2 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
কবি আল মাহমুদের 'আমি আর অসবোনা বলে' কবিতা থেকে ধার করা হয়েছে 'বাইরে বৃষ্টিার ধোঁয়া' নামটি। ইতিহাস ঐতিহ্য পুরাকাহিনি, পুরোনো শহর দরদালান, রাজা-জমিদারদের ইতিবৃত্ত, পাশ দিয়ে বয়ে চলা প..
TK. 500TK. 375 You Save TK. 125 (25%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
কবি আল মাহমুদের 'আমি আর অসবোনা বলে' কবিতা থেকে ধার করা হয়েছে 'বাইরে বৃষ্টিার ধোঁয়া' নামটি। ইতিহাস ঐতিহ্য পুরাকাহিনি, পুরোনো শহর দরদালান, রাজা-জমিদারদের ইতিবৃত্ত, পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রাকভূমিরূপ নদ ব্রহ্মপুত্রের গতিপ্রকৃতি, উপকথা.. আর ফেলে আসা সেই সময়কে ধারন করা হয়েছে আত্মজীবনীমূলক এ উপন্যাসে।
পূর্বপুরুষের পূণ্যভূমি শেখেরগাঁও। পুরো গ্রামটিই যেন ছায়াস্নিগ্ধ চাদরে মোড়া। নিবিড় মমতায় হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। বাড়ির পাশ দিয়ে নিস্তরঙ্গ খালটি চঞ্চলা কিশোরীর মতো এঁকেবেঁকে চলছে। কিছুদূর এগিয়ে ইটগাঁথা পথটাকে আড়ি দিয়ে সারস পাখির গ্রীবার মতো বাঁদিকে নেমে গেছে ছায়াতরুময় পথ.. স্বপ্নের ভেতরে ফিরে ফিরে আসে সে ছায়াপথ!
এক প্রচণ্ড ঝড়জলের রাতে ফুঁসে ওঠে ব্রহ্মপুত্র। জলের তোড়ে ভেঙে গেছে জেলখানার পাঁচিল। মুহূর্মুহু বাঁশির ফুঁক আর দলেদলে কয়েদিদের পালিয়ে যাওয়া.. ভোরের আলো স্নিগ্ধ হয়ে এলে একটি চিৎকার ভেসে ওঠে বাতাসে। সেই শিশুর বেড়ে উঠার সাথে এগিয়ে চলে আখ্যান..
একবার হারিয়ে গেলো দুরন্ত বোনটি। শহরজুড়ে ঘোষণা দেয়া হলো সন্ধানদাতাকে দেয়া হবে দুই টাকা। পাওয়া গেলে সেই থেকে বহুদিন তাকে ডাকা হতো দুইটাকার বুশরা.. দুইআনা দিয়ে নতুন বাজার বলাইচাঁদের দোকানে বাঁশবেতির ত্রিকোণাকৃতির খাঁচায় পদ্মপাতায় মোড়ানো রসগোল্লার সেই স্বাদ যেন জিভে লেগে আছে.. ঘোড়ার পিঠে করে আনা লাল কুড়ার বিড়ই, কাইশ্যাবিনি চাল- সতেরো টাক মণ.. স্বপ্নের সানুদেশ যেনো.. কিংবা বুড়ার দোকান থেকে দুই পয়সার হজমি নয়তো তেঁতুলের গুল্লি কিনে মুখে দিয়ে বোনদের টাকরায় আওয়াজ তোলা.. গৃহশিক্ষকেদের নিয়ে আজগুবি সব কাণ্ডকারখানা.. সবার পড়াশোনা ঠিকঠাক হলে রাতে নারকেলের চিরল পাতার ফাঁকে ধোঁয়া ধোঁয়া জোন্না উঠলে পশ্চিমের জানালা খুলে মোটা মোটা বই পড়া সেজা'পার গল্প বলা.. কতো যে আনন্দ বেদনার দিনরাত্রি।
বড় ক্যানভাস বলেই একমুখিনতা রেখেও অনেক ঘটনা অনেক চরিত্র.. মুক্তিযোদ্ধা জামিল, আতিক, নিখোঁজ হওয়া আতা, জুতোর মচমচ আওয়াজ তুলে শেক্সপীয়রের হ্যামলেট পড়ানো সুপুরুষটির বিপ্লবের রঙ ধোঁয়াশা হয়ে এলে পড়ন্ত বেলার ধুকপুকুনি.. কিংবা আখ্যান ভাগের শুরুতে ইতিহাস ভূগোল পড়া জ্ঞানঋদ্ধ ধর্মপ্রাণ, নদী ও নিসর্গপ্রেমি মতিমামা.. সাধারণমেয়ে'র আদলে গড়া আপু, "ইস, বেহেশত কতো সুন্দর.." বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার মুহূর্তেও নন্দনবোধ লালিত সম্ভাবনাময় তরুণ মারগুব ভাই.. কার কথা বাদ যায়..!
ঘটনাপ্রবাহ আর চরিত্র চিত্রণের হাত ধরেই আসে ঊনসত্তর, একাত্তরের মহিমাময় দিনগুলো। ঊনসত্তরের উত্তাল দিনে ইপিআরের গুলিতে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল সদ্য কৈশোরকে বিদায় জানানো আলমগীর মনসুর মিন্টু- সে যেনো অলক্ষ্যেই রয়ে গেল! সত্তরের নির্বচন, অসহযোগ আন্দোলন, অবরুদ্ধ দিনগুলো, খণ্ড খণ্ড প্রতিরোধ.. ব্রহ্মপুত্র তীরে এ অঞ্চলের সবচে' বড় কামালপুরের যুদ্ধ ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের জন্য ছিল এক দুঃসহ নাইটমেয়ার.. সেই রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধের তুর্যধ্বনি তুলে ধরা হয়েছে এই ক্যানভাসে।
দ্রব্যবিনিময় প্রথা যখন কড়ি বা কাহন ছিল তখন বিশাল বিস্তৃতির জন্য যার নাম ছিল দশ কাহনীয়া, সেই ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে আজ এইটুকু! কোথায় সেই প্রমত্ত রূপ! যৌবনের ঋদ্ধি.. কোথায় সেই ভেঁপু বাজানো স্টিমার, ডুব দিয়ে পিঠ ভাসানো শুশুক..?
না, রাম তেরি গঙ্গা মৈলি নয়, ব্রহ্মপুত্র মরে গেছে, ময়লা হয়ে গেছে, তারপরও ব্রহ্মপুত্রের কাছে ফিরে ফিরে আসতে হয়..
উপন্যাসটি অনলাইনে ধারাবাহিকভাবে আপলোড করার পর প্রায় প্রতিটি পর্বেই অসংখ্য পাঠক, বিদগ্ধজন পাশে থেকে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। বন্ধু, বিশিষ্ট কথাশিল্পী হুমায়ূন মালিক বইটি প্রকাশের ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন- এগিয়ে এসেছেন জোনাকী প্রকাশনা'র স্বত্বাধিকারী জনাব মোঃ মঞ্জুর হোসেন। তাঁদের কাছে কৃতার্থ।
'ও'-কারান্ত প্রয়োগ বাদ দেয়া এবং' ভাষারীতিতে কোথাও কোথাও পুরোনো গন্ধময় শব্দের ব্যবহার ইচ্ছাকৃত; ক্ল্যাসিক্যাল ফর্মে সেই সময়টাকে ছুঁয়ে ছেন দেখার ইচ্ছেটা পাঠকেরও জাগতে পারে তা-ই।
পরিশেষে বইটি যদি আপনার হৃদয়ে সামান্যতম দোলা দেয় তাতেই এ রচনার সার্থকতা বলে মনে করি। একটি ঐতিহাসিক ও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রামান্য ধারার এই উপন্যাসে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের পরও মুদ্রণ প্রমাদসহ কোন তথ্যগত ভুল থেকেই যেতে পারে- সে ক্ষেত্রে কেউ এগিয়ে এলে নিশ্চয়ই তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা সহায় হোন।