7 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
ভূমিকা
বড়পীর নামে যিনি প্রসিদ্ধ- তাসাউফের পরিভাষায় ‘গাউসুল আজম' হিসেবেও জগদ্বিখ্যাত; তাসাউফ নিয়ে পড়াশােনা করেছেন, সুফিদের ব্যাপারে কিঞ্চিৎ ধারণা রাখেন এমন ব্যক্তি ছাড..
TK. 150TK. 113 You Save TK. 37 (25%)
Product Specification & Summary
ভূমিকা
বড়পীর নামে যিনি প্রসিদ্ধ- তাসাউফের পরিভাষায় ‘গাউসুল আজম' হিসেবেও জগদ্বিখ্যাত; তাসাউফ নিয়ে পড়াশােনা করেছেন, সুফিদের ব্যাপারে কিঞ্চিৎ ধারণা রাখেন এমন ব্যক্তি ছাড়াও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যেও এমন লােক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যার জানা নেই গাউছে পাক সম্পর্কে।
৪৭০ হিজরি মােতাবেক ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যখন পৃথিবীতে আসলেন তখন জ্ঞানের রাজ্যে মুসলমানদের স্বর্ণযুগ তিনি তাঁর যুগের সদ্ব্যবহার করলেন; ক্ষান্ত না হয়ে আধ্যাত্মিকতায় নিমজ্জিত হলেন। বস্তুবাদী জ্ঞান ও রুহানিয়্যতের জ্ঞান- দুইয়ের মিশেলে পরিণত হলেন ‘মাজমাউল বাহরাইন’-এ। তিনি যখন বলেন “জ্ঞান অর্জন করতে করতে আমি কুতুব হয়েছি”- তখন আসলে রুহানিয়্যত, আধ্যাত্মিক জ্ঞানের কথা বলেন; কারণ ‘কুতুব’ পরিভাষা ও পদ দুটোই পুরােপুরি আধ্যাত্মিক অর্থাৎ আমাদের সচরাচর দেখার জগৎ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জগৎ- যে জগতে খােদা ছাড়া কিছুর অস্তিত্ব নেই। এবং গাউছে পাকের প্রসিদ্ধির পেছনে এটাই প্রধান কারণ।
“সুফীবাদের ইতিহাসে আবদুল কাদের জিলানীর ব্যক্তিত্ব ও মতবাদের প্রভাব অপরিসীম” বিধায় প্রাচ্যের সুফিপ্রধান ইসলামে তার উপস্থিতি অতিশয় স্বাভাবিক। প্রাচ্যের সুফিধারায় বিশেষত বাঙলায় কাদেরিয়া তরিকার প্রসার হয়েছে ব্যাপকভাবে প্রবল গতিতে। হজরত বাবা আদম শহীদ, শাহজালাল ও তাঁর সাথীবর্গ, নাসিরউদ্দীন সিপাহসালার, শাহ মাখদুর রুপােশ, নূর মােহাম্মদ নিযামপুরী প্রমুখ বরেণ্য সুফিদের নেতৃত্বে বাংলায় ইসলাম। প্রচারের সাথে সাথেই প্রসারিত হতে থাকে কাদেরিয়া তরিকার। আঙিনা- এভাবেই বাঙালি-মুসলমানের আত্মায় জুড়ে যায় বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী।
বাংলা সাহিত্যে গাউছে পাকের প্রথম উপস্থিতি পরােক্ষভাবেআলাওলের রচনায়। তকালীন রােসাঙ্গ- বর্তমান মায়ানমারে অবস্থিত- এর কাজী, সৈয়দ মসউদ শাহা কবিকে ‘কাদেরী খিলাফত' প্রদান করেন, যার বিবরণ কবি সিকান্দরনামা অনুবাদকাব্যে প্রকাশ করেন। সেখানে সরাসরি নয় কিন্তু; খেলাফতে কাদেরিয়ার প্রধান পুরুষ হিসেবে পরােক্ষভাবে আসেন কেবল। তারপর ন্যূনাধিক দুইশত বৎসর পর গাউছে পাক সরাসরি হাজির হন কবি হেয়াত মামুদের রচনায় একাধিক জায়গায়, ভিন্ন-ভিন্ন রূপে। মাঝে আরও কেউ হয়তাে লিখে থাকবেন, কিন্তু কালের গুহায় মুখ লুকিয়েছে সে-সব।
তাদের ছিটেফোটাও আকাশকুসুম ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জালেমের দুনিয়ায় সাধনায় মগ্ন বা হালে-হাকিকতে বিরাজমান গাউছে পাকের চেয়ে শতগুন বেশি তেজোদ্দীপ্ত, প্রেরণাদায়ক ও কার্যকরী হয়ে উঠেন জুলুমবিরােধী গাউছে পাক। সমাজের দর্পণ। হিসেবে সাহিত্যেও যে ফ্যাসিবাদবিরােধী স্বরের গুঞ্জন উঠেছে তাতে যে কোনাে সাহিত্যিকের নিকট প্রতীক হিসেবে গাউছে পাকের এই জুলুমবিরােধী অবস্থান আকর্ষণীয় ঠেকবে, সন্দেহ নেই। এতে করে, বাংলায় গাউছে পাকের যে ভক্তিপ্রধান, স্তুতিসর্বস্ব চর্চার একচেটিয়া বাজার তাতে ধ্বস নামবে- এই ধ্বস অন্তত বর্তমান সময়ে প্রভূত কল্যাণকর।
বাংলায় গাউছে পাক নিয়ে চর্চার সার-সংক্ষেপকল্পে এই বই। আরও অনেকেই নিশ্চয়ই লিখেছেন, কিন্তু কালের বিবর্তনে দুর্লভ বিধায় সব উদ্ধার সম্ভব হলাে না। উদ্ধৃতিতে লেখকের নিজস্ব বানান হুবহু রাখা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে গাউছে পাকের অবস্থান নিয়ে পাঠকের তৃষ্ণা মেটাতে চেষ্টা হয়েছে সর্বোচ্চ যথেষ্ঠ যে নয় তা নিশ্চিত, কিন্তু বিশ্বাস করি যে, এ বিষয়ে পাঠক একটি মহৎ ধারণা পাবেন এবং সাদরে গ্রহণ করবেন।