1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"চেতনায় বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই নাকি একটি উপন্যাসের উপাদান থাকে। তবে সেই উপাদানকে রূপদিয়ে থাকেন হাতে গােনা অল্..
TK. 650TK. 488 You Save TK. 162 (25%)
Product Specification & Summary
"চেতনায় বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই নাকি একটি উপন্যাসের উপাদান থাকে। তবে সেই উপাদানকে রূপদিয়ে থাকেন হাতে গােনা অল্প কয়েকজন। সবাই লিখেন না, অনেকে লিখতে পারেন না। যাঁরা লিখেন তাঁরা সকলেই আবার উপন্যাস লিখেন না। অনেকে কবিতা বা উপন্যাস না লিখে লিখেন আত্মজীবনী। যাতে কখনাে কখনাে লেখক নিজেই উপন্যাসের নায়ক হিসাবে আবির্ভূত হন। সত্য এবং কল্পনার সংমিশ্রণ উপন্যাস এবং আত্মজীবনী উভয় ক্ষেত্রেই করতে পারে। এক ধরনের আত্মকাহিনি যদি উপন্যাসের কাছাকাছি হয়ে থাকে তবে আরেক ধরনের আত্মকথাকে বলা যেতে পারে ইতিহাসের সগােত্র। এ জাতীয় রচনায় ব্যক্তির (লেখকের) আত্মবিকাশের কাহিনি যতটা স্থান পায়, তার চেয়ে বেশি স্থান পায় একটা দেশ এবং কালের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য। আর এ জাতীয় গ্রন্থই হলাে মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার, আমার চেতনা। এই বইতে গাজী মিজানুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছেন। এদেশের বীর মুক্তিযােদ্ধা এবং সূৰ্য্য সড়ন হিসাবে এ জাতীয় গ্রন্থ লেখার বিশেষ অধিকার তার রয়েছে। তা ছাড়া তিনি ছােটবেলা থেকেই কবিতায় বিকশিত একজন মানুষ। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বিভাগের সচিব জনাব কাজী হাবিব উদ্দিন মণি’র (কাজী হাবিবের) সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি বেতার কেন্দ্রের স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে কবিতার লেখক ও পাঠক ছিলেন।
এতসব সুবিধা যেহেতু মুজিবনগর সরকারের প্রশাসনের ভেতরটি দেখার সুযােগ তিনি পেয়েছিলেন, পরবর্তীতে রণাঙ্গনের মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রক্রিয়াকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযােগ পেয়েছিলেন। তিনি যা দেখেছিলেন ও শুনেছিলেন যেসব দলিল প্রাসঙ্গিক তথ্য তার গােচরীভূত হয়েছিল তার সবকিছুই তিনি তার গ্রন্থে স্থান করে দিয়েছেন। বইটি হাতে নিলেই বুঝা যাবে ১৬ ডিসেম্বরের কালসীমায় তিনি সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে অসহযােগ আন্দোলনের ঘটনাও উপস্থিত করেছেন পাঠকের জন্য। বইটির মুখবন্ধ পড়লেই বােঝা যাবে যে, স্মৃতিকথা রচনার বা আত্মজীবনী লেখার মতাে এক প্রবল ঝোক তার মনের গভীরে আন্দোলিত হয়েছিল। লেখক সচেতনভাবে যা কিছু উপলব্ধি করেছেন, যা তিনি সত্য বলে জেনেছেন তার সবকিছুই তিনি উত্তরসূরিদের কাছে পৌছে দেওয়ার জোর তাগিদ অনুভব করেছেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ঘটনা ও ঘটনার চরিত্র বিশে- ষণ করেছেন, কখনাে বা দলিলপত্রের সহায়তা নিয়েছেন। অন্য লেখকদের স্মৃতিকথার মতাে এখানেও বিষয়ের উপর বস্তুনিষ্ঠ বিচার-বিশে- ষণ আছে।
মনে রাখা আবশ্যক যে, সবক্ষেত্রে লেখকের মতামত ও বক্তব্যের সঙ্গে পাঠকের একমত হওয়ার প্রয়ােজন নেই। তবে এই বই থেকে মুক্তিযুদ্ধের যেসব প্রামাণ্য তথ্যের পরিচয় পাবেন তাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে পাঠকের ধারণা অনেকখানি পূর্ণতা পাবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংশি- ষ্ট অনেকগুলাে চরিত্র আমরা ইতােমধ্যেই হারিয়েছি। শুধু যে তাঁদেরকে হারিয়েছি তাই নয়, দীর্ঘ পরিক্রমায় ঘরে বাইরে এবং সরকারে মুক্তিযােদ্ধাদের নীতি ও আদর্শকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পরিমাণ লেখালেখি করা উচিত ছিল আমরা সে পরিমাণ লেখালেখি করিনি। লেখক অবলিলাক্রমেই সেই অভাব পূরণে অভিন্দনযােগ্য দুঃসাহসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এই বই আমাদেরকে অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্যের গৌরবময় দিনগুলির কাছে পৌছে দিবে সহসাই। তবে লেখকের দুঃসাহস এখানে যে, তিনি ১৯৫২ সন এবং ১৯৭১ সনের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন। সৌভাগ্য এজন্য যে, তিনি ৯ মাস যুদ্ধের সূচনাকাল থেকে যুদ্ধ সমাপ্তি অর্থাৎ জাতির বিজয় প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের এবং আগামী প্রজন্মের সৌভাগ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী এবং রণাঙ্গনের সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর নিখুঁত বর্ণনা সংবলিত একটা দলিল এই গ্রন্থটি। ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার মতাে লেখা বস্তুনিষ্ঠ একটা প্রামাণ্য ইতিহাস।