1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
সংস্কৃত কবিতার সঙ্গে আজকের দিনে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটেছে। সেই বিচ্ছেদ দুস্তর না হোক, সুস্পষ্ট। আর তার কারণ শুধু এই নয় যে সংস্কৃত ব্যাকরণের চর্চা আমরা করি না । চর্চা করি না— এ কথা সত্য..
TK. 275TK. 206 You Save TK. 69 (25%)
Related Products
Product Specification & Summary
সংস্কৃত কবিতার সঙ্গে আজকের দিনে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটেছে। সেই বিচ্ছেদ দুস্তর না হোক, সুস্পষ্ট। আর তার কারণ শুধু এই নয় যে সংস্কৃত ব্যাকরণের চর্চা আমরা করি না । চর্চা করি না— এ কথা সত্য কিনা তাও সন্দেহ করা যেতে পারে। ইংরেজ আমলে সংস্কৃত শিক্ষার মর্যাদাহ্রাস, আধুনিক যন্ত্রযুগে সংস্কৃত বিদ্যার আর্থিক মূল্যের অবনতি, কর্মক্ষেত্রে ও সামাজিক জীবনে সংস্কৃতের ক্ষীয়মান প্রয়োজন— এই সব নৈরাশ্যকর তথ্য সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে অনেকেই সংস্কৃত ভাষার চর্চা ক'রে থাকেন; যাঁরা নামত এবং প্রকৃতপক্ষে পণ্ডিত, তাঁদের সংখ্যাও খুব কম নয়। এমন নয় যে দেশসুদ্ধ সবাই সংস্কৃত ভুলে গেছে, স্কুলে-কলেজে তা পড়ানো হয় না, কিংবা আধুনিক বাংলার সঙ্গে সংস্কৃতের কোনো যোগ নেই। বরং আধুনিক বাংলা ভাষায় দেশজ শব্দের বদলে তৎসম ও তদ্ভবের প্রচার বেড়েছে (তথাকথিত বীরবলী ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়), এবং রবীন্দ্রনাথ, যিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর বিরাট মূলধনের বৃহত্তম অংশটিও সংস্কৃত থেকে আহৃত। অথচ, যাঁরা রবীন্দ্রনাথ পড়েন, তাঁদের মধ্যে হাজারে একজনও কোনো সংস্কৃত কাব্যের পাতা উল্টান কিনা সন্দেহ। যে-সব শিক্ষাপ্রাপ্ত বা শিক্ষালাভেচ্ছু বাঙালি ‘হ্যামলেট' প'ড়ে থাকেন, বা গ্যেটের ‘ফাউস্ট' বা এমনকি, 'রাজা অয়দিপৌস' অথবা 'ইনফের্নো', তাঁদের মধ্যে ক জন আছেন যাঁদের 'মেঘদূত' বা ‘শকুন্তলা’ পড়ার কৌতূহল জাগে, কিংবা যাঁরা ভাবেন যে সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে কিছু পরিচয় না-থাকলে তাঁদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হলো না? মানতেই হয়, তাঁদের সংখ্যা অকিঞ্চিৎকর ।
এই অবস্থার জন্ম আমাদের অত্যধিক পশ্চিমপ্রীতিকে দোষ দেয়া সহজ, কিন্তু পশ্চিমের প্রতি এই আসক্তি কেন ঘটলো তাও ভেবে দেখা দরকার । আমি এ-উত্তর দেবো না যে সৃষ্টিশীল জীবিত ভাষায় রচিত পশ্চিমী সাহিত্যের আকর্ষণ এত প্রবল যে তার প্রতিযোগে সংস্কৃত দাঁড়াতে পারে না। পশ্চিমের আকর্ষণ নিশ্চয়ই দূর্বার, কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যের কাছে আমাদের যা পাবার আছে তাও মূল্যবান, এবং অন্য কোথাও তা পাওয়া যাবে না । একথা পৃথিবী ভরেই সত্য, কিন্তু বিশেষভাবে প্রযোজ্য ভারতীয়ের পক্ষে; যিনি কোনো ভারতীয় ভাষা বা সাহিত্যের চর্চা করেন তাঁর পক্ষে সংস্কৃতের অভাবের কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। এই কথাটা তর্কস্থলে মেনে নেবার তেমন বাধা হয় না, কিন্তু কাজে খাটাতে গেলেই বিপদ বাধে। আসল কথা, আমরা সংস্কৃতের সম্মুখীন হ'লেই ঈষৎ অস্বস্তি বোধ করি, তার সাহিত্য বিষয়ে উৎসাহ জেগে উঠলেও উপযোগী খাদ্য পাই না; যা পাই, তা শুধু তথ্য (তাও তর্কমুখর), নয়তো উচ্ছ্বাস, নয়তো হিন্দু-নামাঙ্কিত এক তুষারীভূত মনোভাব, যা কালের গতিকে অস্বীকার ক'রে নিজের মর্যাদায় স্থবির হ'য়ে আছে। সংস্কৃত সাহিত্যের, সাহিত্য হিসেবে, চর্চার পথ তৈরি হয়নি; চলতে গেলেই হুঁচট খেতে হয় ইতিহাসে, ঘুরতে হয় দর্শনের গোলকধাঁধায়, নয়তো ব্যাকরণের গর্তে পড়ে হাঁপাতে হয়। আসল কথা, আমাদের সমকালীন জীবনধারার সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্যের কোনো সত্যিকার সম্বন্ধ এখনো স্থাপিত হয়নি।