19 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"মহানায়ক নেতাজী" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
যে সকল ব্যক্তির আত্মত্যাগের ফলে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। তিনি ভারত মুক্তির সর..
TK. 500TK. 375 You Save TK. 125 (25%)
Product Specification & Summary
"মহানায়ক নেতাজী" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
যে সকল ব্যক্তির আত্মত্যাগের ফলে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। তিনি ভারত মুক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ যােদ্ধা এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী। যে ক’জন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের কর্মের মাধ্যমে অপরিসীম ঔৎসুক্য ও কৌতুহলের সঞ্চার করেছেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাদের মধ্যে সর্বাগ্রগন্য। নেতাজীর অভূতপূর্ব তেজস্বী ব্যক্তিত্বে এবং আত্মত্যাগের চরম দৃষ্টান্তে উজ্জ্বল ছিলাে তার সমস্ত জীবন। যা অসম্ভব, যা স্বপ্ন, তাকে বাস্তবে রূপ দেয়াই হচ্ছে মহাপুরুষদের কাজ। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সেই অসম্ভব ও সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। বন্ধুরতা ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি স্থাপন করেছেন এক অনন্য ইতিহাস যা চিরকাল সাহসী মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে এই পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন সামাজ্যবাদী ইংরেজকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিতাড়িত করে স্বাধীন ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠা করবেন, যা পরিচালিত হবে ন্যায়, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অম্লান আদর্শের ভিত্তিতে। তাই তিনি সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং রক্ত দিয়েছেন মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য। নেতাজী ও তার অনুসারীদের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড, আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম, সর্বশেষ ফৌজের সদস্যদের বিচারের সময় ভারতব্যাপী গণঅভ্যুত্থান ও সেনাবিদ্রোহ ভারতের মুক্তি আন্দোলনকে গতিশীল করে স্বাধীনতা দোরগােড়ে পৌছে দেয়। পরিণামে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ১৯৪৭ সালের মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। যারা সংগ্রাম করলেন না, কারাবাস করলেন না; যুদ্ধ করলেন না, না দিলেন রক্ত-তারা। রাতারাতি হয়ে গেলেন জাতীয় বীর ও মহাপুরুষ। শুধু তাই নয়, তারা শুরু করে দিলেন সত্যের অপলাপ ও সৃষ্টি করলেন বিকৃত ইতিহাস। ভারতের এই তথাকথিত মহানায়কেরা সেদিন সুভাষের ন্যায্য প্রাপ্য ও ন্যায্য দাবীর পথরােধ করে দাঁড়িয়েছিলেন। সত্য ইতিহাসকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে অসত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিলেন। স্বাধীনতার সংগ্রামে যারা দিলেন প্রাণ, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও অনুলনীয় বীরত্বের মাধ্যমে যারা ভারতবর্ষকে করলেন স্বাধীন, তাদেরই মুছে ফেলতে চাইলেন ইতিহাসের পাতা থেকে সেই তথাকথিত নায়কেরা। অর্ধ পৃথিবীর মানুষ তাকে সম্মান করতাে, বাকি অর্ধ তার ভয়ে ছিলাে থরহরি কম্পমান।
জাপানের রাষ্ট্রনায়কেরা তাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তারা নেতাজীকে বিশ্বের, বিশেষ করে ইউরােপ বিষয়ক একজন অথরিটি মনে করতেন। জার্মান ও ইতালীর রাষ্ট্রনায়কেরা তাকে এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের সাথে সম্মান করতেন। আয়ারল্যান্ডের নেতা ডি ভ্যালেরা ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে সুভাষ চন্দ্র বসুকে বিরােচিত সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মণীষী রােমারােলা তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ড. পিবুল সংগ্ৰাম বলেছিলেন, “বুদ্ধের পাশে বসিবার একটিমাত্র লােকই আমার চোখে পড়েছে-নেতাজী বােস। একজন পরিপূর্ণ নিটোল মানুষ। সর্বকালের আচার্য এ মানুষকে অনুগমন করে তৃপ্তি আছে। সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নেতাজীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির কথা অনেক বারই উচ্চারণ করেছেন; মালয়, সিঙ্গাপুর ও বার্মার জনগণ নেতাজীকে দেবতা জ্ঞান করে। অথচ নিজ দেশে, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করলেন, সেই দেশে তিনি রয়ে গেলেন উপেক্ষিত ও অবমূল্যায়িত। স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রত্যেকটা অংশেই স্বাধীনতার ইতিহাস রচিত হয়েছে। অথচ হাসিমুখে যারা দিয়ে গেলেন প্রাণ, বুকের রক্ত দিয়ে যারা মাতৃভূমিকে করলেন স্বাধীন, সেই হতভাগ্যদের বীরত্বের কাহিনী কোথাও স্থান পেল না। সেই বীরত্ব ও জীবনদানের গৌরব ভারত থেকে বহুদূরে মুছে গেলাে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই। কিন্তু ইতিহাসের অমােঘ নিয়মে সত্য একদিন জাগ্রত হবেই। নেতাজীর সেই অকৃত্রিম দেশপ্রেম, স্বাধীন চিন্তা, অপরিসীম ব্যক্তিত্ব ও মৃত্যুঞ্জয়ী পণ এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সেই বীরগাঁথা অম্লান হয়ে থাকবে, গেঁথে থাকবে মানুষের অন্তরে। আমাদের সমাজ জীবন আজ বিপর্যস্ত। দেশ ও সমাজ আজ যখন আত্মকেন্দ্রিকতার নীতিতে বিহ্বল, তখন নেতাজীর জীবনাদর্শ, তার আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও অকৃত্রিম নিষ্ঠায় উজ্জ্বল আমাদের দেশের সেই অতীত অবশ্যই দেশের এই বিভ্রান্ত জনসাধারণকে আলাের পথ দেখাবে এবং সেই অগ্নিহােত্রীদের কথা স্মরণ করে বর্তমান কালের তরুণ-তরুণী তাদের সঠিক পথের সন্ধান পাবে বলে আমি মনে করি। আত্মবলিদানের প্রয়ােজনীয়তা যেদিন আর যখনই অনিবার্য হয়ে দেখা দেবে, তখন আর কারাে কথা জাতি মনে রাখবে না-জাগবে শুধু একটি মাত্র অমিতবীর্য পুরুষ প্রধানের নাম; যে কোনদিন মাথা নােয়ালাে না, হার মানলাে না, আপােষ করতে রাজি হলাে না। গবেষণামূলক ও তথ্যসমৃদ্ধ জীবনীগ্রন্থ আমার পক্ষে রচনা করা সম্ভব হয়নি। সহজ ও সরল ভাষায় সাধারণের বােঝার উপযােগী করে নেতাজীর জীবনের অনেক দুর্লভ ছবি সহকারে ছােট আকারে গ্রন্থখানি পাঠকদের সামনে তুলে ধরলাম। আমি মনে করি এখান থেকে পাঠকগণ নেতাজী সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য পাবেন, যা পাঠক ও জনগণকে নেতাজী সম্পর্কে অনুপ্রেরণা জোগাবে।