89 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
ভজন সাধন আমাতে নাই
কেবল মহৎ নামের দেই গো দোহাই
যিনি লেখেন লেখা কি তাঁর একার? যিনি পড়েন তিনিও কি কেবল অন্যের লেখাই পড়েন? এই দুই পক্ষের কেউই একা তাদের কাজ সারতে পারেন না। লেখক তার ..
TK. 500TK. 375 You Save TK. 125 (25%)
In Stock (only 3 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
ভজন সাধন আমাতে নাই
কেবল মহৎ নামের দেই গো দোহাই
যিনি লেখেন লেখা কি তাঁর একার? যিনি পড়েন তিনিও কি কেবল অন্যের লেখাই পড়েন? এই দুই পক্ষের কেউই একা তাদের কাজ সারতে পারেন না। লেখক তার জন্মের আগে থেকেই বহাল একটা দুনিয়ায় বাস করেন, লেখেন। পাঠকও তেমন দুনিয়াতে পড়েন, লেখার অর্থ দাঁড় করান। এই দুনিয়া একটু একটু করে গড়ে উঠেছে। এই দুই দুনিয়ার একটা ইতিহাস আছে। দুই পক্ষেরই এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখা দরকার। যারা এই ব্যাপার খেয়াল রাখেন আর যারা রাখেন না তাদের বাস একই সময়ে দুই ভিন্ন দুনিয়ায়। এই দুনিয়া গড়ে উঠতে উঠতে কথা বলে কবিদের কণ্ঠে। এই বইজুড়ে এমনই সব মহৎ কবিদের নামের স্মরণ মাত্র। সঙ্গে অন্যরাও আছেন। তাঁরা কেউ বহু শত বছর আগের। কেউ আমাদের সমকালের। কেউ ছিলেন পারস্যে, দিল্লিতে। কেউ এখনো আমাদের বাংলাদেশে বেঁচে আছেন কোনো বিগত মহিমার স্মৃতি-প্রদীপ হয়ে। তাঁদের একসূত্রে বেঁধেছে ভাষা—সেই ভাষার কবিতা, গল্প। একটা জমজমাট আসর থেকে তুলে আনা এইসব উপহার।
উপহারগুলো ভিন ভাষার, সংস্কৃতির। তবে ভাষা আর সংস্কৃতি অপরের হলেই ভিন্নতা বোঝাবে এমন স্থুলর ভাবনার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। জগতকে দেখার অনেক দৃষ্টি গড়ে উঠেছে এই একই পৃথিবীতে একই কালে। বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রকম লেনদেনের বোঝাপড়া থেকে এদের জন্ম। এর মাঝে একই দুনিয়ায় মানুষের বহু রঙে মানুষের বেড়ে উঠার গল্প আছে। সেই বৈচিত্র্য মানুষের একে অপরের কাছে পর হয়ে উঠার উপাদান তো হওয়ার কথা নয়। এক ফুলে ফুলবাগান হয় না। মওলানা রুমি যেমন বলেন:
প্রতিটি ফুলের রঙ ও গন্ধ ভিন্ন
(হর রংগ ও বুয়ে গুল দিগরস্ত)
এখন ঘটনা হলো এই যে, দুনিয়াজুড়ে এখন যে রাষ্ট্র আর শাসনের কায়দা-কানুন সেগুলো এই বৈচিত্র্যকে ভিন্নতা আর পর করে ভাবানোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই উপমহাদেশে ভিন্নতার বৈশিষ্ট্যকে, অপরকে ঘৃণা আর দ্বেষের খুঁটি বানিয়ে গড়ে উঠেছে জাতিরাষ্ট্রের কাঠামো। অপরকে ঘৃণাই এখানে নিজের পরিচয় দাঁড় করানোর সম্বল। এই ব্যাপারগুলোকে এই রাষ্ট্র আর তাদের হাতে গড়ে উঠা সমাজ যত্ন করে টিকিয়ে রাখে। দরকার মতো একে আরও উশকে দেয়। এই দেশ শুধু গরিবের। গরিবের শ্রমে যে পুঁজি জমা হয় তার মালিক তারা নয়। সেই পুঁজির কোনো সীমান্ত নেই,দেশ নেই। পুঁজির মালিকও আন্তর্জাতিক। সীমানায় আটক শুধু তারাই যাদের শ্রম ছাড়া পুঁজির জন্ম হয় না। কিন্তু শ্রমের হাতে জন্ম নেয়া উৎপাদন পণ্য হয়ে দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় বহাল তবিয়তে। এই বাস্তবের ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসও কে লেখেন কার পক্ষ হয়ে লেখেন তা ভাবনার বিষয়। যার হাতে ক্ষমতা সে তার নিজের প্রয়োজন মতো ইতিহাস লেখায়। ইতিহাস লেখারও ইতিহাস আছে। সে নিরপেক্ষ নয়। এর মাঝেই সরদার জাফরি বলতে পারেন:
তুমি এসো লাহোরের উদ্যান থেকে ফুলবন নিয়ে কাঁধে
আমি আসি বেনারসের ভোরের আলো নিয়ে সাথে
সাথে নিয়ে হিমালয়ের হাওয়ার সজীবতা
তারপর না হয় করি প্রশ্ন— কে শত্রু আমরা কার?
(তুম আও গুলশানে লাহোর সে চমন বাদোশ
হাম আয়ে সুবহে বানারস কি রওশনি লেকার
হিমালেয় কি হাওয়াঁও কি তাযগি লেকার
ফির উসকে বাদ ইয়ে পুছেঙ্গে কওন দুশমন হ্যাঁয়)
ভিন্ন ভিন্নভাবে জগতকে বয়ান করার যে সংস্কৃতি তা মানুষের বড় অর্জন। সেই অর্জন বহুদিন ধরে আমাদের বোঝা বলে শেখানো হয়েছে। একে বাস্তব দুনিয়ায় সব মানুষের সম্পদ বলে গ্রহণ করতে হলে বাস্তব দুনিয়াকে সেই মতো করে পাল্টাতে হবে। তার আগ পর্যন্ত সেই প্রয়োজন আর সম্ভাবনার কথা বলে যায় কবিতা, গল্প। এই বইয়ে সেই সম্ভাবনার কথা কান পাতলে শুনতে পাবেন পাঠক। যা কিছু মানুষের মিলিত অর্জন তাকে ভিন্নতা আর সন্দেহের খুপড়ি ঘরে আটকে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ভুলিয়ে দেয়া যায়নি যে মানুষ তার বৈচিত্র্যের সুতোয় গাঁথা এক বহু রঙ, বহু সুগন্ধের মালা। এই সংকলনের লেখাগুলো তার কথা বলবে। মনে করিয়ে দেবে মির্জা গালিবের মতো করে:
প্রেমবেদনার বিহ্বলতা কখনো কি যায়?
হৃদয় যদিও গেছে,সেই হৃদয়বেদনা রয়ে গেল
(জাতি কাভি হ্যায় কাশমকাশে আন্দোহ ইশক কি
দিল ভি আগার গ্যায়া তো ওহি দিল কা দর্দ থা)
যা আমাদের সব মানুষের সম্পদ তা হয়তো আজ দ্বেষ আর পরের জিনিস বলে তকমা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের আবেগ, ভালোবাসায়, আমাদের যাপিত ইতিহাসে তারা টিকে আছে। হৃদয় গেছে, থেকে গেছে হৃদয়বেদনা। এই বই সেই হৃদয় বেদনার গল্প।