1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
মহম্মদ রফি তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
‘কন্ঠের মাধুর্যকে ধরে রাখা ভীষণ কঠিন। নিয়মিত রেওয়াজ করতে হয়। পালিশ করতে হয়। ১৯৪২ থেকে গান গাইছি। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে..
TK. 700
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Product Specification & Summary
মহম্মদ রফি তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
‘কন্ঠের মাধুর্যকে ধরে রাখা ভীষণ কঠিন। নিয়মিত রেওয়াজ করতে হয়। পালিশ করতে হয়। ১৯৪২ থেকে গান গাইছি। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমার সিগারেটের নেশা নেই। মদ আমি স্পর্শ করি না। আমাকে খুব বেদনা দেয়, যখন দেখি একজন নবাগত গায়ক একটি হিট গান গাইলেন, তিনি তখন এমন অভিনয় করেন, তিনি বড়ো গাইয়ে হয়ে গিয়েছেন। এইসব কিছুই তিনি করেন তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাওয়ার জন্য। চোখের সামনে এইসব কিছু দেখতে ভালো লাগে না।”
চলচ্চিত্রের ইতিহাস লেখক নসরীন মুন্নি কবীর লিখেছেন, 'ভারতীয় দর্শকরা ছকে বাঁধা চরিত্র আর বাঁধা সংলাপের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু তারা জানে এবং আশা করে যে এইসব বস্তাপচা কাহিনিগুলোতেও নতুন করে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যায়, যদি সুন্দর চেহারার তারকা আর গুটি ছয়-আট গান থাকে। এইসব দর্শকদের গল্পের পুনরাবৃত্তিতে আপত্তি নেই। কিন্তু ছবির গানের মধ্যে যদি মৌলিকতা না থাকে তাহলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করবে।'
এ-কথা সত্যি, হিন্দি ছবিগুলিতে যদি কে.এল. সায়গল, লতা মঙ্গেশকর, মহম্মদ রফি, আশা ভোঁশলে, মুকেশ, মান্না দে, সুমন কল্যাণপুর, গীতা দত্ত, কিশোরকুমার, সামসাদ বেগম, নূরজাহান-এর মতো কণ্ঠশিল্পীদের মনমাতানো গান না থাকত তাহলে ছবিগুলি যথেচ্ছ সংলাপ থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ নির্বাক হয়ে যেত। গানই ছিল মূল আকর্ষণ, গানের জন্যই কণ্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং কথা-লেখকদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এক চমৎকার মার্গ এবং অমার্গীয় সংগীত-জগতের অসামান্য রূপকথা। ছবির গানগুলিও হয়ে উঠেছিল জাতীয় জীবনের অঙ্গ। এক-একজন প্রযোজক বা ছবির নির্মাতা কোনো বিশেষ কথা লেখক বা সুরকারকে ঘরের মানুষ করে নিতেন। আবার অনেক সময় দেখা গেছে, কোনো নামী-দামি নায়ক একজন কণ্ঠশিল্পীকেই নিজের অভিনয় জীবনের গায়ক হিসেবেই বেছে নিয়েছিলেন। এই প্রতিযোগিতায় মহম্মদ রফি, মুকেশ এবং কিশোরকুমার সবচাইতে এগিয়ে ছিলেন। বিশিষ্ট কোনো কথা-লেখককে দেখা গেছে বিশেষ কোনো সংগীত পরিচালকের জন্য গান লিখতে এবং নিজেরাই নিজেদের কম্বিনেশন তৈরি করে নিয়েছেন। শাকিল বাদাউনি এবং নৌশাদ আলি নিজেরাই একটি চমৎকার মেজাজ নির্মাণ করেছিলেন। শাকিল বাদাউনির কথাতে উর্দু প্রয়োগ এবং নৌশাদের রাগ-সংগীত আশ্রিত গানগুলি দেওয়ান-ই-খাস বা দেওয়ান-ই-আম মেজাজ এনেছিল। এনেছিল উত্তরপ্রদেশের লোকসংগীতের অনুভব। হসরত জয়পুরী এবং কবি শৈলেন্দ্র ও শংকর জয়কিষনের কম্বিনেশন ভারতবর্ষের যৌবনকে তোলপাড় করে দিয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল সব ঐতিহাসিক গান। একসময় দেখা গেছিল, এস.এইচ. বিহারিকে শুধু মাত্র সংগীত পরিচালক ও.পি. নাইয়ারের জন্য গান লিখতে। মজরুহ সুলতানপুরী, নীরজ, শৈলেন্দ্র এবং রাজেন্দ্র কিষন কথা লিখেছেন শচীন দেব বর্মনের জন্য। এক সময়ের সুপারহিট কম্বিনেশন আনন্দ বকসি, গুলজার ও লক্ষীকান্ত প্যারেলাল ভারতীয় লোকসংগীতকে অপূর্বভাবে ব্যবহার করে, গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং জনপদকে চমৎকার তুলে এনেছিলেন। আর আনন্দ বকসি ও মজরুহ সুলতানপুরী রাহুল দেব বর্মনের জন্য গান লিখেছিলেন। সৃষ্টি হয়েছিল নাগরিকমনস্ক সুর ও ছন্দের সঙ্গে চমৎকার ফিউশন। এই সমস্ত কিছুর অন্তরালেই ছিল কণ্ঠশিল্পীদের চমৎকারিত্ব।