Category:রোমান্টিক কবিতা
কাব্যরচনা এক দিব্য উন্মাদনা আর কবি দিব্য উন্মাদ। তারা নিত্য ভূতগ্রস্ত। কল্পনা আর ভাবের আতিশয্যে মোহমুগ্ধ..
কাব্যরচনা এক দিব্য উন্মাদনা আর কবি দিব্য উন্মাদ। তারা নিত্য ভূতগ্রস্ত। কল্পনা আর ভাবের আতিশয্যে মোহমুগ্ধ হয়ে এমনসব ছাঁইপাশ রচনা করেন যা বাস্তব জগৎ সংসারের সাথে কোনপ্রকার সংযোগ সংস্পর্শ নেই। বরং সাধারণ মানুষকে তা বিভ্রান্ত করে। আর এজন্যই প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের ঠাঁই নেই বরং তিনি কবিদের নির্বাসিত করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় প্লেটো বোধহয় কবি ও কবিতাকে ঠিকঠাক সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারেননি কেননা কবি সহজ নন আর কবিতা আরো কঠিন। বাস্তবে সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, দর্শন, নীতি, নৈতিকতা, পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রেম, ভালোবাসা, ঈশ্বর ও মানুষ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি কবিদের মতন কেউই নিখুঁত উপলব্ধি করতে পারেন না। একমাত্র কবিরাই কোনোরকম প্রত্যাশা না রেখে গনগনে আগুনে হৃদয় নিংড়ে সবটুকু উপলব্ধি করতে পারেন কোথায় কতটা জীবন কতটুকু জীবন। আর জীবন জুড়ে মানুষের অদমনীয় ইচ্ছা–আশা–আকাঙ্ক্ষা, প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি, সুখ–দুঃখ, হাসি–কান্না, প্রেম–ভালোবাসার অনাবিল শুদ্ধতার চরম বহিঃপ্রকাশ কবি ও কবিতা। যা আদর্শ না হোক মানুষকে শেখায় মানবতা—প্রেম।
‘জল ছুঁই তোমাকে’ এরকমই একটি কাব্যগ্রন্থ। কিন্তু আসলেই চাইলেই কি ছোঁয়া যায়— স্পর্শ তো অনুভবে। অথবা এই যে ছোঁয়াছুঁয়ির ব্যাপার ‘জলে থেকেও জল ছোঁব না আর স্তব্ধতা দিয়ে নিঃশব্দকে ছোঁব’ তখন মনে হয় সত্যিই যেন সমস্ত সংশয়— নৈরাশ্য— হতাশা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে মানুষকে নিয়ে যায় অসীম শূন্যতায়। জীবনের সব প্রাপ্তিকেই তখন অপ্রাপ্তিতেই গড়িয়ে দেয় আর সমস্তকিছুই মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তখন না চাইলেও নীরবে নিঃশব্দে দুই চোখের অশ্রু জল হয়ে ছুঁয়ে যায়। জলকে আর ছুঁতে হয় না। কেননা সময়েরও নিজস্ব একটা শক্তি আছে অনেককিছুই সে বদলিয়ে দেয় ভিতরে বাহিরে অথবা বদল করিয়ে নেয়। যেমন সময়ের সাথে ঋতু বদলায় জীবন বদলায় আবার কারোর ভালো থাকাও বদলায়। আর এই বদলের নামই জীবন। ঘর পুরনো হলে পলেস্তারা খসে পড়েই। প্রেমের চিরন্তন রূপ— না পাওয়া। কিন্তু তাকে পাবার জন্য যে আকুলতা— আর্তি আবার পাবার যে ভয় এই দুইয়ের মিশ্রণেই প্রেমিক হৃদয় ছটফট করতে থাকে। আর এই ছটফটানিই সত্যিকারের প্রেম যা আগ্নেয়গিরির বুদ্বুদের মতো সারাক্ষণ বুকের মাঝে ধুকপুক করে চলে।
‘ ‘জল ছুঁই তোমাকে’ একটি নিরেট প্রেমের কাব্য। কবি যেন সদ্য প্রেমের গনগনে আগুনে স্নান করে শুদ্ধ হয়েছেন। তাই কবিতায় প্রেম হয়ে উঠেছে স্বচ্ছ— নিষ্কলুষ— নির্মল। কবির কোনো ক্ষোভ নেই কোনো জিঘাংসা নেই শুধু আছে সত্যিকার প্রেমের জন্য সত্যিকারের আবেগ— ছটফটানি। আর আছে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের জীবনের সহজাত প্রবৃত্তি— তাই কবি খুব সহজেই বলতে পারেন ‘মানুষ তো কেবল হৃদয়ে ভালোবাসা নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে চায়।’ কিন্তু কবি পরমুহূর্তেই ফের টের পান সেই অমোঘ পরিণতি যে পৃথিবীর বিরূপ পথে মানুষের কখনো তা আর করা হয়ে ওঠে না ‘বুকের পাঁজরে তাকে জড়িয়ে রেখেও অন্তরে অন্তরে কিছুটা দূরত্ব সকলে পুষে।’ তবুও কবি শুধু কবিতার জন্য প্রেমের জন্য নীরবে নিভৃতে দগ্ধ হয়ে বুকের ভিতরে সূর্যের মতো দগদগে প্রেম পুষেছেন। কবিতার ভাষায়— রোদ্দুর হতে চাই। অথচ, রোদেরও ক্ষত আছে। কষ্ট আছে।
‘আলো ছড়াতে অহর্নিশি পুড়তে হয়। যার বুকের— বাঁ–দিকটা আগুনে টনটন করে ওঠে, সূর্যের মতো দগদগে প্রেম পুষে; তার কাছে ওটুকু দহন কিছু নয়। আসলে আগুন আর কতটুকু পোড়ে— ওটুকু দহন সত্যি কিছু নয়, শুধুমাত্র হৃদয় পোড়ার গন্ধ পড়ে থাকে এক কোণে ছোঁয়াচে রোগের অভিসম্পাত নিয়ে। যারা সত্যিকারের প্রেমিক— উন্মাদ যার হৃদয় পোড়ার গন্ধ আছে ‘জল ছুঁই তোমাকে’ তার মন ছুঁয়ে যাবে চেতনে—অবচেতনে, নিভৃতে—নীরবে। স্বপন সাহা বিএ অনার্স, এমএ (বাংলা) ডিসেম্বর ১০, ২০২৪।
Report incorrect information