1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
‘হাতাহাতি যুদ্ধ ১৯৭১’ । একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তো হাতাহাতি যুদ্ধ ছিল না। ছিল দুনিয়া কাঁপানো এক যুদ্ধ যেমন ছিল ওয়ার ফিল্ডে তেমন ছিল কূটনৈতিক বিশ্বে। পরাশক্তি আমেরিকা চীন এবং মুসলিম ব..
TK. 200TK. 150 You Save TK. 50 (25%)
Product Specification & Summary
‘হাতাহাতি যুদ্ধ ১৯৭১’ । একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তো হাতাহাতি যুদ্ধ ছিল না। ছিল দুনিয়া কাঁপানো এক যুদ্ধ যেমন ছিল ওয়ার ফিল্ডে তেমন ছিল কূটনৈতিক বিশ্বে। পরাশক্তি আমেরিকা চীন এবং মুসলিম বিশ্বের মুরব্বি সৌদি আরব যা চায়নি তাই সম্ভব হয়েছে বাংলার মাটিতে একাত্তরে। শোনা যেত পাকিস্তানি আর্মি চৌকস বনেদি আর্মি বলে খ্যাত তখন সারা বিশ্বে। সেটা হোক বা না হোক প্রচারটা এরকমই ছিল। সেই আর্মিদের কী না ‘ছেড়াবেড়া’ অবস্থা করে ছাড়লো মুক্তিবাহিনীর ‘বিচ্ছুরা’। কেমন সুড়সুড় করে আত্মসমর্পণ করলেন জেনারেল সাহেব বাঘের সামনে শিয়াল বাবাজীর মতো লেজ গুটিয়ে। সেই যুদ্ধকে রুকুনউদ্দৌলাহ হাতাহাতি যুদ্ধ বললেন কীভাবে! এখানে যে সত্যটা এসে যায় তাহলো এযাবৎকাল মুক্তিযুদ্ধের ওপর যে অগণিত বই লেখা হয়েছে তার মধ্যে এমন একটা নাম এমন একটা ঘটনা বিরল । এখন দেখা যাক লেখক কী লিখেছেন এবং সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দু’একজন কী বলেছেন। “২৪ নভেম্বর গরিবপুরে মুক্তিবাহিনি ও মিত্রবাহিনির সঙ্গে পাকবাহিনির এক ট্যাঙ্ক যুদ্ধ হয়। এই ট্যাঙ্ক যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ১৪টি ট্যাঙ্ক ছিল। যুদ্ধে পাকিস্তানিরা মিত্রবাহিনির ৫টি ট্যাঙ্ক নষ্ট করলেও পাকবাহিনি তাদের সব কটি ট্যাঙ্ক হারায়। এই যুদ্ধ গরিবপুর-সিংহঝুলি মাঠে মুক্তিবাহিনির সাথে পাক বাহিনির সম্মুখ যুদ্ধে অস্ত্র শেষ হয়ে গেলে হাতাহাতিতে রূপ নেয়; যা মল্লযুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনি জয় লাভ করে। আধুনিক অস্ত্রের যুগে বাংলাদেশ তখা আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে এমন হাতাহাতি যুদ্ধ আর হয়নি। অবশেষে ২৭ নভেম্বর চৌগাছা মুক্তিবাহিনির দখলে আসে। পরবর্তীতে ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চৌগাছা শহর মুক্ত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে চৌগাছার ইতিহাস গৌরবোজ্জ্বল” (পৃষ্ঠা ১৭-১৮)। হাতাহাতি যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন জগন্নাথপুর গ্রামের জনাব রেজাউল হক। তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক কাম অফিস সহকারীর চাকরি করতেন। তিনি বলেন, “জগন্নাথপুরের যে আমবাগানে মূল যুদ্ধ হয়, সেটি এখন মুজিবনগর শহিদ সরণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। যুদ্ধের সময় ছিল বড় বড় আমগাছ। মিত্রবাহিনি ও মুক্তিযোদ্ধারা একজোট হয়ে আসে ঈদের দিন দুপুর নাগাদ। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। কপোতাক্ষ নদ ও ঢেঁকিপোতা বাঁওড় পেরিয়ে আসা মিত্র বাহিনির ট্যাংকের মুখোমুখি হয় গরিবপুর থেকে আসা পাকিস্তানি ট্যাংক। চলে অনবরত গোলাগুলি। মিত্রবাহিনি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ছিলো হাজারের বেশি। প্রথমে ট্যাংক থেকে ট্যাংকে গুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু হলেও একসময় ট্যাংকগুলো এত কাছাকাছি এসে যায় যে, আর সামনে এগিয়ে গুলি ছোড়া সম্ভব ছিল না। দু’পক্ষের সৈন্যরা একসময় কাছাকাছি চলে এলে গুলি ছোড়া বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তাতে নিজেদের লোক চিহ্নিত করে শত্রুপক্ষকে গুলি করা কঠিন হয়ে ওঠে। একসময় বেয়নেট দিয়ে চলতে থাকে যুদ্ধ। সবশেষ যখন আরো মুখোমুখি হলো তখন বেয়নেট ফেলে হাতাহাতি চুলোচুলি পর্যন্ত হয়।” (পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪)। জগন্নাথপুরের জনাব তবিবর রহমান ভোলা ওই যুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। এখন তার বয়স সত্তর বছর। তিনি জানান, পিঁয়াজ রোপণের জন্য মাঠে গিয়ে মিত্র ও শত্রু বাহিনির হাতাহাতি যুদ্ধ দেখে বাড়ি চলে আসেন। তারা যুদ্ধক্লান্ত মিত্র বাহিনীকে নারিকেল ও গুড় খেতে দেন (পৃষ্ঠা ৩৬)। জনাব আজিজুর রহমানের বাড়ি উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। তিনি একজন ওই হাতাহাতি যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, “তারিখটা মনে না থাকলেও এতটুকু খেয়াল আছে যে, সেদিন ছিল ঈদুল আজহার দিন। ঈদগাহ মাঠে ইমাম সাহেব বয়ান দিতে উঠেছেন। দু’এক কথা বলেছেনও এরই মধ্যে কেমন একটা শব্দে ঈদগাহের মানুষেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। ইমাম সাহেবের বয়ানের প্রতি সবার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। সবাই উৎসুকভাবে তাকাতে থাকে এদিক সেদিকে। ইমাম সাহেব সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে দ্রুত নামাজ শেষ করেন। সালাম ফেরানোর সাথে সাথে যে যার মতো দৌড়াতে থাকে। সবার গন্তব্য শব্দের দিকে। কাছাকাছি গিয়ে দেখি মিত্র বাহিনির ট্যাংক আসছে। কতথানা চিল গোনার সুযোগ হয়নি। ট্যাংকগুলো এসে জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের চাড়ালের বাগানে অবস্থান নেয়। রাত একরকম নিরাপদে কাটে আমাদের। ভোরে শুরু হয় গোলাগুলি। জাহাঙ্গীরপুর ও জগন্নাথপুরের মানুষ এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। যে যেখানে পারে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। হতাহতদের স্বজনরা বাদে সবাই জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের পাশের গ্রাম ভাদড়ার দিকে দৌড়াতে থাকেন। এসময় তারা মাঠের ভেতর দেখেন হানাদার বাহিনির সবাই দৌড়ে পালাচ্ছে। তখন সকাল ১০টার মতো হবে। পলায়নপর শত্রু বাহিনি এক পর্যায়ে মিত্র বাহিনির মুখোমুখি হলে শুরু হয় হাতাহাতি যুদ্ধ। কেউ গুলি বর্ষণ করছে না। রাইফের দিয়ে পেটাপেটি, একে অপরের চুলের মুঠি ধরে কিল-ঘুষি, চড়-লাথি চলছে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম দু’পক্ষের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা সাবেক আমলের মতো হাতাহাতি বা মল্লযুদ্ধে নেমেছে। বহু মানুষ সেদিনের ওই হাতাহাতি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন” (পৃষ্ঠা ৪০-৪১)। স্থানীয় বহু বাসিন্দা, সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধারাও রয়েছেন এই হাতাহাতি যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বইতে যেটা রয়েছে। চৌগাছার ওই গ্রামের হাতাহাতি যুদ্ধ ছিল বাস্তব এবং একাত্তরের গৌরব গাথার অনন্য একটি অংশ। একে একাত্তরের হাতাহাতি যুদ্ধক্ষেত্র বলে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে এবং সেভাবে স্মরণীয় করে রাখা যেতে পারে। মানুষ জানবে এখানে একাত্তরে কী ঘটেছিল। যেমন আমাদের মহান শহীদ মিনার বলে দেয় মাতৃভাষার জন্য আমরা বায়ান্নতে জীবন দিয়েছি, আমাদের মহান জাতীয় স্মৃতিসৌধ বলে দেয় একাত্তরে আমরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি। তেমন বলে দেবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চৌগাছার জগন্নাথপুরের এ মাঠে আধুনিক সমরাস্ত্রের যুগে হাতাহাতি যুদ্ধ হয়েছিল হানাদার পাকিস্তান বাহিনির সঙ্গে। রুকুনউদ্দৌলাহ বিষয়টি সামনে এনেছেন তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে।