15 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"বাঙালি নারী: সাহিত্যে ও সমাজে" বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ
প্রায় ২৪০০ বছর এবং যােজন যােজন ব্যবধানের দুই সাহিত্যস্রষ্টার সৃষ্ট দুই চরিত্রের কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে ওপ..
TK. 200TK. 150 You Save TK. 50 (25%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"বাঙালি নারী: সাহিত্যে ও সমাজে" বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ
প্রায় ২৪০০ বছর এবং যােজন যােজন ব্যবধানের দুই সাহিত্যস্রষ্টার সৃষ্ট দুই চরিত্রের কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে ওপরে। নারী সম্পর্কে কতই না উক্তি করা হয়েছে এতকাল ধরে। নারী একই সঙ্গে প্রকৃতির ফুল ও ভুল; বিধাতার দ্বিতীয় ভ্রান্তি; শুধু বিধাতার সৃষ্টি নয়, আপন অন্তরের সৌন্দর্য দিয়ে পুরুষের গড়া। নারী প্রতিযােগিতাপ্রিয়, প্রতিশােধপরায়ণ, ধ্বংসাত্মক; প্রেরণা দেয় বটে, সর্বনাশও ডেকে আনে, তাই সে হলাে নরকের দ্বার। সে সজ্জাপ্রিয়, সম্পদানুরাগী, বিস্মৃতিপরায়ণ। অবলা নারী কথা বলে বিস্তর, তাও অনর্থক। সে অপ্রিয়বাদিনী, ছলনাময়ী, দুর্বলচিত্ত। রহস্যময়ী—দুর্বলতাই তার শক্তি; দুর্বোধ্য—কেননা সে যা বলে তা বােঝায় না। তার রয়েছে হৃদয়বত্তা, প্রেমসর্বস্বতা; সে ভালােবাসে প্রবলভাবে, ঘৃণাও করে চরমভাবে। সে যুক্তি মানে না, বুদ্ধিপ্রয়ােগে কুণ্ঠিত, আবার নিজের রূপ ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসায় তুষ্ট। সে সৌন্দর্যের সার, তার চরণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই আনন্দ। তার মুখের একটা তিলের জন্যে সুন্দর সুন্দর শহর বিলিয়ে দেওয়া যায়। বলা বাহুল্য, এ সবই পুরুষের উক্তি। নারী যখন নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে পেরেছে, তখন সে এঁকেছে ভিন্ন মূর্তি।
ইতিহাসে নারীর আরাে এক পরিচয় আছে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে তার আধিপত্য ছিল, সমাজের অর্থনৈতিক জীবনে ছিল তার ভূমিকার প্রাধান্য। পিতৃতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরে নারীর নিয়ন্ত্রণ গেল পুরুষের হাতে—তার ভূমিকা অনেকখানি পালটে গেল। সংসার করা ও সন্তানপালন করার পাশাপাশি কোনাে এককালে নারীর অংশীদারিত্ব ছিল কৃষিকর্মে। তারপর যখন তার স্থান হলাে গৃহকোণে, তখন সে গড়ে তুললাে কুটির শিল্প। সেই শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা কমে এলে সে ফিরে এসেছে কৃষিতে, কিন্তু এবারে সহায়কের ভূমিকায়। কলকারখানার বিকাশের সঙ্গে সে কাজ করেছে অল্প মজুরিতে। রক্ষিতা হয়ে থেকেছে, পতিতাবৃত্তি মেনে নিয়েছে।
এর পাশাপাশি দেখছি আরেক শ্রেণীর নারী—জীবনধারণের জন্যে যাদের কোনাে বৃত্তি অবলম্বন করতে হয় নি। সংসারের কাজ, এমন কি সন্তানপালনও, তার কাছে যথেষ্ট সম্মানজনক মনে হয় নি—এসব কাজের ভার পড়েছে ভৃত্য বা দাসীর ওপরে। ফলে তারা ভােগ করেছে প্রচুর অবসর—এত প্রচুর যে তা নিয়ে। সে কী করবে, তা ভেবে পায় নি। এই অবসরে কেউ কেউ আত্মনিয়ােগ করেছে সৃষ্টিশীল কাজে : সাহিত্য-দর্শন, সংগীত-চিত্রকলা, ভাস্কর্য-স্থাপত্যে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। ধীরে ধীরে সমাজ ও সংসারে নিজের অবস্থা উপলব্ধি করেছে, নারী—তখন সে মাথা উঁচু করে তুলতে চেয়েছে।
সে দাবি করেছে নিজের অধিকার—পারিবারিক মর্যাদার, সামাজিক সম্মানের, ভােটের। সে চেয়েছে পুরুষের সমকক্ষতা-জীবিকা গ্রহণ করেছে পুরুষের মতােই, দাবি করেছে পুরুষের সমকক্ষতা। রাজনৈতিক আন্দোলনে যােগ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, দেশ চালিয়েছে। ধরণীর এক কোণে এই বঙ্গদেশে নারীর ক্রমবিকাশের ইতিহাস আমাদের স্পষ্ট জানা নেই। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলিতে বাঙালি নারী সম্পর্কে কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে, ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের কাজটি করা হয় নি। তার বড়াে কারণ ব্যাখ্যা করতে পারি এই রচনার ইতিহাস দিয়ে।