রাজিনের ঈদের আনন্দ
রাজিন থাকে মিরপুরের এক নম্বরে। এটা রাজিনের দাদুর বাড়ি। দাদু চাকরি থেকে অবসরে যাবার সময় জমানো টাকা দিয়ে এই ছোট্ট বাড়িটা তৈরি করেন। মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী ক..
TK. 300TK. 225 You Save TK. 75 (25%)
Product Specification & Summary
রাজিনের ঈদের আনন্দ
রাজিন থাকে মিরপুরের এক নম্বরে। এটা রাজিনের দাদুর বাড়ি। দাদু চাকরি থেকে অবসরে যাবার সময় জমানো টাকা দিয়ে এই ছোট্ট বাড়িটা তৈরি করেন। মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে তাদের বাড়ি। রাজিনরা এক ভাই এক বোন। পুরো বাড়িতে একেক তলায় একেক চাচারা থাকেন। মেজ চাচা থাকেন একতলায়। খুব মজার মানুষ। তিনি বিয়ে করেননি। রাজিন এই কাকাকে খুব ভালোবাসে। সারাদিন সে একতলায় থাকে। রাতে ঘুমায় পর্যন্ত কাকার সাথে। কাকা ভালো রান্না করেন। রাজিনের জন্য ভারিমজার মজার খাবার রান্না করেন। কাকা যখন দুপুরে বাসায় থাকেন তখন রাজিনকে সাথে নিয়ে খেতে বসেন। রাজিন কি কি খেতে ভালোবাসে কাকা সেদিকে খুব খেয়াল রাখেন। রাজিনের বাবা মা থাকে দোতলায়। তিনতলায় বড় চাচা। চারতলায় ছোট বাবা। রাজিনের ভারি মজা। সবখানে ছোটাছুটি করে। খেলাধুলা করে। ছোটবাবার একজন মেয়ে। নাম তার রূপকথা। রাজিন রূপকথার সঙ্গে খেলাধুলা করতে খুব পছন্দ করে। বড় চাচার এক ছেলে এক মেয়ে। অমি আর প্রাচী। অমিকে রাজিন ডাকে ভাইয়া। ভাইয়ার সঙ্গে ওর খুব ভালো খাতির। দুজনে একসাথে বাইরে ঘুরতে যায়। সন্ধ্যায় কোথাও খেতে যায়। রাজিন সারাক্ষণ অমি ভাইয়ার সাথে দুষ্টামি করে। ওকে খোঁচা দেয়। অমি ভাইয়ার পেটের ওপর শুয়ে পড়ে। মোবাইলটা ছিনতাই করে। নানারকম মজার মজার দুষ্টুমি।
ঈদ এেল দুজনের ভারি মজা। সকালে একই রকম পাজামা পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে যায় একসাথে। বাসা ফিরে মেজ কাকার বাসায় একসাথে খায়। কাকার রান্না খিচুড়ি আর ভুনা গরুর মাংস। তারপর কাকা ঈদ সেলামি দেন। ঈদের দিন ঈদ সেলামি পেতে খুব ভালো লাগে। ঈদের পরদিন মজা আরও বেশি। অমি ভাইয়া বাবা মায়ের সাথে ভোরবেলা চলে যায় নানার বাড়ি। নানি বেঁচে আছেন। থাকেন মিরপুর ১০ নম্বরে। দুই মামার সাথে। রাজিন-রায়া যখন নানির কাছে যায় তখন আনন্দের সীমা থাকে না। মামাতো ভাইয়ের বয়স দুই বছর। রাজিন ওকে ডাকে ভেজলিন বলে। পিচ্চিকে নিয়ে সারাক্ষণ খেলাধুলায় ব্যাস্ত হয়ে থাকে। পিচ্চিটাও খুব মজার। সবসময় হাত পা ছুঁড়ে হাসতে থাকে।
রাজিনের কোনো গ্রামের বাড়ি নেই। নানা-নানি শহরেই জীবন যাপন করেন। দাদাও শহরে থাকতেন। রাজিন জন্মের পর কোনোদিন গ্রামে যায়নি। গ্রামে থাকেনি। গ্রামের ছবি তাই রাজিনের কাছে অনেকটাই অস্পষ্ট। রাজিন গাছপালা কম চেনে। দুচারটে পাখি ছাড়া চেনে না। সব মাছের নাম সে জানে না। মাছ কিভাবে জালে ধরা হয় দেখেনি সে। কিভাবে ধান চাষ হয় গ্রামের মাঠে কিভাবে জোরে বৃষ্টি পড়ে কিছুই দেখেনি রাজিন।
ওর জীবনটা আটকে আছে শহরের ফাঁদে। ওর শৈশব হচ্ছে বাড়ির সামনের রাস্তায়। নানি বাড়ির ড্রইংরুমে টিভি দেখে, দুপুরে একসাথে খাইদাই, ছোটমামার সাথে গেম খেলে কম্পিউটারে। গেম খেলে দিন কেটে যায় রাজিনের। নানি রাজিনকে ছোটবেলার গল্প শোনান। ঠাকুরমারঝুলির রূপকথার গল্প শোনান। রাজিন খুব মুগ্ধ হয়। নানির কোল ঘেঁষে গল্প শোনার আননদই আলাদা।
নানির বাড়ি বেড়িয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসে রাজিনরা। শরীরটা খুব ক্লান্ত। বাসায় পিরেই রাজিন শুয়ে পড়ে। ঘুম আসতে দেরি হয় না। নানির মুখে শোনা রাক্ষসদের গল্পটা মনে আছে। রাক্ষস আর খোক্ষসদের সাথে বন্ধুত্ব রাজিনের। দুজন এসে রাজিনের সামনে দাঁড়ায়। ঈদ মোবারক বন্ধু।
ঈদ মোবারক।
আজ ঈদের দিন। কি উপহার চাও রাজিন।
রাজিন হাসতে হাসতে বলে,
আমি যা চাই তোমরা তা দেবে?
নিশ্চয়ই দেব।
আমি চাই অনেক খাবার। পথের শিশুদের সেসব খাবার বিতরণ করব।
আর চাও?
খাবার!
কি রবে এত খাবার দিয়ে?
রাতে যে সব কুকররা পথে পথে ঘোরে তাদের কেউ খাবার দেয় না। আমি ওদের খাবার দিতে চাই। কুকুরদের যেন খিদা না লাগে।
বাহ! খুব ভালো। খুব ভালো।
রাক্ষস আর খোক্ষস কি যেন মন্ত্রপাঠ করল বিড়বিড় করে। অমনি প্যাকেট করা খাবার ঝমঝম করে পড়তে লাগল। ঘুমের মধ্যে রাজিনের ঠোঁটে মৃদু হাসির ঝিলিক। ওর কাছে ঈদ এখন মহিমান্বিত হয়ে ওঠে। সকল শিশুর মুখে হাসি ফুটবেÑএর চেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে।