভালাে ভালাে গ্রন্থ এ যাবৎ কমও প্রকাশিত হয়নি। বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দুটি দশক ইতিমধ্যেই পার হয়ে যাওয়ার এই পটভূমিতে এসে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালে যারা কাঁধে রাইফেল নিয়ে পাকিস্তানি-শত্রু এবং তাদের এ দেশীয় অনুচরদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের আবেগ এবং বর্তমান প্রজন্মের এ সম্পর্কিত ধারণা ঠিক এক সমান নয়।
সত্যি করে বলতে কি, বর্তমান সময়ের তরুণ-যুবক যারা ১৯৭১ সালে ছিল নিতান্তই শিশু অথবা অনেকের সেদিন জন্মই হয়নি, তারা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না। অনেকে এখনাে শােনেনি, সেদিন আসলে কি ঘটেছিল, কেন বাঙালিরা পাকিস্তানি-সৈন্য ও এদেশে তাদের সমর্থক রাজাকার-আলবদর বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে সেদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে যা জানে তা প্রকৃত ইতিহাসের বিকৃতরূপ মাত্র। তারা যা জেনেছে অথবা তাদের যা শেখানাে হয়েছে তার সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল প্রেরণার কোনাে সম্পর্ক নেই।
বস্তুত বাঙালিরা এমনি একটি জাতি, যার ইতিহাস এমনি করে বারবার মার খেয়েছে। বিকৃতি আর অসত্যের কাছে। মিথ্যা ইতিহাসকেই তারা সত্য বলে জেনেছে, ভুল তথ্যকেই আঁকড়ে ধরে থেকেছে বুকে। এই বিকৃতির ইতিহাস শুরু হয়েছিল সেই প্রাচীনকাল থেকেই, যেদিন আর্য-অনার্য যুদ্ধে এখানকার আদিবাসী অনার্যরা হেরে গিয়েছিল। আদিবাসীরা বিভিন্ন টোটেম বা গােষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল সেই সময়। রাক্ষস, পাখি, নাগ, দৈত্য, অসুর ইত্যাদি ছিল এখানকার আদিবাসীদের বিভিন্ন গােষ্ঠী, শ্ৰেণী ইত্যাদিরই নাম। বুঝতে অসুবিধা হয় না, আদিবাসী অনার্যরা আর্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতি ও সামনাসামনি মুক্তির লড়াই অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু জয় হয় শেষ পর্যন্ত আর্যদেরই। তাড়াতে তাড়াতে অনার্যদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুদূর শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। সেখানেও লড়াই হয়। রামরাবণের যুদ্ধ তারই স্মৃতিবাহী।
কিন্তু আর্যদের জয় শুধুমাত্র আর্য প্রভুত্বের জয় ছিল না, ছিল অনার্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিরও জয়। ফলে রাক্ষস-খােক্কসরা আর মানুষ থাকলাে না, হয়ে গেল দানব, অসুর, দৈত্য ইত্যাদি। এই অঞ্চলের অর্থাৎ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের তবে ১৯৭১ সালে যখন বাংলার চূড়ান্ত সংগ্রাম তথা সশস্ত্র লড়াই শুরু হয়ে গেল, তখনকার বিস্তৃত ঘটনাবলীর সব তথ্যই লাইন লাইন করে এখানে সন্নিবেশিত করা সম্ভব ছিল না। ১৯৭১ সালের বাঙালির এই সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনি এতাে বিশাল ঘটনা দ্বারা পরিপূর্ণ যে তার জন্যে একশতটি মহাভারত সমান গ্রন্থও যথেষ্ট বলে মনে করি না।
সেদিক বিবেচনা করেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বেশ কয়েকটি খণ্ডে সমাপ্ত করার একটি পরিকল্পনা আমার রয়েছে। বর্তমান গ্রন্থটি এই পরিকল্পনার প্রথম খণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে এবং গ্রন্থটিতে রাজনৈতিক ধারার ঘটনাবলীকেই এ কারণে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।