5 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
ভূমিকা
অধিকাংশ বাঙালী কবিই সম্ভবত প্রথম প্রেমে পড়বার পর কবিতা লেখা শুরু করেন। প্রেমের কবিতা দিয়ে কবিতা রচনায় হাতেখড়ি। এদেশের অধিকাংশ বড় বড় কবিরই অতি ব্যক্তিগত জীবনকাহিন..
TK. 300TK. 225 You Save TK. 75 (25%)
Get eBook Version
US $2.76
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
ভূমিকা
অধিকাংশ বাঙালী কবিই সম্ভবত প্রথম প্রেমে পড়বার পর কবিতা লেখা শুরু করেন। প্রেমের কবিতা দিয়ে কবিতা রচনায় হাতেখড়ি। এদেশের অধিকাংশ বড় বড় কবিরই অতি ব্যক্তিগত জীবনকাহিনী আমরা জানতে পারি না। তবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কৈশোর ও প্রথম যৌবনে যে ঠাকুরবাড়ির একজন বিবাহিতা মহিলার প্রেরণায় প্রচুর প্রণয়-কাব্য রচনা করেছেন, সে বিষয়ে এখন আর কোনো সংশয় নেই। নজরুল ইসলাম সাধারণ পাঠকদের কাছে একজন জঙ্গী কবি হিসেবেই পরিচিত, যেন সামাজিক বৈষম্য ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সব সময়ে বিদ্রোহে ব্যস্ত। আসলে তিনি ছিলেন প্রেমিক, বেশ কয়েকবার প্রেমে পতন ও বিরহে কাতর হয়েছেন। দেশাত্মবোধক রচনার চেয়ে তাঁর প্রেমের কবিতা ও গানের সংখ্যা অনেক বেশি।
জীবনানন্দ দাশের কবিতা প্রথম জনপ্রিয় হয় তাঁর ‘বনলতা সেন’ নামের কাব্য-গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর। তার আগে তাঁর একাধিক বই বেরিয়েছিল, প্রেমের কবিতাও লিখেছেন যথেষ্ট। কিন্তু বনলতা সেন এক অভিনব স্বাদ নিয়ে এলো। ইতিহাস-মন্থন-করা এক নারীর কাছে কবি চেয়েছিলেন মাত্র দু’দণ্ডের শান্তি। বৈষ্ণব কবিতার ধারা ধরে রবীন্দ্র প্রণয়-গাঁথার যে সুর, তার আমূল পরিবর্তন হয় তিরিশের দশকে। আর বনলতা সেন কবিতাটিকেই ধরতে হয় ঐ দিক-বদলের চিহ্ন হিসেবে। তিরিশের দশকের প্রধান কবিরা সকলেই প্রেমের কবিতায় নিজস্বতা দেখিয়েছেন। তারপর থেকে আধুনিক কবিরা সকলেই প্রেমের কবিতা রচনায় পরীক্ষা দিয়েছেন।
সব প্রেমের কবিতাই রক্ত-মাংসের, নারী-পুরুষের বিরহ-মিলঘটিত নাও হতে পারে। সম্পূর্ণ অন্য কোনো বিষয়ের কবিতার মধ্যে সামান্য একটা দীর্ঘশ্বাস, কয়েক লহমার জন্য স্মৃতির নীরবতাও বিশেষ তাৎপর্য এনে দিতে পারে। অনেক সময়ই প্রেম শরীরে জড়িয়ে থাকে, আবার শরীর ছেড়ে অন্য এক মাধুর্যলোকে উত্তীর্ণ হয়ে যায়।
বাংলায় যে-সব কাব্য-সংকলন প্রকাশিত হয়, তাতে প্রাচীন কবিদেরই প্রাবল্য, বিগত শতাব্দীগুলির অনেক অপ্রধান কবিদেরও তাতে স্থান হয়। কিন্তু একেবারে সাম্প্রতিক কালের কবিদের রচনা তাতে থাকে না। আধুনিক কালের সীমারেখা টানা হয় খানিকটা পিছিয়ে। মানদ-টা যেন হয় এই যে কালের বিচারে অতি সাম্প্রতিক কবিদের যেহেতু মাপা হয়নি, সেইজন্য কোনো স্থায়ী সংকলনে তাঁদের স্থান দেওয়া যায় না। এই সংকলনটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
এই সংকলনের কিছু কিছু কবির নাম হয়তো পাঠকদের কাছে অপরিচিত মনে হবে। এঁদের কেউ কেউ মাত্রই পাঁচ সাত বছর ধরে লিখছেন, কারুর কারুর কোনো কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়নি এ পর্যন্ত। কিন্তু এঁদের প্রধান যোগ্যতা, এঁরা বাংলা ভাষার সর্বাধুনিক কবি। আমরা জীবনানন্দ দাশ থেকে শুরু করলেও তাঁর সমসাময়িক অনেক কবিকেই গ্রহণ করিনি, কারণ এ কালের বিচারে সেইসব কবিতাকে ম্লান মনে হয়। ফ্রেমে বাঁধানো ফটোগ্রাফের নারীর সঙ্গে চোখের সামনে দাঁড়ানো জীবন্ত যুবতীর যা তফাৎ, সেকালের অনেক প্রেমের কবিতার সঙ্গে একালের প্রেমের কবিতার সেই তুলনা দেওয়া যায়। এই সব কবিতায় রয়েছে টাটকা হৃদয়ের উত্তাপ।
সাম্প্রতিক কালের কবিদের যথাসম্ভব প্রতিনিধিত্ব রাখার চেষ্টা হয়েছে এখানে, তবু দু’একজন বাদ পড়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বাংলা ভাষায় প্রতিনিয়তই নতুন কবিরা এসে যাচ্ছেন। আমাদের এই সংকলনের কাজ শুরু করার পরেও হয়তো কোনো কোনো কবির আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক কবি এখানে আছেন যাঁদের কবিতা আগে কোনো সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার কবিদের আলাদা করে দেখি না। বাংলা ভাষার যাঁরাই ভালো প্রেমের কবিতা লিখেছেন, তাঁদের সকলকে নিয়েই এই সংকলন।
কবিতা নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব নিয়েছেন দীপক রায়। তিনি প্রচুর নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে, সমস্ত কবিদের অধিকাংশ কাব্যগ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকা সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছেন, তারপর আমরা দু’জনে মিলে বসেছি, আলোচনা করেছি, বদলেছি, নতুন কবিতা খুঁজেছি। কোনো কবিতা বা কবি বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমার মতভেদ হয়েছে। কিন্তু তিনি বয়সে অনেক তরুণ বলে অতি সাম্প্রতিক কবিতার বিচারে আমি তাঁর মতটাই প্রায় মেনে নিয়েছি। এই সংকলন গ্রন্থের প্রধান কৃতিত্ব দীপক রায়ের। অন্য কিছু কিছু ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য সুব্রত রুদ্রকেও ধন্যবাদ জানাই। এত বড় একটি কাব্য সংকলন প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছেন যে প্রকাশক, তাঁর দুঃসাহসকেও আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়