প্রথম অধ্যায়
কবিতার উপাত্ত
কবিতার উপাত্ত কী? কী কী উপাদান দিয়ে কবিতা তৈরি করা হয় বা কবিতার কাঠামাটি কেমন হবে, কবিতার লেখার উপকরণইবা কীÑ এইসব প্রশ্ন কাব্যমোদী লোকে..
TK. 350TK. 263 You Save TK. 87 (25%)
Product Specification & Summary
প্রথম অধ্যায়
কবিতার উপাত্ত
কবিতার উপাত্ত কী? কী কী উপাদান দিয়ে কবিতা তৈরি করা হয় বা কবিতার কাঠামাটি কেমন হবে, কবিতার লেখার উপকরণইবা কীÑ এইসব প্রশ্ন কাব্যমোদী লোকের জিজ্ঞাস্য। অবশ্য যিনি কবিতা লেখেন তাকে সর্বাংশে এইসব বিষয় জানা অতীব জরুরী। পাঠকের কথা বাদই দেওয়া যাকÑ কবিসমাজের অনেকেই জানেন না কবিতার উপাত্ত বা কবিতা লেখার কলাকৌশটা কী? কোমরে গামছা বেঁধে কবিতা লেখা যেমন হয় না, তেমনি গামছা না বাঁধলে হয় না। কবিতা প্রকৃতিজাত অলৌকিক বিষয় হলেও কবি লৌকিক। লৌকিক কবি লৌকিক বিষয়টিকে যখন অলৌকিক রূপে রূপায়িত করতে পারেন, তখনই তা প্রকৃত কবিতা হয়ে ওঠে। দেহ আর আত্মা মিলে প্রাণের উদ্ভব। এই দেহ আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য কিন্তু আত্মা নয়। আত্মা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কবিতাও তা-ই। কবিতা দেখছি, পড়ছিÑ দেখা আর পড়ার পর মনোলোকে স্পন্দন ও আস্বাদন সেটি মানবের আজও আজানা। আত্মাকে পুলকিত করার বিষয়টি আজানা ও রহস্যময় মনে হলেও মানবের দেহটি ঘষামাজার ঠিক ঠিকই চলে। নইলে ধূলো ও ময়লার আবরণে শ্যাওলা পড়ে একদিন নষ্ট হয়ে যায় দেহের কাঠামো। কাব্য কী? কবিতা কী? সেটির মোটামুটি সংজ্ঞায়ন করা গেলেও কবিতার স্বরূপ মানবের উপলব্ধির অভ্যন্তরেই থেকে যাচ্ছে। কবিতা উপলব্ধির বিষয় হলেও ভাষিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শরীরী রূপটি নান্দনিক হয়ে উঠছে। সংস্কৃত শ্লোক ‘িকমিদম’ আদি কবিতা মন করা হলেও ভাষার প্রায়েগিক দিকটি উন্নতির ফলে লিখন পদ্ধতির উদ্ভব হয়। আর এই লিখন পদ্ধতির উদ্ভবের ফলে কবিতা শরীরের যুক্ত হয়েছে নানা উপাদান।আবেগপ্লুত করাগুলোই আর কবিতা থাকছে না। কবিতার শরীরী রূপে যুক্ত হয়েছে ছন্দ, অলঙ্কার, রস ও ধ্বনিসাম্যগত নানা টেকনিক। ভাষার বর্ণমালার সৃজনের ফলে মানুষ তার কথাগুলোকে যেনতেন ভাবে বলেই নীবর থাকছে না,.তার কথাগুলোকে সে ছন্দে, তালে, অলঙ্কারে ও রসঘন করে প্রকাশ করছে। ফলে কবিতা তৈরির জন্য উদ্ভাবন হয় নানা উপকরণ ও উপাদানের। কবিতা লেখার বিষয়ভাবনার পাশাপাশি প্রকাশ ভঙ্গির এইসব উপাদান ও উপাত্তের ফলে সুষ্ট্ িহলো নানা তত্ত¡ ও মতবাদের। ধ্বনিবাদী, আলঙ্গারিক, রসজ্ঞ ও ভাষাবিজ্ঞানীরা কবিতার শরীর ছেকে ছেনে বের করলেন নানা বিষয় ও প্রকরণে। কবিতা নৈসর্গিক ও অলৌকিক বিষয় হলেও আধুনিক যুগে কবিতা লেখার জন্য কবিকে ছন্দ অলঙ্কার ও রসের আশ্রয় নিতে হয়। এইসব উপাদানের মিলিত সংশ্লেষে কবিতা হয়ে উঠছে সৌন্দর্যের আধার। এই সৌন্দর্য আবার কী? মনে যা পুলক ও আনন্দের উদ্রেক করে তাই সৌন্দর্য। চোখ, মুখ, নাক. কান প্রভূতি দৈহিক অঙ্গের আলাদা আলাদা যেমন কোনো মূল্য নেই কবিতাতেও। ছন্দ অলঙ্কার রস প্রভূতি মিলে মানুষের উচ্চারিত আবেগটি ভাষায় প্রকাশিত হলে কবিতা হয়, কারণ এইসব মিলে সৃষ্টি হয় সৌন্দর্যের। দেহের জন্য যেমন প্রাণটি আসল বস্তুত কবিতার ক্ষেত্রেও সৌন্দযটুকুই মূলকথা। কাব্যের দেহ ও আত্মা
কাব্যের দেহ ও আত্মা। কাব্য কী? তার দেহ ও আত্মা আবার কী? কাব্য কাকে বলে? কীসে কীসে কাব্য হয়?বা কী কী গুণ থাকলে কাব্য হয় সে বিষয়ে আমরা কবিতার ছন্দের আলোচনায় বিশদ আলোচনা করেছি। বাক্য যেখনো তার শাব্দিক অর্থ পরিত্যাগ করে সেটাই কাব্য বা কবিতা। অন্যকথায় অনিবার্য শব্দের বাণীবিন্যাসকে কবিতা বলে। এই কবিতা বা কাব্য বলে। এখানে অনিবার্য শব্দের সঙ্গে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি কিংবা ঐশ^রিক বা নৈসর্গকি বিষয়ের আভাস ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ শব্দগুলো প্রকৃতিগতভাবে যার পরে যেটি বসে ব্যঞ্জিত অর্থ আপতেই প্রকাশ পায় সেটি কাব্য বা কবিতা। কবির জগত প্রকৃতির সেই অবাধ সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র। কবির যে নির্মাণ সে নির্মাণ রহস্যলোকের মায়ারজাল। সেই মায়াজালকে কাঠামো দেয়াই কবির কাজ। মানুষের দেহ যেমন চোখ মুখ নাক কান চুল ইত্যাদি দিয়ে নিমির্ত একটি কাঠামো। কিন্তু আত্মাটি তার ভেতরের জিনিস। একটি লোক জীবন্ত থাকতে যেমন তার চোখ নাক মুখ ইত্যাদি পরিদৃষ্ট হয়। মুত্যুও পরও আমরা লোকটির তাই তাই দেখি। কিন্তু সে দেখাটি সাময়িক সময়ের জন্য। প্রাণহীন লোকটিকে হয়তো দুচারদিন বাঁচানো যায় কিন্ত তারপর আত্মাহীন লোকটির চোখ নাক কান মুখি ধীরে ধীরে পচে যায়। এই দেহ মৃতলোকটির দেহটি কিছু সময়ের জন্য আমরা হয়তো নষ্টের হাত থেকে রক্ষ করতে পারি। তেমনি শব্দ দিয়ে যে বাক্য গড়ে ওঠে সেটাতে আমরা হয়তো কোনো বস্তুর ধারণা পাই কিন্তু ধারণার অতিরিক্ত কিছু পাই না। ধারণার অতিরিক্ত কিছু ব্যঞ্জিত হওয়াই কাব্য। যেমন যদি বলি মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল টুটে গেছে, আজ আমাদের ছুটি। এটি যখন গুছিয়ে বলি এভাবে বলেন, মেঘের কালো রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি। তখন দেখা যায় মেঘের কোলে তো রোদ হেসেছেই,বাদল তো টুটে গেছেই মেঘের কালো রোদ হাসার মধ্য দিয়ে মুক্ত জীবনের ইঙ্গিত আভাসিত হয়েছে। সাধারণত একটি কর্তা একটি কর্ম ও একটি ক্রিয়া দিয়া একটি সার্থক বাক্য হয়। যেমন আমি ভাত খাই, সে স্কুলে যায়, বাঁশবাগানের মাথার উপরে চাঁদ উঠেছেÑ এই বাক্যগুলোতে আমরা শাব্দিক অর্থ বা ধারণা পাই। কিন্তু ধারণার অতিরিক্ত কিছু পাই না। ধারণার অতিরিক্ত কিছুই হচ্ছে কাব্য Ñযা অনুভবের বিষয়। কাব্য হচ্ছে অনুভূতিশীল মনের স্পন্দন। যা চোখে দেখা যায়, তার একটা রূপ আমরা এমনিতেই পেয়ে যাই। কিন্তু যা চোখে দেখা যায় না, যার আকার দেয়া যায় না সেটি আমরা অনুভব দিয়ে বুঝে নিই। এই যে অনুভব দিয়ে বুঝে নেওয়ার বিষয় সেটির সঙ্গে থাকে কাব্যের যোগ।