পটভূমি
শ্রীকান্ত আচার্যের একটা সংলাপ দিয়েই শুরু করি, “সুখী মানুষ কখনো কোনো শিল্পের শিখরে উঠতে পারেনা। তাদের মধ্যে আগুন থাকেনা, তাদের মধ্যে আগুন জ্বলে না। স্ট্রাগল করা মানুষগুলো..
TK. 200TK. 150 You Save TK. 50 (25%)
Get eBook Version
US $2.24
Product Specification & Summary
পটভূমি
শ্রীকান্ত আচার্যের একটা সংলাপ দিয়েই শুরু করি, “সুখী মানুষ কখনো কোনো শিল্পের শিখরে উঠতে পারেনা। তাদের মধ্যে আগুন থাকেনা, তাদের মধ্যে আগুন জ্বলে না। স্ট্রাগল করা মানুষগুলো তাদের জীবনে আগুন জ্বালাতে পারে। শীর্ষস্থান তাদের জন্যই বরাদ্দ থাকে।”
আমি সেই এক জীবনের প্রতি পদে পদে সংগ্রাম করা মানুষ। জীবনের শুরুটা হয়েছিল অভিনয় দিয়ে। তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। একদিন টিকিট কেটে বাগেরহাট ক্লাবে মঞ্চ নাটক দেখতে যাই। নাটক দেখে যতটা না অভিভূত হলাম তার চেয়ে বেশি আমাকে আকৃষ্ট করলো, এত শতশত মানুষ টিকিট কেটে দশ থেকে পনের জন লোকের অভিনয় দেখতে এসেছে। ওরা কত উচুঁ মাপের মানুষ। আমিও অভিনয় করবো। বাসায় চুলায় ভাত নেই অথচ আমার অভিনয়ের চিন্তা। ঐ যে বললাম সংগ্রামের কথা। ভর্তি হলাম “বাগেরহাট থিয়েটারে” ১৯৮০-১৯৮৬ এরপর ঢাকায়। আমার চিন্তা বড় শিল্পীদের দলে ঢুকতে হবে। ভর্তি হলাম “ঢাকা থিয়েটারে”, যেখানে ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী, সুবর্না মুস্তফা, পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ, শহিদুজ্জামান সেলিম, শমি কায়সার প্রমুখ। তাদের মত বাঘা বাঘা শিল্পীদের সাথে বিখ্যাত কিছু নাটকে অভিনয় করলাম। বেশ কয়েকবার দেশের বাইরেও যাওয়ার সুযোগ হলো তাদের সাথে। বিটিভিতে অডিশন দিয়ে একবারে এনলিস্টেড হয়ে গেলাম অভিনয় শিল্পী হিসেবে। এখানেও একক নাটক ও ধারাবাহিক নাটক মিলিয়ে প্রায় বিশটি নাটক করলাম। পৌঁছে গেলাম সফলতার স্বর্ণ খচিত দুয়ারে।
অভিনয়ের পাশাপাশি আরও একটি শখ ছিল, তখন পেন্সিলে প্রোট্রেট আর্ট করতাম। কোনো একাডেমিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই পেন্সিল স্কেচে বিরাট সফলতা আসল। ১৯৮৮তে বন্যার উপর একটা স্কেচ করে আমি বাংলাদেশে প্রথম হই। সাক্ষাৎকার নেয় বিটিভি। সেখানে আমার অনেক ছবি দেখানো হলো। “পটুয়া কামরুল হাসান” আমার আকাঁ তার নিজের একটা পোট্রেট দেখে বলেছিলেন, “পাক ভারত উপমহাদেশে পেন্সিলের এত নিখুঁত কাজ আমি আর দেখিনি। তার আকাঁ সৃষ্টির মাঝে নতুন করে আমি আমার কাজের ছায়া খুজেঁ পেলাম।” ছবির নীচে একথা লিখে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন।
এ সব কিছুই ছিল নিরুৎসাহিত একটা পরিবারের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়াই, এতদূর পথ পাড়ি দিয়েছি শুধুমাত্র একান্ত দৃঢ়চেতা মনোবল আর সাহসকে সম্বল করে। আমার এ পথচলা সহজ ছিলনা, কন্টকাকীর্ন পথে হেঁটে হেঁটে এসেছি এখানে।
এরপর আসলো লেখার গল্প। আমার মেয়ে প্রচÐ অসুস্থ হলো একবার। মেয়ের অসুস্থতার কষ্ট দেখে আমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছিলাম অনেক। সহ্য করতে পারলামনা। সেদিন ওর অসুস্থতায় কেদেঁছিলামও। পিতৃহের প্রবল আবেগে ওকে নিয়ে একটা কবিতা লিখলাম। ঘটনাক্রমে কবিতাটা মেয়ে দেখে ফেলে। আনন্দের আতিশয্যে মেয়ে ঐ কবিতাটা সবাইকে দেখালো। সবাই বলল, “তোর বাবাকে লিখতে বল। খুব ভালো করবেন উনি।” শুনে মনে হলো আমিতো লিখতে পারি। শুরু হলো লেখা। লিখতে লিখতে অনেক লেখা লিখে ফেললাম। “এবং নীলা” নামে কবিতার বইও বের হয়ে গেল ২০২২ সালের বইমেলায়। সাক্ষাৎকারও নিল পাচঁটি টিভি চ্যানেল। আনন্দ ও কষ্ট খুব দ্রুতই সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। আমার এই ক্ষুদ্র সাফল্যের আনন্দের অনুভূতিও সবার মাঝে দ্রত ছড়িয়ে পড়ল। এরপর কলমের এই যাত্রা আর থামেনি।
“এবং নীলা” বইয়ের প্রথম কবিতা ছিল “নীলা”। “নীলা” কবিতাটির পথ ধরেই লিখে ফেললাম “শুভ্র বাসর” উপন্যাস।
প্রতিটি জন্মই কিন্তু গভীর ভালোবাসা থেকেই হয়। কন্যার প্রতি পিতার প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকে যে লেখক সত্তার জন্ম হলো, আমি চাই আমার সেই লেখক সত্তা পাঠকের ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকুক আমৃত্যু।
আর লেখার ভুলগুলো পাঠক ভালোবাসা দিয়েই ক্ষমা করে দেবেন।
খান শাহ্ আলম
লেখক