জাতির জনক
-----হারুন-অর-রশিদ মজুমদার
(বাংলাদেশের প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ এলডিপি'র চেয়ারম্যান ডঃ কর্ণেল(অবঃ) অলি আহমেদ বীর বিক্রম অতি সম্প্রতি জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করে "জাতির জনক" পদটি বিলুপ্ত করতে প্রস্তাব করেছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে হয়তো জাতির কাছে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন। আমি মনে করি এই প্রস্তাব হলোঃ
----মাথা ব্যাথা?
----মাথা কেটে ফেল; জাতীয় সমাধান। বরঞ্চ আমার প্রস্তাবনা হলো নিন্মরূপ)
এক.
"আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন তা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আর এখন এই বুদ্ধিজীবী গণ যা বলছেন তা শুনলে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না"। আহমদ ছফা স্বাধীনতার পর পর এক লেখায় প্রবাদতুল্য এই হিরম্ময় পঙ্তি লিখেছিলেন। আজ কয়েক দশক পরেও সেই বাস্তবতা, ধুলিসাৎ হয়ে তো যায়ইনি বরং আরও বেশি করে ঝেঁকে বসেছে। কতিপয় হয় মূর্খ নয় জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী ওরফে প্রগতিবাদী লেখক বৃন্দের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা পড়লে মনে হবে ১৯৭১ইং সনের আগে বাংলাদেশ ছিল না। বাংলাদেশের আগে পাকিস্তান ছিল না। পাকিস্তানের আগে বৃটিশ ভারত ছিল না। বৃটিশ ভারতের আগে মুঘল সাম্রাজ্য ছিল না। মুঘল সাম্রাজ্যের আগে সুলতানি আমল ছিল না।
অর্থাৎ তাঁদের লেখা পড়লে পাঠকের মনে হবে ১৯৭১ইং সনে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিলে, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অন্তরীক্ষ থেকে আচমকা এক হেঁচকা টানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে। হয়তোবা ১৯৭১ইং সালে বঙ্গোপসাগর থেকে টেনে এনে, নয়তোবা মাটি খুঁড়ে পাতাল থেকে তুলে আনা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি। আমাদের কতিপয় জ্ঞানপাপীর লেখাজোকা পড়লে নব প্রজন্মের এটি মনে হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগে বাংলাদেশে কোন নেতা ছিল না। আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলনের আগে, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না।
কতোটা অন্ধ হলে, কতোটা বিভ্রান্ত হলে, গোটা একটা জাতিকে এই কুপমন্ডুকগণ, ভুল শিক্ষা দিয়ে আসছে ভুল পথে পরিচালিত করছে। একটা ভুল মতবাদ একটা ভুলের ঘোরে অনন্তকাল, একটি দেশ একটি জাতি থাকতে পারে না। আর সেই কারণেই বাংলার অবিসংবাদিত নেতাগণ, যারা প্রায় পৌনে এক শতাব্দী বাংলা'র মানুষের আস্থায় ছিলেন, ছিলেন গণমানুষের ভরসাস্হল। বাংলা'র বিকাশে বাংলা'র মানুষের জন্য ইনারা নিজেদের জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন। অথচ কিছু মনের দিক থেকে জন্মান্ধ মতের দিক থেকে মতান্ধ এবং দলদাস জ্ঞানপাপীগণ, গত অর্ধ শতাব্দী তাঁদের তথা এই কীর্তিমানদের কার্যকলাপকে, সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত করে- হায় মুজিব! হায় মুজিব!! মাতম তুলে সমগ্র বাংলাদেশকে, সমগ্র বাংলাদেশি জাতিকে ভুল ভ্রান্তির নিগড়ে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
এই জ্ঞানপাপীদের অনেকেই আজ মৃত, স্বল্প সংখ্যক অর্বাচীন আজও জীবিত। যারা জীবিত তারা মূলত গত পনের বৎসর যাবৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কায়েম হওয়া আওয়ামী ফ্যাসিস্টতন্ত্রের হালুয়া রুটির, উচ্ছিষ্টের ভাগ বাটোয়ারা পেতেই এই একটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান "জাতির পিতা" নামক বিভ্রান্তিকর মিথ ছড়িয়েছে। পৃথিবীর কোন জাতিই কোন একক ব্যাক্তির মধ্য দিয়ে তার সমস্ত অর্জন লব্ধ হন না। অসংখ্য মহৎ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের ধারাবাহিক কীর্তির সমন্বয় ও ক্রমন্বয় একটি জাতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যুগে যুগে। কোন একজন ব্যাক্তিকেই যদি কেবল সামনে নিয়ে আসা হয়, তবে অন্যদের অবদানকে অস্বীকার করা হয়। জাতির জন্য তাদের মহান ত্যাগকে অবমাননা করা হয়।
অসাধারণ মেধাবী ও প্রতিভাবান দিগের পাশাপাশি আরও বহু সংখ্যক দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ একটি দেশে থাকেন। সকলেকেই জাতির পিতা বা জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে প্রতিভাত করা যায় না, প্রধান প্রধান অসাধারণ মেধাবী ও প্রতিভাবান কয়েকজনকেই কেবলমাত্র এই অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়, অভিহিত করা হয়। যাঁরা একটি জাতির, জাতি রাষ্ট্রের উত্থানে কখনো সচতনে কখনো নিজ অবচেতনেই, নিজ কর্মের মাধ্যমে জাতীয় জীবনে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে যান অনন্ত কালের তরে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একক ভাবে কাউকে নয় বরং নিন্মোক্ত পাঁচজনকেই জাতির গঠনে গুরুত্ব প্রদান করা হয়, জাতির উত্থানে তাদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ। ইনারা হলেনঃ ১.জর্জ ওয়াশিংটন ২.টমাস জেফারসন ৩.আব্রাহাম লিঙ্কন ৪.ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এবং ৫.হ্যারী এস ট্রুম্যান।
সংক্ষেপে এই পাঁচ জনের মৌলিক অবদানঃ
১. জর্জ ওয়াশিংটনঃ
সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্র স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে ও জয়লাভ করে ৩০শে এপ্রিল ১৭৮৯ইং জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন করেন। ১৮০০সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকা যে নিরঙ্কুশ গণতন্ত্রের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়েই এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেন জর্জ ওয়াশিংটন।
২. টমাস জেফারসনঃ
জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ১৮০১ইং থেকে ১৮০৯ইং পর্যন্ত টমাস জেপারসন দুই মেয়াদে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গণতন্ত্রের সূতিকাগার আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সূচনা তিনিই করছিলেন। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একদল উদ্যোমি গবেষক আমেরিকার ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করেছিলেন।
৩. আব্রাহাম লিংকনঃ
১৮৬১ইং আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আব্রাহাম লিঙ্কন। তিনিই আধুনিক আমেরিকার স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি আমেরিকায় দাসপ্রথার বিলুপ্ত করেন। তার বিখ্যাত গেটিসবার্গ বক্তৃতার "Government of the people By the people For the people"- এই বাক্যত্রয় প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মটো। প্রতিটি আধুনিক জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি- বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগের জন্য এইটা অতি অবশ্যই প্রাতঃস্মরণীয় উক্তি।
৪. ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টঃ
১৯৩২ইং আমেরিকার ৩২ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। ত্রিশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্জয় আমেরিকাকে পর্যদুস্ত করে ফেলেছিল। অর্থনৈতি মন্দা কাটিয়ে উঠতে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় তো করিয়েছেনই। পাশাপাশি আমেরিকাকে দুনিয়ার অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবেও আবির্ভূত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। রুজভেল্টের এই অবিস্মরণীয় অবদান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজোবধি উপভোগ করছে।
৫. হ্যারি এস ট্রুম্যানঃ
১৯৪৫ইং এর এপ্রিল মাসে হ্যারি এস ট্রুম্যান আমেরিকার ৩৩ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তিনি ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সেই নেতা, যিনি জাপানে পারমানবিক বোমা মেরে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটান। তিনিই পুরো পৃথিবীতে আমেরিকাকে সামরিক পরাশক্তি হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করেন। জাতিসংঘ সনদ তৈরীতে তার রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। ১৯৪৫ইং সালের জুন মাসে নিজে উপস্হিত থেকে সে সনদে স্বাক্ষর করেন।
দুই.
কাকতালীয় ভাবে বাংলাদেশি জাতির বিকাশেও তেমনি, পাঁচজন মহান ব্যাক্তিত্বের আবির্ভাব হয়েছে যুগের প্রয়োজনে। বাংলাদেশি জাতির বিকাশে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ও বাংলাদেশ একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে তাঁদের প্রত্যেকের রয়েছে অসামান্য অবদান। আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদলে আলোচিত পাঁচজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বঃ
১.শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক ২.গণতন্ত্রের মানসপূত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ৩.মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৪.বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৫.স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
ইনাদের নিন্মে সংযুক্ত সন ভিত্তিক চুম্বকারের সংক্ষিপ্ত জীবনীতে উঠে এসেছে বাংলাদেশি জাতির গঠনে তাঁদের কারো ভূমিকাকেই গৌন করে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের কতিপয় জ্ঞানপাপীগণ একজন মাত্র ব্যাক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনে এনে, অপরাপর জাতীয় মহান নেতৃবৃন্দকে, জাতির প্রতি তাঁদের যে অপরিসীম ঘামে-রক্তে ভেজা অবদান ও ত্যাগ- তাকে এই জ্ঞানপাপীগণ মুছে দিতে চেয়েছেন।চোখের সম্মুখের ছোট্ট একটি মুষ্টি দিয়ে সুদুরের সুবিশাল হিমালয় পর্বতকে, সাময়িক ঢেকে ফেলে যায়। তবে চিরন্তন সত্য এই যে, চোখের সম্মুখের ছোট্ট মুষ্টি দিয়ে সুবিশাল হিমালয় পর্বতকে অনন্তকাল ঢেকে রাখা যায় না। তা বাস্তব সম্মতও নয়।
তেমনি বিগত প্রায় অর্ধ শতাব্দী প্রগতিশীলতার দোহাই দিয়ে কিছু জ্ঞানপাপী ও গত প্রায় দেড় যুগের ক্ষমতাসীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদ, উভয় অশুভ শক্তি মিলে মিশে একাকার হয়ে আমাদেরকে পুরো বাংলাদেশি জাতিকে অন্ধ করে রেখে, এক বিকৃত ইতিহাস রচনা করার উম্মত্ত মনোবাসনায় মেতেছে। এরা জানেও না যে, নিকটতম বা দূরতর অতীতে ঘটে যাওয়া বাস্তব সব ঘটনাবলীই ইতিহাস। ইতিহাস কখনো মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা করা যায় না। কামাল আতাতুর্ক যেমন তুরস্কের ইসলামী মূল্যবোধের সংস্কৃতিকে, প্রগতিশীলতার নামে আগ্রাসনের মধ্যে ফেলে পুরো তুরস্ক জাতি ও তাদের ইসলামী মূল্যবোধকে, ইসলামী সংস্কৃতিকে বিগত প্রায় এক শতাব্দী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
বিগত কয়েক মেয়াদে রিসেদ তাইপে এরদোগোয়ান এর নেতৃত্বে তুরস্কে ইসলামী সংস্কৃতি, ইসলামী মূল্যবোধ পুনরুজ্জীন লাভ করেছে। তদ্রূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে তুরস্কের বর্তমান এরদোগোয়ানের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সত্তরের দশকে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনার নামে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা বাকশাল এর মোড়কে প্রগতিশীলতার নামে, বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতিকে ইসলামী মূল্যবোধকে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান প্রত্যেকের স্ব স্ব ধর্মীয় অনুশাসনকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ইং সালে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্র ক্ষমতার পাদপ্রদীপের তলে এসে শহীদ জিয়া ইসলামী মূল্যবোধ ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভিত্তিক পুনরুজ্জীবিত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর শাসনামলে ভারতের অন্ধ অনুকরণে ও যৎকিন্চিৎ হিন্দু ধর্মের মিশ্রণে অসাম্প্রদায়িকতার নামে, ধর্মহীন ঠিক নাস্তিকতা নয় আবার ধর্মীয় মূল্যবোধ হীন, আচানক এক "আওয়ামী-বাকশালী" মতবাদ "মুজিববাদ" কায়েমের ব্যার্থ চেষ্টা করেছেন। "মুজিববাদ" নামক বিশাল গ্রন্হ প্রণয়ন করে খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস যার প্রবক্তা। অথচ যার স্বরূপ খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস নিজেই অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই আজব মতবাদ না কমিউনিজম, না গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারক-বাহক। ঢাকা চিড়িয়াখানায় এক সময় বাঘ ও সিংহের জীনের সম্মিলনে "লাইগার" নামক প্রাণীর উৎপত্তি ঘটানো হয়েছিল। অতঃপর গবেষকবৃন্দ এই গবেষণায় হতোদ্যম হয়ে আর বেশিদূর এগোননি। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক জীনের সম্মিলনে এক আজব ও অদ্ভুত "আওয়ামী-বাকশালী" "মুজিববাদ"ও তেমনি নিঃশেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসক জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের, এক চিমটি গণতন্ত্র ও এক মুঠো ফ্যাসিবাদতন্ত্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট "অদ্ভুদতন্ত্র" অতি অবশ্যই ঢাকা চিড়িয়াখানার সেই "লাইগার" ও বঙ্গবন্ধু-র "আওয়ামী-বাকশালীয়" "মুজিববাদ"-এর পরিণতি বরণ করবে। কারণ এতে "ক্ষমতা এবং ক্ষমতা" ভিন্ন এতে আর কোনো সার বস্তু নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের গণতন্ত্র চালু করেছেন। যা স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নির্লজ্জ অনুকরণ। একজন রাজনীতিবিদ প্রকৌশলী কিংবা ঠিকাদার নন। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান শের-ই-বাংলা নগরের সংসদ ভবন, কমলাপুর রেলস্টেশন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ঢাকা বিমানবন্দর সহ আরও অসংখ্য স্হাপনা করে, উন্নয়নের দশক পালন করে জাতীয় জীবনে অমর হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, তিনি স্বৈরশাসক হিসেবেই আজোবধি ইতিহাসে ধিকৃত।
একজন রাজনীতিবিদ জনগণের টাকায় কিংবা জনগণের ঋণের বোঝা বাড়িয়ে ও লুটপাটের হরিলুটের মধ্য দিয়ে গড়া পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, পাতাল রেল, কর্ণফুলি টানেল কিংবা ফ্লাইওভারের মধ্যে টিকে থাকেন না। যমুনা নদীর উপর "বঙ্গবন্ধু সেতু" দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে তৈরী হয়েছে। সেটা অনেকেই ইতোমধ্যে ভুলে গেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেবলমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আপোষহীন ও সংগ্রামী মানবী হিসেবেই ইতিহাসে টিকে থাকবেন। একজন রাজনীতিবিদ টিকে থাকেন তাঁর আদর্শে। সম্রাট শাহজাহান তাজমহলের মাঝে নয়, তাজমহলের অন্তরালের অনন্ত প্রেমের প্রতিভূ হিসেবে টিকে আছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে যা-ই মনে করুন না কেনো তিনি গুম, খুন, গণতন্ত্র হত্যা, নতজানু পররাষ্ট্র নীতির পরাকাষ্ঠা হিসেবেই ইতিহাসে টিকে থাকবেন।
Report incorrect information