"মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অজানা কথা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংল..
TK. 500TK. 375 You Save TK. 125 (25%)
Product Specification & Summary
"মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অজানা কথা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতষ্ঠা করি। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলেও এ স্বাধীনতার জন্য বাংলার মানুষকে আন্দোলন-সংগ্রামের করতে হয়েছে যুগের পর যুগ। প্রায় দুইশত বছর আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান হয়। কিন্তু তাতে বাংলার মানুষের ভাগ্যের কোনাে পরিবর্তন হয়নি। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাংলার মানুষ এক বিদেশী শাসকের পরিবর্তে আরেক বিদেশী শাসকদের দুঃশাসনের কবলে পড়ে। যার জন্য পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আবার শুরু হয় বাংলা মানুষের আন্দোলন সংগ্রাম। আর এ আন্দোলন সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি ছিল আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বেই আন্দোলন সংগ্রামের চরম পরিণতি ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। আর এই রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের সােনালী ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
-বাংলার মানুষের মরণজয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল মনতাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Warfare)-এর প্রধান অস্ত্র। সশস্ত্র লড়াইয়ের বিভিন্ন রণাঙ্গনে বাঙ্কারে বাঙ্কারে কিংবা যেকোনাে যুদ্ধক্ষেত্রে কী অগ্রগতি ও সফলতা অর্জিত হচ্ছে, তা সকলকে অবগত করে পারস্পরিক যােগসূত্রের দৃঢ়বন্ধনকে অটুট রাখা এবং বিশ্বের তাবৎ মানুষকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই, কী করে লড়ছে সাধারণ মানুষ ওই দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্ধ ভাড়াটিয়া সদসাগুলাের বিরুদ্ধে মুক্তিফৌজ গঠন করে দেশবাসী সাধারণ মানুষের অভাবিতপূর্ণ বিপুল ঐক্যের এই প্রতিরােধ যে শাসন নয় কেবল শােষণের বিরুদ্ধে দমন-পপীড়ন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, সেটাই জানাত মুক্তিসেনা দল নিজেদের জীবনযুদ্ধে। দুনিয়াব্যাপী মুক্তিসংগ্রাম যেখানেই সংঘটিত হয়েছে, তারই পেছনে ছিল বপ্লবী-বিদ্রোহী বেতার, যা কিনা মানুষকে সদা-সর্বদা সজাগ রাখত শত্রুর বরুদ্ধে, সংগঠিত করত জনযুদ্ধে এবং আক্রান্ত জনগােষ্ঠীর মনােবল চাঙ্গা রাখার কাজ করেছে এই বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র।
দেশে দেশে যে মুক্তিসংগ্রাম তার প্রতি বাংলার মানুষের যেমন অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল, তেমনি সেসব অমিততেজ জনগণের প্রতিরােধ আন্দোলন কী করে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছে, তা থেকে বাংলার প্রগতিশীল সমাজ বদলের মহতী শক্তি শিক্ষাগ্রহণ করেছিল। আর তাই তারা ও সচেতন সংস্কৃতিযােদ্ধারা ঐকমত্য হয়ে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ওপর অতর্কিত আক্রমণকে রুখে দিয়ে, প্রতিহত করার মহান ব্রত পালনের দৃড় অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে মুক্তিফৌজ, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার থেকেই তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছিল এবং মানুষকে শত্রুর মােকাবেলা ফ্রন্টে অটল অবিচল থাকতে সহায়তা করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার স্বতঃস্ফুর্ত দেশপ্রেমের জ্বলন্ত প্রমাণ। কিন্তু পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাবংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বেতারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছিল। অপরিহার্য এই প্রচার মাধ্যম একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ বাংলার মানুষকে জাগ্রত করে আতঙ্কিত অথচ দৃঢ়পপ্রতিজ্ঞ মানবশক্তিকে বলবান করা এবং রণাঙ্গনে কিংবা বাঙ্কারে বাঙ্কারে যুদ্ধরত মুক্তিসেনাদের উদ্দীপ্ত করে বিজয় অভিযান ও শত্ৰুহননকে নিরন্তর জাগরিত রাখতে সাহায্য করে। তাই পূর্ববাংলার মানুষের মুক্তিযুদ্ধকালীন মণজয়ী মনােবল সুরক্ষায় এবং মুক্তিকামী মানুষের জাগরীত চরিত্রকে দৃঢ় ও প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত রাখার উদ্দেম্যই ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ রচিত, সম্পাদিত প্রকাশিত হয়েছে। তবু আজও মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। সেদিক বিবেচনা করেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ ইতিহাস নিয়েই রচিত হয়েছে “মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অজানা কথা” নামক গ্রন্থটি। গ্রন্থটি পাঠ করে পাঠক জানতে পারবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলার মানুষের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের ষড়যন্ত্র , চক্রান্ত, প্রতারনার অসংখ্য ঘটনা।