দুই বাংলার খ্যাতিমান ও প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের লেখায় সমৃদ্ধ ছোটদের পত্রিকা কানামাছি, মে ২০২৩ প্রকাশিত হয়েছে।
নিয়মিত বিভাগসমূহ-
ইতিহাস ও ঐতিহ্য, রহস্যময় পৃথিবী, বিজ্ঞানের মজার খেলা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, আমার লেখা প্রিয় বই, বই পরিচিতি, খেলতে শিখি নানান খেলা, স্মরণীয় বরণীয়, ছোটদের বিনোদন, আমাদের ছোট নদী, আমাদের স্কুল, আবিস্কার/বিজ্ঞান প্রজেক্ট, ছড়া/কিশোর কবিতা, গল্প/হরর/থ্রিলার/রূপকথা, ঐতিহাসিক গল্প, সাক্ষাৎকার, অভিভাবকের কলাম, প্রকৃতি ও পরিবেশ, আমাদের ফুল, আমাদের পাখি, আমাদের ফল, আমাদের মাছ,ছোটদের প্রিয় খাবার, ছোটদের প্রিয় খেলনা, সাধারণ জ্ঞান, ফিচার, কৌতুক/ একটু হাসি, তোমাদের পড়া বই, খেলার মাঠে/ লাফঝাঁপ, কমিকস/ ম্যাজিক, আঁকাআঁকি/রঙতুলি- ইত্যাদি নানা বৈচিত্র্যময় আয়োজন নিয়ে কানামাছির এবারের সংখ্যা।
এ সংখ্যার সম্পাদকীয়
শিশুমনের উপযোগী সাহিত্য শিশুসাহিত্য। সাধারণত অনুর্ধ ১৪/১৫ বছর বয়সী শিশুদের মনস্তত্ত্বকে বিবেচনা করে শিশুসাহিত্য রচনা করা হয়। ছড়া, কবিতা, গল্প-সহ শিশুসাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাষাগত সারল্য। রংবাহারী চিত্রের সমাবেশে শিশুসাহিত্য রচনায় মনোরঞ্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তার সাথে বিষয় বৈচিত্র্য নির্বাচনে সৃজনশীল শিক্ষাও থাকে। এতে থাকে কল্পনা, স্বপ্ন, জ্ঞান-বুদ্ধির উপস্থাপনা, রূপকথা, রহস্য আর অতিপ্রাকৃত গল্প। গবেষকদের তথ্যমতে, ১৮১৮ সালে কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত নীতিকথা- নামক গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় শিশুসাহিত্যের গোড়াপত্তন হয়। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখ বিশিষ্টজন শিশু সাহিত্য রচনায় অবদান রাখেন। এরপর রবীন্দ্রযুগের সূচনা শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সাধনায় শিশুপাঠক প্রাধান্য পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার সমকালীন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, সুকুমার রায়, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ শিশু সাহিত্য রচনায় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হাসিরাশি’, দক্ষিণারঞ্জনের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, উপেন্দ্রকিশোরের উপেন্দ্রকিশোরের ‘টুনটুনি’ আমাদের শৈশবের স্মৃতিকে স্মরণ করে দেয়। সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’, ‘পাগলা দাশু’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘ঝিঙেফুল’ ইত্যাদি গ্রন্থ সমগ্র বাংলার শিশুসাহিত্য। সব বয়সের পাঠকের প্রিয়।
বর্তমানে সাধারণ বাঙালি পরিবারের শিশুরা আর সেই শিশু নেই। ‘আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা’ কিংবা ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই’- ফ্লাট বাড়িতে একটি শিশু এই ছড়া শুনে আর বড় হয় না। যুগ পরিবর্তনে সেদিনের হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা আজ বর্ণিল শৈশবহীন, যদিও কিছু অভিভাবকগণ বিষয়টি মানতে নারাজ। শৈশবহীন শিশুরা আজ বড় অসহায়। বর্তমানে পাঠাগারগুলো প্রায় পাঠক শূন্য। মূলত প্রজন্মের হাত ধরেই নতুন পাঠক তৈরি হয়। পাঠক হারিয়ে গেলে সাহিত্য বেঁচে থাকবে কীভাবে? পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ যুগে লেখকদের অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। রাজা রানীর রূপকথা ছেড়ে সময়োপযোগী বিজ্ঞানমনষ্ক সাহিত্য সৃষ্টি করতে হবে। বাস্তবের সাথে সেতু বন্ধনে আরো নতুন নতুন বিষয়বস্তু আয়ত্ত করে নেওয়া খুব জরুরি।