1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
শিল্প পিপাসু বাঙালি মননে মহাভারত এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। মহাভারত আখ্যান অবলম্বনে রচিত কাব্য ও নাটকের পাঠ ও অভিনয় বাংলা ভাষাভাষি জনপদকে বারংবার শিল্প-ঐতিহ্য ভাবনায় করেছে ঋদ্ধ। শুধু ত..
TK. 250TK. 241 You Save TK. 9 (4%)
Product Specification & Summary
শিল্প পিপাসু বাঙালি মননে মহাভারত এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। মহাভারত আখ্যান অবলম্বনে রচিত কাব্য ও নাটকের পাঠ ও অভিনয় বাংলা ভাষাভাষি জনপদকে বারংবার শিল্প-ঐতিহ্য ভাবনায় করেছে ঋদ্ধ। শুধু তাই নয়, বাঙালির সমুচ্চ শিল্প-আকাক্সক্ষা জাগ্রতকরণে মহাভারতের ভূমিকাও অনস্বীকার্য বলা যেতে পারে। হয়তোবা এবংবিধ কারণে এই একবিংশ শতকের অতিমারির কালেও এক অভাজন কবির কাব্যলোকে মহাভারত আখ্যান শিল্পের হিরকদ্যুতি ছড়িয়ে সৃজন করলো অথ গান্ধারী নাম নাট্য-আখ্যান। জয়তু হে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন-জয়তু হে মহাভারত-!
মহাভারত বৃহৎ-বঙ্গ তথা ভারতবর্ষের আদি ঐতিহ্য ও সাহিত্য-সম্পদ। এতদ্বিবেচনায় আদি কবিগণের শিল্প-সৃজনে অমূল্য উপকরণ হিসেবে নিয়ত রসদ সঞ্চার করেছে এই মহাকাব্য। প্রসঙ্গত এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে সংস্কৃত সাহিত্যের আদি নাট্যকার ভাসের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। তিনি মহাভারত আখ্যান আশ্রয়ে মধ্যমব্যায়োগ, দূতবাক্য, দূতঘটোৎকচ, কর্ণভার, ঊরুভঙ্গ প্রভৃতি নাটক রচনা করেন। উত্তরকালে মহাকবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ এবং তদোত্তরকালে ভট্টনারায়ণ কৃত বেণীসংহার বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো মহাভারত আখ্যান-আশ্রিত নাটক। আধুনিককালে কাব্য ও স্বতন্ত্র কবিতার রচনা প্রয়াসে মহাভারত আখ্যানবৃত্ত ও উল্লেখযোগ্য চরিতাবলি উপজীব্যকরণে মহাকবি মধুসূদন প্রচুর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এবং তৎপরে কাব্য ও নাটক রচনায় মহাভারত আখ্যান অনুসরণে রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেন অভিযাত্রিকের ভূমিকা।
অনন্তরে আরও উল্লেখ্যযোগ্য কবি-নাট্যকারগণ মহাভারত আখ্যানকে তাঁদের রচিত কাব্য ও নাটকে উজ্জ্বল দীপ্তি ও গাম্ভীর্যতা প্রদান করেন। সে বিস্তর তালিকা নাই-বা দিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, আলোচ্য আখ্যান-নাট্য সৃজনে এই অভাজন একজন লিপিকরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মাত্র। রাজশেখর বসু অনূদিত মহাভারত, কাশীরাম দাস কৃত মহাভারত, রবীন্দ্রনাথ কৃত গান্ধারীর আবেদন প্রভৃতি কাব্যনিচয়ের অপার অনুগ্রহে এই নাট্যগ্রন্থের কাঠামোতে পূর্ণরূপ ধরেছে। নাট্যের কোনো কোনো বিশেষ আখ্যানরূপেও এঁদের শিল্পকৃতিকে গ্রহণ করা হয়েছে। এতদ্বিবেচনায় এই নাট্য-প্রয়াসকে সম্পাদনা নাট্য বলতে হবে কি-না, তাই ভাবছি। তবে এক্ষেত্রে এও উল্লেখ্য যে, সম্পাদনা নাট্য হয়তো সমকালে একটি শিল্প-প্রকরণ হিসেবেও চিহ্নিত হতে পারে-আমাদের নাট্য পরিভাষায় এর ব্যবহার নিয়েও ভাবছি।
অথ গান্ধারী নাম নাট্য প্রয়াসে মহাভারত-এর কোনো আখ্যান বা উপাখ্যান নয়-বরং পারস্পরিক সাযুজ্যপূর্ণ আখ্যানাবলিকে গ্রহণ করা হয়েছে। এবংবিধ দৃষ্টান্ত আদি কবিগণের রচনাতেও লক্ষণীয়। বিশেষ করে ভাস কৃত অভিষেক নাটক রামায়ণ আখ্যানধৃত কিঙ্কিন্ধ্যাকা-, সুন্দরকা- ও যুদ্ধকা-কে অনুসরণপূর্বক রচিত। মহাকবি মধুসূদন মহাভারত আদিপর্বের বিবিধ অধ্যায়ধৃত সুন্দ-উপসুন্দ কাহিনি অবলম্বনপূর্বক রচনা করেন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য। বর্ণিত গ্রন্থদ্বয়ের রচনা-কৌশলে আদি কবিগণের আখ্যানবৃত্ত সম্পাদনের ইঙ্গিত লভ্য। সে অর্থে বলায় যায়, নবতর শিল্প-প্রকরণে সম্পাদনার ভূমিকা তো অবশ্য স্বীকার্য। বক্ষ্যমাণ নাট্য-প্রকরণ বিশেষ আলাদা কিছু নয় তো বটে।
আলোচ্য নাট্যের সৃজনকল্পে শ্রুতি এবং স্মৃতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা পুরাণ শ্রুতি এবং স্মৃতির অনুগমণে আপনা অস্তিত্বকে করেছে কৃতিময়। অথ গান্ধারী তো পুরাণেরই উৎসজাত-পুরাণ-লিপিকরের প্রবল স্পর্শে মহাভারত’র মৃতনারী-গান্ধারী-আপনা অস্তিত্বের অহংকারে পুনর্বার জেগে ওঠেন সহসা! করোনা-অতিমারির কালে তাঁর এই আবিভাব সার্থক হোক।
বরীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিশিষ্ট সাহিত্য-নাট্য সমালোচক ও শিক্ষাবিদ পূজ্যপাদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার আলোচ্য নাট্যের মুখবন্ধ লিখে আমায় ধন্য করলেন। তাঁকে বাক্যবন্ধ কিংবা ভাষায় নয়¬-বরং অনুভবে কৃতাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি। হে বরেণ্য শিক্ষাবিদ-লিপিকরের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।
এই নাট্য গ্রন্থখানি উৎসর্গ করেছি আমার নিত্য দিনের সংসার সহযাত্রী-স্ত্রী শিমুল তাসনীম এবং আমার দুই আত্মজা-স্বরূপা সুন্দর ও সারথি সুন্দরকে। সংসার অভিযাত্রায় এঁদের আন্তরিক অনুপ্রেরণা আমার শিল্পসৃজনের মূলে সতত সক্রিয় জেনে আমি আনন্দিত। এঁদের সবাকার মঙ্গল হোক। এই নাট্যগ্রন্থের পরিস্ফুটনে রাদ্ধ প্রকাশ সংস্থাকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
পরিশেষে উল্লেখ করছি যে, এপ্রিল-জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দ কালে লেখা এই নাট্য অনেক প্রাণ সংহারের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে কুরুভূমের সংহার-দৃশ্য কল্পে অদৃশ্য আরেক মহাযুদ্ধের অস্তিত্ব অনুভবে আসে। কোথাও সাযুজ্য খুঁজে পাই না-তবে সারা বিশ্বে করোনায় প্রাণের সংহার যেন কুরুযুদ্ধের সমান বিপর্যয়ের চিত্রকথা বলে। হে প্রভু-মুক্তি মিলিবে কি-! হায় মন্দভাগ্যা গান্ধারী-পুরাণের প্রবল প্রাণ-আপনার অলঙ্ঘ্য নিয়তি আমাদেরও খানিক টানছে বটে!