356 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন
১
আমাদের দেশে প্রচলিত ইতিহাসের মধ্যে আমি নিজেকে খুঁজে পাইনা। আত্মপরিচয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের সন্তোষজনক কোন ধারণা নেই পাঠ্য বইয়ে, পত্রপ..
TK. 450TK. 338 You Save TK. 112 (25%)
In Stock (only 3 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Related Products
Product Specification & Summary
বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন
১
আমাদের দেশে প্রচলিত ইতিহাসের মধ্যে আমি নিজেকে খুঁজে পাইনা। আত্মপরিচয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের সন্তোষজনক কোন ধারণা নেই পাঠ্য বইয়ে, পত্রপত্রিকায়, আলাপে কিংবা বিতর্কে। সেকারণেই হয়তোবা, ইতিহাসের বই ছাপিয়ে শুরু হয় আমার সাহিত্যের পাঠ। এপার-ওপার দুই বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের লেখালেখির সাথে ঘটে পরিচয়। পাশাপাশি নানান ধরনের প্রবন্ধ, বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ আর মার্ক্স-এঙ্গেলসের রচনাবলী নাড়াচাড়া করি। এমন করেই কেটে যেতে থাকে আমার কৈশরের সোনালী দিনগুলো ।
১৯৯৬ সালে এসে ক্যাডেট কলেজের পাঠ চুকে গেলে পরের বছর ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। বাবা এবং প্রায় সকল শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে স্বেচ্ছায় সমাজবিজ্ঞান পছন্দ করার কারণ ছিল একটাই – আমাদের সমাজকে বোঝার মধ্য দিয়ে আত্মপরিচয়ের খোঁজ করা। রাজা-বাদশাহ, সুলতান, নবাব আর তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্ব ও তাদের পরিবারের কাহিনীতে ভরা ইতিহাসে আমার আত্মপরিচয়ের হদিস না পেয়ে আসলাম সমাজবিজ্ঞানে। কিন্তু এই বিষয়ে এসেও আরেক নতুন সমস্যার উদ্রেক হল। দেখলাম পাঠ্যক্রমে, শ্রেণীকক্ষের আলাপে, ক্যাম্পাসের নানান পরিসরে আমাকে এবং আমি যে সমাজ থেকে এসেছি, অর্থ্যাৎ গ্রামীণ বাংলাদেশকে বেশ অনেকটাই অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তথাপি সেই অন্তর্ভূক্তিতে কেন যেন মন ভরে না।
স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের একজন হয়েও প্রায়শঃই নানান স্থানে নিজেকে অনাহুত, খানিকটা অবাঞ্ছিত হিসেবে আবিষ্কার করি। পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতা, বোর্ডের মেধাতালিকায় উপরের দিকে স্থান থাকা, ক্যাডেট কলেজের পড়াশোনা, সর্বোপরি সর্বদা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে থাকা একদল প্রাণপ্রিয় বন্ধুর উপস্থিতি সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে ভাবতে থাকি - কেন এমন হয়? সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হয়েও জহুরুল হক আর বুয়েটের রশীদ হলে কাটাই সপ্তাহের অধিকাংশ সময়। বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, হাসিঠাট্টায়, হইহুল্লোরে দিনগুলো দ্রুত কেটে যেতে থাকে। কিন্তু যেই মাত্র নিজের রুমে ফিরে আসি, অথবা কলাভবনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কাছে যাই, নিজেকে কেমন যেন মানিয়ে নিতে পারি না। শুধুই মনে হতে থাকে - অপিরিচিত কোন বাড়িতে বিনা-দাওয়াতে ঢুকে পরেছি।
এভাবেই প্রথমবর্ষ কেটে গেলো। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল যখন হাতে পেলাম তখন দেখলাম প্রত্যাশার চেয়ে অনেক অনেক খারাপ করেছি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে ভর্তি হওয়ার কারণে যে আত্মবিশ্বাস ছিল তা’ ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। কিন্তু তার থেকে গুরুতর সমস্যা হল এই যে, একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার বোধটা আমাকে আরো প্রবলভাবে চেপে ধরল। আমি অনুভব করলাম, এই স্থান/সমাজ/দেশ আমার না।
নিজের বাড়ীতে থাকার যে স্বস্তি, সেটা আমি প্রায় কখনোই অনুভব করিনা। বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা বাড়িয়ে দিই। দিনে রাতে যখন তখন ক্যাম্পাসের এখানে সেখান হেঁটে চলি ফিরি। আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে সময়গুলো পার করে দেওয়ার কসরত করি। দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া বাদবাকি সব ক্লাসই যান্ত্রিক মনে হতে থাকে। সময়ও যেন বিশ্বাসঘাতকতা করে – এক বছরের কোর্স শেষ হতে দেড়-দুই বছর চলে যায়। চার বছরের স্নাতক কোর্স লম্বা হতে হতে ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে।
বরাবরই মুখস্ত করার ক্ষমতা ছিল বেশ। সেকারণে চোথা মুখস্ত করে প্রথম শ্রেণী পেতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু যে শূন্যতার অনুভূতি নিয়ে শুরু হয়েছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, তা যেন ক্রমশই বেড়েই চলে। লেখাপড়া শেষে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবো এমনই ছিলই আজন্ম লালিত স্বপ্ন। সেকারণে আর কোন পেশার কথা কখনো ভাবিনি। মাস্টার্স পাশের পর দেখি, সেখানেও বদ্ধ দুয়ার। এমন গভীর হতাশার মধ্যে পরপর দুইদিন ফুলব্রাইট আর মনবুশো বৃত্তির চূড়ান্ত মনোনয়নের সংবাদে বেশ সান্ত্বনা পাই। ভাবি, বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরলে নিশ্চয়ই স্বপ্নের পেশায় ঢুকতে পারবো। আত্মপরিচয়ের অসমাপ্ত খোঁজটা তখন নেওয়া যাবে।