24 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"মহাপুরুষ" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ
মহাকালের গর্ভে এক এক করে ১৬টি বছর বিলীন হয়ে গেছে। অথচ বলতে গেলে সেদিনের কথা মাত্র। সবকিছুই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসছে। তার..
TK. 200TK. 150 You Save TK. 50 (25%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"মহাপুরুষ" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ
মহাকালের গর্ভে এক এক করে ১৬টি বছর বিলীন হয়ে গেছে। অথচ বলতে গেলে সেদিনের কথা মাত্র। সবকিছুই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসছে। তারিখটা ছিল ১৯৭৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর। পরদিন বছরের শেষ। নতুন কর্মক্ষেত্র লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যােগদানের জন্য রওনা হওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছি। নির্দেশ মতাে দেশ ত্যাগের প্রাক্কালে ঢাকার ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বর রােডের সেই ঐতিহাসিক বাড়িতে নির্ধারিত সময়ে গিয়ে হাজির হলাম। ভেবেছিলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক বিদায় পর্ব।
সেদিন বাড়িটাতে চুনকাম হচ্ছিল। তাই দুপুরে খাবার পর বিশ্রামের জন্য উনি ছিলেন শেখ হাসিনার কামরায়। আমাকে দেখেই দরজা বন্ধ করার ইশারা দিলেন। উনি বিছানায় শুয়ে। তার ডান হাত আমার দু'হাতের ভেতরে। আমি তখন বাকরুদ্ধ ; নিঃশব্দে ক্রন্দনরত। ১৯৭২-এর জানুয়ারী থেকে ১৯৭৪-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরা তিনটা বছর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আমি ছায়ার মতাে তার পিছনে অনুসরণ করেছি। কিন্তু এখন বিদায়ের পালা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে বঙ্গবন্ধু এক নাগাড়ে কথাবার্তা বললেন। মাঝে-মধ্যে উপদেশ। শক্ৰমিত্র চিহ্নিত করে তিনি অনেক গােপন ঘটনার উপর আলােকপাত করলেন। আমি নিবিষ্ট মনে শুনলাম। অজানা আশঙ্কায় চমকে উঠলাম।
এটা এমন একটা সময় যখন নিক্সন-কিসিঞ্জারের নেতৃত্বে মার্কিন প্রশাসনের কারসাজিতে বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে কুড়িগ্রামে একটা দুর্ভিক্ষ হয়ে গেছে।
এটা এমন একটা সময় যখন পাক-মার্কিন সৌদী চাপ এবং স্থানীয় সংবাদপত্র ও আমলাতন্ত্রের সুপারিশে (নরহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নি সংযােগের অপরাধ ছাড়া) অন্যান্য পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্থগিত, স্বাধীনতাবিরােধী রাজনীতিবিদরা কারামুক্ত এবং কোলাবরেটর অফিসাররা চাকুরীর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে পুনর্বাসিত হয়ে গেছে। এটা এমন একটা সময় যখন নব্যসৃষ্ট উচ্চ মধ্যবিত্ত আর বুদ্ধিজীবী শ্রেণী (জনাকয়েককে বাধা দিয়ে) সর্বভূক অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সরকারের কাছ থেকে আরাে সুবিধা লাভের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় সমালােচনা মুখর হয়ে উঠেছে।
এটা এমন একটা সময় যখন মুক্তিযুদ্ধকালীন অতিবাম আর ধর্মান্ধ দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে অশুভ যােগসাজশ হয়ে গেছে। বিদায় মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু হঠাৎ করে বললেন, মুকুল, তুই মুকুলই রয়ে গেলি। তুই আর ফুটলি না। তুই যখন দেশে ফিরবি, তখন হয়তাে আমি আর এই দুনিয়ায় থাকবাে না। আমার রাজনীতি আর জীবন সম্পর্কে অনেকেই লিখবে। কিন্তু তোকেও লিখতে হবে। ১৯৪৬ সালে সেই কোলকাতা থেকেই তুই আমাকে ভালােভাবে চিনিস। আমাকে কাছে থেকে তুই বরাবরই দেখে এসেছিস। তুই তাে আবার অনেকদিন সাংবাদিকতাও করেছিস। তুই-ই পারবি লিখতে। শােন, আমার সম্পর্কে তাের লেখা বই কিন্তু খুব বিক্রী হবে। আমার দোয়া রইলাে।
আমি কথা রেখেছি। ১৯৭৬ সালে সুদূর লন্ডনে আমার ভয়ঙ্কর নির্বাসিত জীবন। এবছর লন্ডনের কনওয়ে হলে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমার প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর বই মুজিবের রক্ত লাল। তখন থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর বাঙালী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ক্রমাগতভাবে লিখে যাচ্ছি। লেখায় কোনাে কমতি নেই।
আমার জীবন ধন্য। কেননা, পাঠক সমাজে আমার লেখা বইগুলাের দারুণ চাহিদা। তাই ১৯৯১ সালে আমার রচিত অন্যতম বই হচ্ছে বংশ পরিচয়সহ জাতির পিতা এবং বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী গ্রন্থ। সঙ্গত কারণেই নামকরণ করেছি মহাপুরুষ’। আশা করি এই বইটি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাড়া জাগাতে সক্ষম হবে।