1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
সুনির্মলকুমার দেব মীন ৩১ মে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে মৌলভীবাজার শহরের শান্তিবাগ পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম প্রমোদচন্দ্র দেব। মাতা সুবর্ণপ্রভা দেব। তাঁর আদি নিবাস কুলাউড়া উপজেলায়..
TK. 400TK. 300 You Save TK. 100 (25%)
Product Specification & Summary
সুনির্মলকুমার দেব মীন ৩১ মে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে মৌলভীবাজার শহরের শান্তিবাগ পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম প্রমোদচন্দ্র দেব। মাতা সুবর্ণপ্রভা দেব। তাঁর আদি নিবাস কুলাউড়া উপজেলায়। সুনির্মলের শৈশব কাটে মনু নদীর প্রবাহের সাথে মিতালী করে। এই নদীর ছন্দময় কলতানের প্রবাহ তাঁর-ই জীবন-রথের সাথে বড় মিল খায়। দুরন্ত কিশোর জীবন অতিবাহিত হয় মনু নদীতে সাঁতার দিয়ে। একসময় তার-ই কূলঘেঁষে গড়ে ওঠা “দেব ভবন”-এ পিতা-মাতার সাথে স্থায়ী হয়ে উঠেন। এই বাসা থেকে তিনি পড়াশুনা, খেলাধুলা, নাটক, সমাজকর্ম ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকেন। ছাত্রাবস্থায় জাত-প্রথা ভাঙার আন্দোলন, স্বদেশী গান, রম্য গান, ব্যঙ্গ গান ও নাটকে তিনি আলাদা হাস্যরসের যোগান দিয়ে শ্রোতাদের পুলকিত করতেন। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসনের সময় স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নবারুণ’ সৃষ্টিতে তিনি পরিশ্রম করেছেন। এই সংগঠন পাকিস্তানী শাসন-শোষণ বিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলতো। এইভাবে সুনির্মলকুমার দেব মীন একজন প্রগতিশীল নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতি ও সাহিত্যের সমজদার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন।
সুনির্মলকুমার ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার মহাবিদ্যালয়ে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রæপ) কর্মী হিসেবে কারাবরণ করেন। সাময়িক হাজত বাসের পর প্রশাসনের নির্দেশে কলেজ ও মৌলভীবাজার থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি মৌলভীবাজার ছেড়ে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপদ বিভাগে ওয়ার্ক এ্যাসিস্টন্ট পদে চাকরি গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি ময়মনসিংহ শহরের নাসিরাবাদ মহাবিদ্যালয়ের নৈশ বিভাগে ভর্তি হন। সুনির্মল দেব ময়মনসিংহে অবস্থানকালে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলায় এম.এ পাশ করেন।
সুনির্মল দেব ১৯৬৮ সালে পুনরায় মৌলভীবাজার ফিরে আসেন। তখন জীবন সংগ্রামের অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন পত্রিকা-বই বিক্রির করতে থাকেন। । এই সময়ে তিনি সিলেটের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক ‘যুগভেরী’র মৌলভীবাজারস্থ বিক্রয় প্রতিনিধি, সাংবাদিক, কলামিস্ট হিসাবে তৎপর ছিলেন। যুগভেরীতে তিনি ‘বেত্তমিজের হালখাতা’ নামে রসাত্মক কলাম ও রম্য-কথন লেখে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। এই কাজের পাশাপাশি প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর অনুরোধে ‘কুসুমবাগ’ প্রেক্ষাগৃহের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন রসালো আড্ডা জমিয়ে রাখেন। তার আড্ডায় অংশ নিতেন অধ্যাপক শাহজাহান হাফিজ, কমরেড তারা মিয়া, সৈয়দ মহসীন আলী, শফকুয়াতুল ওয়ায়িদ, সৈয়দ মতিউর রহমান প্রমুখ। কিছুদিন পর এই চাকুরি ছেড়ে তিনি ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে যোগ দেন। সুনির্মল দেব ‘বন্যা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় পাক সেনাদের নির্যাতন শুরু হলে শহরের আবাল বৃদ্ধ বণিতাকে গ্রামাঞ্চলে নিরাপদে পৌঁছানোর কাজেও অংশগ্রহণ করেন। শরণার্থী জীবনে তিনি বিশাল পরিবারের ব্যয়ভার বহনের নিমিত্তে আসামের হাইলাকান্দির লালা রুরেল কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। সে কলেজের সংগীত রচনা, ১৯৬১ সনের ১৯শে মে বাংলা ভাষার জন্য শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার তৈরি ও ‘অধুনাতন’ নামে কলেজ সংকলন প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধের দিনে “ধলেশ^রী” নামক স্থানীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখেন।
সুনির্মল দেব ১৯৭২ সালে ছাতক মহাবিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সিলেট বেতারে সংবাদ পাঠক, নাটক পরিচালনা ও অভিনয়ে কয়েক বছর কাটিয়ে দেন। ২০০২ সালে ছাতক ডিগ্রি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করে সিলেট শহরের করেরপাড়ায় নিজের গড়া ঠিকানায় স্থিতু হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষা নিয়ে প্রবাসে বসবাস করছেন। তার স্ত্রী ছিলেন সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপিকা ছিলেন। স্ত্রী বিয়োগের পর প্রায় বছর তিন থেকে আমেরিকা প্রবাসী হলেও শিল্প-সংস্কৃতি ও শিকড়ের টান ছাড়তে পারেননি।
-প্রকাশক