5 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
যারা নিয়মিত দ্বীনী বই-পুস্তক পড়েন তাদের পাঠ্যতালিকা খুঁজলে দেখা যায়—বিরাট একটি অংশ জুড়ে আছে সীরাত বিষয়ক কিতাবাদি। যারা দ্বীনী বিষয়ে লেখালেখি করেন তাদের লিখিত রচনা-প্রবন্ধ খুঁজলে দে..
TK. 340TK. 170 You Save TK. 170 (50%)
Product Specification & Summary
যারা নিয়মিত দ্বীনী বই-পুস্তক পড়েন তাদের পাঠ্যতালিকা খুঁজলে দেখা যায়—বিরাট একটি অংশ জুড়ে আছে সীরাত বিষয়ক কিতাবাদি। যারা দ্বীনী বিষয়ে লেখালেখি করেন তাদের লিখিত রচনা-প্রবন্ধ খুঁজলে দেখা যায়—প্রধান অংশটি জুড়েই আছে সীরাতের নানা ঘটনা ও শিক্ষা। যারা দ্বীনী বিষয়ে কিতাব রচনা করেন তাদের জীবনের অনন্য সাধ ও স্বপ্নের বিষয় থাকে সীরাত বিষয়ে অন্তত একটি কিতাব লেখা। কী এমন বিষয় এই সীরাত?!
শাস্ত্রীয় নানা সংজ্ঞা এবং সংজ্ঞাকেন্দ্রিক নানা পার্থক্য থাকলেও সহজ কথায় সীরাত মানে হলো নবীজীবন। হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও জীবনকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে রচিত কিতাবগুলোকেই বলা হয় সীরাতের কিতাব। এ বিষয়ে লিখিত কিতাবের সংখ্যা, আমার মনে হয় কারও পক্ষেই গণনা করা সম্ভব নয়। জানা নেই—পৃথিবীর এমন কোনো ভাষা বাকি আছে কিনা যে ভাষায় সীরাত বিষয়ে কোনো কিতাব আজও লেখা হয়নি। হয়তো কারও জানা নেই—সীরাত বিষয়ক কিতাবের চেয়ে বেশি কোনো ব্যক্তিবিষয়ক রচিত কিতাব পৃথিবীতে পড়া হয়েছে কি না এবং কোনোদিন হবে কি না!
সীরাতের কিতাব যে শুধু মুসলমানরা পড়ে তাই নয়। অত্যন্ত গভীরভাবে সীরাতের কিতাব অধ্যয়ন করে পৃথিবীর তথাকথিত
বহু উন্নত জাতি। বিভিন্ন ধর্মের বহু মানুষ। তারা এ বিষয়ক কিতাব পড়ে নিজেদেরই স্বার্থে। জাগতিক এবং সভ্যতাকেন্দ্রিক উন্নতি ও উৎকর্ষতা লাভের আশায়। এটা শুধু এ যুগের কথা নয়। সবযুগেই এ অবস্থা ছিল।
হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো হলেন মানবতার দূত। পৃথিবীবাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। সকল ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা থেকে মানবজাতিকে উদ্ধারকারী। তিনি রহমাতুল লিল আলামীন বা জগতবাসীর জন্য রহমত। তার জীবনেই রয়েছে প্রকৃত মানবতা, প্রকৃত সভ্যতা, প্রকৃত জ্ঞান ও শিক্ষা এবং প্রকৃত মনুষ্যতের পূর্ণ বিকাশ। তিনি তো স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছেন। স্রষ্টার হুকুম ও বার্তা নিয়ে এসেছেন। স্রষ্টার পরিচয় ও তাঁর সৃষ্টির লক্ষ্য উদ্দেশ্য জানানোর জন্য এসেছেন। এসেছেন পুরো মানবজাতিকে সত্য ও সুন্দরের পথ দেখাতে। সঠিক পথের দিশা দিতে। ইহজাগতিক ও পরজাগতিক সফলতা লাভের সূত্র ধরিয়ে দিতে। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর পাক কালামে কী বলেছেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيرًا
বস্তুত আল্লাহর রাসূলের মাঝেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ—এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।
এই আদর্শ জানার জন্য এবং অনুসরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সত্যিকারের ওয়ারিসে নবী যাঁরা; তাঁদের সোহবত ও সান্নিধ্য গ্রহণ করা, কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা ও সঠিক নিয়মে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা এবং আগ্রহের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন করা।
একজন মানুষ ছিলেন এতীম। বাবা হারা এবং মা হারা। বংশকৌলিন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেও আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ছিলেন সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ঘোষিত শত্রæ। সে কারণে তাঁকে মাতৃভ‚মিও ত্যাগ করতে হলো। নিজেদের ভিটেমাটি, আপন পরিচিতজন প্রায় সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হলো পরবাসে। সেখানে গিয়েও কত বিপদ আর কত শঙ্কা। এর মধ্য দিয়েই পুরো পৃথিবীকে তিনি জয় করলেন। ঘোর শত্রæদের হৃদয়েও বুনে দিলেন ভালোবাসার সতেজ চারা।
একথা তো সবার জানা যে, নবুওয়তের আগে এবং পরে সর্বাবস্থায়ই মক্কার কাফের মুশরিকরা তাঁকে আল-আমীন অর্থাৎ পরম আস্থা ও বিশ^াসের পাত্র মনে করত। এমনকি যে রাতে তিনি তাঁর জন্মভ‚মি মক্কা ছেড়ে দূর মদীনায় হিজরত করলেন, সে রাতেও তাঁর কাছে ছিল কাফের মুশরিকদের রক্ষিত আমানত। যা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপন চাচাত ভাই হযরত আলী রাযি.-কে অত্যন্ত ঝুঁকি ও শঙ্কার মধ্যেই রেখে গেলেন।
নির্ভরযোগ্য অসংখ্য সূত্রে প্রমাণিত যে, মক্কার কাফের মুশরিকরা তাঁকে নানা অপবাদে জর্জরিত করেছিল। বলেছিল—তিনি কবি, পাগল, জাদুকর, জ্যোতিষী এবং এজাতীয় নানা কথা। কিন্তু কেউ
তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য ও আচরণিক উৎকৃষ্টতার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারেনি। তাঁরা জানত—এই মানুষের মতো গুণ ও বৈশিষ্ট্যে উজ্জ¦ল কোনো মানুষ তারা দেখেনি। অথচ তারা কতভাবে নবীর বিরোধিতা করেছে। নিজেদের জীবন, সন্তানের জীবন, আত্মীয় পরিচিত ও ঘনিষ্ঠজনদের জীবন তারা তাঁর বিরোধিতায় বিসর্জন দিয়েছে। কী ঘোরতর বিরোধিতা ছিল তাদের! তবু কখনো তাঁর চরিত্র নিয়ে কথা বলতে পারেনি। আখলাক ও গুণ-মাধুর্য নিয়ে মন্দ কোনো শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারেনি। উপরন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাষায় স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় নবীজীর গুণ ও চরিত্রের প্রশংসাই করেছে তারা।
এমন তো নয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতেন, জনসমাজ ও জনসমাগম এড়িয়ে এড়িয়ে চলতেন। বরং তিনি স্বাভাবিকভাবেই অন্য দশজন মানুষের মতো জীবন যাপন করতেন। বাজারে যেতেন, খাবার খেতেন, লোকজনের সাথে বসতেন, কথাবার্তা বলতেন, আলাপ আলোচনা শুনতেন। অপরদিকে তাঁকে দেখার জন্য, তাঁর কথা শোনার জন্য, তাঁর কাছ থেকে শেখার জন্য, তাঁর আমল ও আচরণ অনুকরণের জন্য এবং যাবতীয় কাজ কর্মে তাঁকে অনুসরণ করার জন্য পরম আগ্রহ নিয়ে সাথে থাকতেন সাহাবায়ে কেরাম। তাঁরা তাঁদের দেখা, শোনা ও শেখা বিষয়গুলো অন্যদেরকেও জানিয়ে দিতেন। অন্যদেরকেও সেসব শেখাতেন।
এভাবে পুরো একটি জীবন পার করেছেন যিনি, যাঁর সকল কথা ও কাজ জগতবাসীর জন্য অনুকরণীয়, যাঁর সবকিছু সর্বোৎকৃষ্ট এবং সর্বশ্রেষ্ঠ—তাঁর জীবন নিয়ে বাস্তবিক অর্থেই চর্চা করা উচিত। নিয়মিত তাঁর কোনো না কোনো জীবনী অধ্যয়ন করা উচিত। এতে সেই জীবনের সঙ্গে সবসময়ই একটা যোগসূত্র থাকবে। তাঁকে অনুভব ও উপলব্ধি করা সহজ হবে। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে আলো ও হেদায়েত গ্রহণ করার তাওফীক হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।
এবার এই বই সম্পর্কে দুয়েকটা কথা বলেই শেষ করছি। কয়েকদিন আগে মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব সাহেব হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠালেন। বললেন, আজ থেকে চার বছর আগে তিনি শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর লেখা একটি সীরাতের কিতাব অনুবাদ করেছেন। প্রাথমিক সম্পাদনা করে ছাপার জন্যও প্রস্তুত করে রেখেছেন। এরপর তাঁর উস্তায ও মুরুব্বীর পক্ষ থেকে অনুমতির অপেক্ষা করেছেন। দীর্ঘদিন পর গতকাল তাঁর উস্তায ও মুরুব্বী কিতাবটি ছাপার অনুমতি দিয়েছেন। তাই মাকতাবাতুল আশরাফকে আপন ও কাছের প্রতিষ্ঠান মনে করে যোগাযোগ করছেন।
এজাতীয় কোমল মিনতিমাখা বেশ কয়েকটা বাক্য ছিল সেই মেসেজে। আমি মেসেজটি শোনার পরপরই তাকে ফোন করলাম। বললাম, আপনার তো এভাবে কথা বলার কোনো দরকার নেই। আপনি বরং দ্রুত অনুবাদটির সফটকপি পাঠিয়ে দিন। এরপর দুআ করুন।
এই বৃত্তান্ত তুলে ধরার একটি বড় উদ্দেশ্য আছে।
বর্তমানে একটি রোগ পুরো সমাজেই অত্যন্ত আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা হলো, মুরুব্বীদের সম্মান ও গুরত্ব কমে যাওয়া এবং তাঁদের প্রতি আস্থা ও আনুগত্যে শিথিলতা প্রদর্শন করা। এটা যে কত বড় অধঃপতনের বিষয়, এখনো মনে হয় আমরা তা উপলব্ধিই করতে পারছি না। এর কারণে যে আগে-পরে কত জাতি-শ্রেণি কত ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার হিসাব নেই। দুআ করি আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সমাজ থেকে এই রোগ দূর করে দেন। আমাদের সবাইকে যেন সালাফে সালেহীনের মত ও পথের উপর সঠিকভাবে অটল অবিচল থেকে কাজ করার তাওফীক দান করেন। মাওলানা তাওহীদ সাহেবের জন্যও দুআ করি, আল্লাহ তাআলা তাঁকে আমাদের পূর্বসূরিদের উত্তম উত্তরসূরি হিসাবে কবুল করুন। আমাদের সবাইকে সকল খাইর ও কল্যাণের কাজে জীবনকে উৎসর্গ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রিয় পাঠক! শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. ও শায়খ আহমাদ ইযযুদ্দীন আল-বায়ানূনী রাহ. কর্তৃক রচিত এই সীরাতের কিতাব সম্পর্কে কোনো কথাই বলা হলো না। খুব কিছু বলার প্রয়োজনও মনে হয় নেই। তাছাড়া শায়খ আবুল ফাতহ আল-বায়ানূনী রাহ.-এর ভ‚মিকা ও আমাদের অনুবাদকের কথায় মৌলিক বিষয়গুলো এসে গেছে। আশা করি সেখান থেকে পাঠক অনেক তথ্য সংগ্রহ করে নিবেন। আমি শুধু সীরাত বিষয়ক কিতাব এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য দুই শায়খের কিতাব হিসাবে এর দ্বারা অনেক ফায়দার আশা করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভরপুর ফায়দা দান করুন। সীরাতের আলোয় আমাদের জীবনকে আলোকিত করে দিন। আমীন।