বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
اَلْحَمْدُ لِـلّٰـهِ رَبِّ الْـعٰـالَـمِـيْـنَ وَالـصَّـلَاةُ وَالـسَّـلَامُ عَـلٰـى سَـيِـدِّ الْاَوَّلِـيْـنَ وَالْاٰخِـرِيْـنَ مُـحَـمَّـدٍ خَـاتَـمٍ الـنَّـبِـيِّـنَ وَعَـلٰى اٰلِه وَصَحْـبِـهِ اَجْـمَـعِـيْـنَ، اَمَّـا بَـعْـدُ.
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য। যিনি একক, ক্ষমাশীল, পরাক্রমশালী; সবকিছুর পরিকল্পনাকারী ও ব্যবস্থাপক। সৃষ্টিজগতের মাঝে যাকে মনোনীত করেন, তাকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। বান্দাদের মাঝে যাকে নির্বাচন করেন, তাকে নেকলোকদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি দিনের উপর রাতকে আবর্তিত করেন। তিনি যাকে ভালোবাসেন তাকে দুনিয়া থেকে নিরাসক্ত রাখেন। ফলে তারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভে সর্ব শক্তি ব্যয় করতে সক্ষম হয়। আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহর অসন্তুষ্টির বিষয় থেকে দূরে থাকে; দোযখের শাস্তি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে। আল্লাহর আনুগত্যে মনেপ্রাণে চেষ্টা করে। সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর স্মরণে নিয়োজিত থাকে। সর্বাবস্থায়, রাতদিনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে। ফলে নুরের রোশনীতে তাদের হৃদয় আলোকিত হয়।
আমি সেই মহান প্রভুর কাছে শোকর আদায় করছি; আমি প্রশংসা করি তাঁর সকল নেয়ামতের। আমি তাঁর কাছে আরো দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, অমুখাপেক্ষী, পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহর প্রিয় হাবিব ও বন্ধু। সৃষ্টিজগতের মাঝে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। সকল মাখলুকের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক তাঁর উপর ও সকল নবিগণের উপর। সকলের পরিবারবর্গ ও সকল নেককারদের উপর।
আম্মা বা’আদ, পরাক্রশালী, প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَاذْ كُرُوْنِيْ أَذْكُرْكُمْ
অর্থ : তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।
তিনি আরো বলেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ ـ ـ
অর্থ : আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
এ দ্বারা বুঝা গেল যে, বান্দার শ্রেষ্ঠ অবস্থা হলো, যখন সে আল্লাহর যিকির করে; আল্লাহকে স্মরণ করে, রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত যিকির-আযকারে মাশগুল থাকে।
তবে আমি এখানে সনদের পরিবর্তে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করব, যদ্দারা অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেটি হলো, হাদিসের হুকুম- যে হাদিসটি সহিহ, হাসান, যাঈফ না কি মুনকার। কারণ, এ বিষয়টি সকলেরই প্রয়োজন। অবশ্য বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের এগুলোর প্রয়োজন নেই, যাদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
হাদিসের হুকুম জানা অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ফলে পাঠকের কাছে হাদিস বিশারদ ও অনুসৃত বিজ্ঞ ইমামগণের বক্তব্য জানা হয়ে যাবে।
আমি এর সঙ্গে ইলমুল হাদিসের সুন্দর সুন্দর বিষয়, ইলমুল ফিকহের বিষয়, নিয়ম-নীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আত্মশুদ্ধি ও আদব-কায়দার বিষয়গুলো উল্লেখ করব, যেগুলো জানা হেদায়েতের পথের পথিকের জন্য খুবই জরুরি। এ সবই আমি ¯পষ্টভাবে উল্লেখ করব, যাতে সাধারণ মানুষ ও জ্ঞানীদের বুঝা সহজ হয়। সহিহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنْ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُوْرٍ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا.
অর্থ : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন-যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথে মানুষকে ডাকে সে ব্যক্তি তার ডাকে সাড়াদানকারীদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। এটা অনুসারীদের সওয়াবে কোনো কমতি সৃষ্টি করবে না।
তাই আমি আমলকারীদের পথ সহজকরণে ও তাদের পথের দিশা দিয়ে তাদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা করেছি। আমি কিতাবের শুরুতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এনেছি, যেগুলো এ কিতাবের পাঠকসহ সকল আগ্রহী ব্যক্তির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এ কিতাবে আমি প্রসিদ্ধ পাঁচ কিতাব- সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি এবং সুনানে নাসাঈ থেকেই বেশি হাদিস নিয়েছি। তবে কখনো কখনো অন্যান্য প্রসিদ্ধ ও অপ্রসিদ্ধ কিতাব থেকেও হাদিস নিয়েছি।
অত্রগ্রন্থে দুর্বল হাদিস উল্লেখ করিনি, করলেও তার দুর্বল হওয়ার বিষয়টি বলে দিয়েছি। এখানে আমি বেশিরভাগই সহিহ হাদিস উল্লেখ করেছি। তাই আমি আশা রাখি, এটি একটি নির্ভরযোগ্য ও মৌলিক কিতাব হবে। প্রত্যেক অধ্যায়ে আমি সেসব হাদিসই এনেছি, যেগুলো সে অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়কে সু¯পষ্টভাবে বুঝায়।
মহান আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফিক ও সাহায্য চাই। হেদায়াত ও সরল পথের দিশা কামনা করি। আমি যে কাজের ইচ্ছা করেছি তার সহজতা চাই। কল্যাণকর কাজে সর্বদা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাই। জান্নাতে আমার প্রিয় ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকতে চাই। আর আমি আল্লাহর কাছে সকল আনন্দের বিষয় কামনা করি।
আল্লাহ তাআলাই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তি-সামর্থ্য নেই। আমি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করছি। আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় কামনা করছি। আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাচ্ছি। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে আমানত রাখছি’ আমার দ্বীন ও আমার সত্তা, আমার সকল শুভাকাক্সক্ষী, সকল মুসলমানকে। আর তিনি তো উত্তম হেফাজতকারী।
ইমাম আবু বকর ইয়াহইয়া বিন
শারাফ আন-নববী আদ-দিমাশকি (রহ.)