22 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
জর্জ এলিয়ট ছদ্মনামে লেখা ইংলিশ লেখিকা মেরি অ্যান ইভান্সের মিডলমার্চ উপন্যাসটি প্রথমে আট ভলিউমে প্রকাশ হয় ১৮৭১-৭২ সালে। লেখিকা ১৮২৯ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত একটি শহর মিডলমার্চের সুখ দুঃখ,..
TK. 180TK. 131 You Save TK. 49 (27%)
In Stock (only 2 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Related Products
Product Specification & Summary
জর্জ এলিয়ট ছদ্মনামে লেখা ইংলিশ লেখিকা মেরি অ্যান ইভান্সের মিডলমার্চ উপন্যাসটি প্রথমে আট ভলিউমে প্রকাশ হয় ১৮৭১-৭২ সালে। লেখিকা ১৮২৯ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত একটি শহর মিডলমার্চের সুখ দুঃখ, হাসি-কান্না, রাজনৈতিক পালাবদল আর মানুষের জীবনকে তুলে ধরেছেন জীবনের খুব কাছ থেকে। নারীর মর্যাদা, বিয়ে, আদর্শের সংঘাত, আত্মসচেতনতা, ধর্ম, হঠকারীতা, আর শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে গল্প বলে গিয়েছেন তিনি । একটি ভিক্টোরিয়ান যুগের উপন্যাসের সমস্ত উপাদানই এতে আছে। উপন্যাসটি তৎকালীন নারী লেখিকাদের সম্পর্কে সকল ধারণা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। এজন্যই উপন্যাসটির ব্যাপারে উচ্ছসিত প্রশংসা পাওয়া যায় ভার্জিনিয়া উলফের কাছ থেকে “পরিণত মনের পাঠকের জন্য লেখা অল্প কিছু ইংলিশ উপন্যাসের ভিতর একটি।”
১৯ বছরের এতিম, অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে ডরোথি ব্রুক, এক রোখামী করে বিয়ে করে বসে বাবার বয়সী পন্ডিত এডওয়ার্ড ক্যাসাবনকে। এর পিছনে ডরোথির পুরো আকর্ষণটাই ছিল ক্যাসাবনের কথিত মহান গবেষণাকর্মের প্রতি। কিন্তু সে যে ভুল করেছে তা বুঝতে পারে, যখন ক্যাসাবন তৎকালীন সমাজসুলভ পুরুষালী কর্তৃত্ব দেখিয়ে ডরোথিকে তার কাজে না নিয়ে সেক্রেটারী করে রাখেন। ক্যাসাবন এমনকি ডরোথির আদর্শবাদী সংকল্প, সৃষ্টিশীলতা ইত্যাদির কারণে তাকে হিংসা করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ডরোথির আদর্শবাদী কাজিন উইল লেডিস-ল-র সাথে ডরোথির বন্ধুত্বে তিনি ডরোথিকে সন্দেহ করেন। তিনি মৃত্যুর আগে ডরোথির শপথ চান, যাতে ক্যাসাবনের মৃত্যুর পরেও ডরোথি উইল লেডীস-লর সাথে যোগাযোগ না রাখে। স্বামীভক্ত ডরোথি মনে মনে শপথ করবে বলেই ঠিক করে, কিন্তু শপথের আগেই ক্যাসাবন মারা যান। পরবর্তীতে আশ্চর্য এক চতুরতা দেখা যায় ক্যাসাবনের, তিনি উইল করে যান ডরোথি তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে চাইলে লেডিস-লকে বিয়ে করতে পারবে না। প্রথমে দুর্নামের ভয়ে দূরে থাকলেও সত্যি সত্যিই ডরোথি আর লেডিস-ল প্রেমে পড়ে এবং বিয়ে করে। সম্পত্তি হারানোর দুঃখ সয়েও ডরোথি ঠিকই খুশি থাকে এই ভেবে যে “পৃথিবীর যা কিছু ভালো হয়, তার কিছুটা নির্ভর করে ছোট ছোট ত্যাগের উপর ভর দিয়েই।‘’
এই সময় টারটিয়াস লিডগেটের গল্প শুরু। এক তরুণ ডাক্তার, নিজের ওষুধপত্র আর গবেষণা নিয়ে বিরাট উৎসাহ তার। মিডলমার্চে আসার অল্পদিনের মধ্যেই তিনি রোজামন্ড ভিন্সির সাথে জড়িয়ে যান এবং বিয়ে করেন তাকে। স্ত্রী হিসেবে সমস্ত গুণই তিনি দেখতে পান রোজামন্ডের মধ্যে। এদিকে রোজামন্ড ভেবেছিল মেধাবী, উচ্চবংশীয় লিডগেট ধনীই হবেন, একে বিয়ে করলে তার সামাজিক মর্যাদা বাড়বে, তাই বিয়েতে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল লিডগেট একজন জ্ঞান অন্বেষী, কিন্তু গরীব পরিবারের সন্তান। এদিকে রোজামন্ডেরর যে জ্ঞানের প্রতি আগ্রহের কথা ভেবেছিলেন লিডগেট, সেটাও ভুল প্রমাণীত হয়। তার জ্ঞানের গভীরতার প্রতি রোজামন্ডের কোন আগ্রহই নেই। আসলে ব্যাপারটা শুধু রোজামন্ডের দোষ ছিলনা। লিডগেট এতটাই গবেষণা-মনষ্ক ছিলেন যে রোজামুন্ডের মনে হত তিনি আসলে তার গবেষণা আর ডাক্তারীকেই বিয়ে করেছেন, রোজামন্ডোকে না। একদিকে গবেষণার বেহিসেবি খরচ, অন্যদিকে রোজামন্ডের ধণাঢ্য চালচলনের খরচ জোগাতে গিয়ে তিনি আর্থিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। শেষপর্যন্ত তিনি এক ব্যাঙ্কার নিকোলাস বালস্ট্রোডের কাছে ঋণ চান, কিন্তু বালস্ট্রোড তাকে ঋণ দিতে অস্বীকার করেন।
এদিকে বালস্ট্রোডের অপ্রীতিকর অতীত জেনে ফেলায় তাকে ব্ল্যাকমেইল করছিল জন র্যাফলস। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে বালস্ট্রোড সুযোগ বুঝে তার দেখাশোনার ভার নেন। র্যাফলসের চিকিৎসা করছিলেন সেই ডাক্তার লিডগেট, আগে যিনি বালস্ট্রোডের কাছে ঋণ চেয়েছিলেন। এবার বালস্ট্রোড তাকে ভুলিয়ে রাখার জন্য ঋণটা দিয়ে তার বিশ্বাস অর্জন করেন, তারপর ব্ল্যাকমেইলার র্যাফলসকে আস্তে আস্তে ওষুধ না দিয়ে মৃত্যু ত্বরান্বিত করেন। এ ব্যাপারে লিডগেটের কোন হাত না থাকলেও ঘটনা ছড়িয়ে গেলে সন্দেহের তীর তার দিকেও উঠে। অল্প কিছু লোকই লিডগেটকে বিশ্বাস করে, ডরোথি তাদের মধ্যে একজন। তবে সামাজিক চাপে আর অবিশ্বাসে লিডোগেট মিডলমার্চ ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি লন্ডন গয়ে পরে ধনী হলেও নিজেকে ব্যর্থই ভাবতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মাত্র ৫০ বছর বয়সেই মারা যান।
একটি সার্থক উপন্যাসের আকর্ষনীয় দিক হিসেবে হাস্য রস আর কল্পনার মিশেল থাকলেও উপন্যাসটি বাস্তব কিছু ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরেছে। ১৯৩২ এর ইংল্যান্ডের রিফর্ম অ্যাক্ট উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে, যে কালো আইন নারীদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এছাড়া উপন্যাসটিতে এসেছে প্রথম যুগের রেলপথ আর রাজা উইলিয়াম IV এর সিংহাসনে আরোহণের সময়কাল, যখন ইংল্যান্ডের সমাজ চাপিয়ে দেয়া আইনকানুন আর বেদনাদায়ক কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ধারণা করা হয় মিডলমার্চ শহরটির মাধ্যমে লেখিকা মধ্য ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম থেকে ৩৫ কিলোমিটার পূর্বের কভেন্ট্রি শহর তুলে ধরেছেন। শহরটি ঐতিহাসিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং লেখিকার নিজের শহর।
বহুল প্রচলিত সুখী সমাপ্তি বা হ্যাপি এন্ডিং এর ধারা অস্বীকার করে লেখিকা একটা বিষন্ন আবহে পুরোটা উপন্যাস টেনে নিয়ে গেছেন। দুটি অসুখী বিয়ে আর পারিবারিক টানাপোড়েনে মাঝে মাঝে পাঠকের মনে হতে পারে, যদি কোনভাবে লিডগেটের সাথে ডরোথির বিয়ে হত! দুজন জ্ঞানান্বেষীর মিলনে সুখের প্রাচুর্য থাকত। আবার ওদিকে ক্যাসাবন বা লেডিসলর সাথে রোজামন্ডই বেশি মানাতো। কিন্তু তখনকার দিনে, এবং আজকের দিনেও, এই ভাবনা অবাস্তব। কারণ আমাদের সমাজ পরিবার গঠনে মানসিকতার মিলের গুরুত্ব অস্বীকার করে। শুধুমাত্র এই দিক থেকেও উপন্যাসটি কালোত্তীর্ণ। এর আবেদন ভিক্টোরিয়ান যুগে যেমন ছিল, এই চারশত বছর পর এসেও তেমনি আছে।
আমাদের ভাবনা, যোগাযোগ, প্রেম, পরিণয়ের মাধ্যম শুধু বদলেছে, কাগজ থেকে কম্পিউটারের যুগ এসেছে, জমিদারী গিয়ে ব্যক্তি মালিকানা এসেছে, কিন্তু চিন্তাধারা রয়ে গেছে শাশ্বত, অপরিবর্তনীয় মানব-মন প্রসূত যুক্তিনির্ভর।
কে জানে, হয়তো এ-ই ভালো!