13 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
অন্ধকার রাত! বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি। টিনের চাল। বৃষ্টির ছন্দ অন্তর ছুঁয়ে যায়। সঙ্গে হালকা বাতাস। শীত আসছি আসছি করছে। নরোম করে পর্দা দুলছে। শীতের কোমল আদর বাতাসের উসকানি পেয়ে মাঝে মধ্য..
TK. 280TK. 182 You Save TK. 98 (35%)
In Stock (only 2 copies left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
অন্ধকার রাত! বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি। টিনের চাল। বৃষ্টির ছন্দ অন্তর ছুঁয়ে যায়। সঙ্গে হালকা বাতাস। শীত আসছি আসছি করছে। নরোম করে পর্দা দুলছে। শীতের কোমল আদর বাতাসের উসকানি পেয়ে মাঝে মধ্যেই খাড়া করে তুলছে শরীরের লোমগুলো। আমরা ক’জন বন্ধু হালকা কাঁথা জড়িয়ে গল্প করছি।
সম্ভবত সেটা ১৯৯০ সাল।
এমন বৃষ্টিকাতর পরিবেশে সবচে’ ভালো জমে ভূতের গল্প। হয়তো পরিবেশের টানেই ভূতেরা গল্প হয়ে হাজির হয় আমাদের মাঝে। ভূত আর আমরা মিলে তখন হারিয়ে যাই এক অচেনা জগতে। কিন্তু এসব আসরের বিপদ হলো, এক তরফা শ্রোতা হবার সুযোগ খুব কম। ফলে বাধ্য হয়েই গল্প বলতে হয়। সে সুবাদেই আমিও বাধ্য হয়ে বলতে শুরু করলাম-
আমার এক শিক্ষকের কাছে শুনেছি। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থেকে কচুয়া যেতে এক সময় বিরাট একটা হাওর অঞ্চলের মত ছিল। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ। বর্ষায় জল থইথই সমুদ্র। মাঝে বিশেষ পথঘাটও নেই। সন্ধ্যার পর এই দিকে কেউ পা বাড়াত না।
এই জলাভূমির মাঝখানে ছিল একটি বটগাছ। মানুষ এটাকে ভূতের বাড়ি বলেই বিশ্বাস করতো। তাই কোন কারণে এ পথে যেতে হলে বিকেল গড়িয়ে গেলে চেষ্টা করতো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বটগাছটা ছাড়িয়ে যেতে।
একবার এক মাওলানা সাহেব পড়লেন বিপাকে। তিনি সন্ধ্যার পর এসে নেমেছেন গাড়ি থেকে। বাড়ি যাবার একমাত্র পথ এই জলাঞ্চল। নামায পড়ে সাহস করে নেমে পড়লেন হক নাম ভরসা করে। হাঁটছেন। দোয়া-দরূদ পড়ছেন। কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটার পেটে চাপ দিয়ে পরখ করছেন- সঙ্গে আনা ছুরিটা আছে তো? আছে।
জিন-ভূত সম্পর্কে তার বিদ্যা-বুদ্ধি কিছু আছে। মন্ত্র বলতে সাহস- সেটাও আছে। ওই তো বটগাছটা দেখা যায়। কানটা খাড়া রাখতে হবে। হ্যাঁ, একটা মিহি আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আওয়াজের টানে কি রাতটা আরও কালো হচ্ছে? যত্তোসব বাজে চিন্তা! দেখা যাক কি হয়!
ব্যাপারটা একেবারে অমূলক নয়। আওয়াজটা বাড়ছে। একটা ছাগল কাঁদছে বোধ হয়। ছাগলটাকে কি কেউ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে? তাই তো মনে হচ্ছে। মাথাটা নীচের দিকে!
না, গাছটার নীচ দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। জমির আইল ঘুরে খানিকটা দূর দিয়ে হাঁটতে লাগলেন মাওলানা সাহেব। কী আশ্চর্য! ছাগলটা কাঁদছে না। হঠাৎ লক্ষ করলেন একটা সাদা বিড়াল তার পা ঘেষে হাঁটছে। কী ভয়ানক! এই বিশাল বিলে বিড়াল এলো কোত্থেকে! হায় খোদা! বিড়াল দুটি! চোখের পলকে বিড়াল দুটি গায়েব। দশ কদম সামনে একটি কালো কুকুর। পাশাপাশি শাঁ শাঁ করে হাঁটছে। ভালো তেলেসমাতি দেখি!
মাওলানা সাহেব হাঁটছেন। এখানে ‘ভয়’ পাওয়া যাবে না- নিজেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কুকুরটাতো সামনেই। পায়ের কাছে কি? ছাগল? কুচকুচে কালো ছাগল। সেই কান্না কান্না ডাক। পারে না পা জড়িয়ে ধরে। এবার মাওলানা সাহেব একটু শক্ত হলেন। ছাগলটাকে চোখে চোখে রাখছেন আর দ্রুত হাঁটছেন। কারণ জিনেরা নাকি চোখের সামনে ‘রূপ’ বদল করতে পারে না।
কিছু পথ হাঁটার পর পেছনের দিকে তাকালেন। দেখলেন- না, ভূতের বাড়ি বটগাছটা অনেক পেছনে। শরীরটা হালকা মনে হলো। পাশাপাশি পা ঘেষে ছাগলটা এখনো হাঁটছে। কুকুরটা কোথায়? নেই! এই তো চান্স। খপ করে কসাই ভঙ্গিতে ধরে ফেললেন ছাগলটাকে। ম্যা ম্যা...
‘চুপ, কোন কথা নেই।’ শাসালেন কড়া সুরে। দ্রুত ব্যাগ থেকে ছুরিটা বের করে আনলেন। পা চারটা দুই পায়ে চেপে ধরে- বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার...
: কী, জবাই করে ফেলল?
: জবাই করে ফেলল!
: মানে জিনটাকে?
: না, ছাগলটাকে!
: ওই তো। ওটাতো জিনই।
: জিনের বাবা হোক তাতে কি!
: তারপর, তারপর?: তারপর তো সোজা...
: সোজা মানে, একটা জিন খুন করে মাওলানা সাহেব বেঁচে গেলেন?
: বেঁচে গেলেন মানে? সোজা ছাগল কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিলেন।
: আচ্ছা, তারপর...
: মাওলানা সাহেবের বাড়ির পাশেই এক নেহাত গরীব মানুষ। তিনি তাকে গিয়ে ডেকে তুললেন। বললেন, পথে একটি ছাগল পেয়েছি। জীবিত। মালিক নেই। জবাই করে নিয়ে এসেছি। রান্না করে খেয়ে ফেল। কেউ দাবী করলে আমার কথা বলো। দাম দিয়ে দেব!
: হায় আল্লাহ! তারপর কেউ এলো?
: আজ পর্যন্ত আসেনি।
ভাগ্নে আমীনুর রহমান বলল, মামা! ভয় লাগতেছে!
বললাম, ভয় কি? জিন তো খেয়েই ফেলেছে!