Category:বইমেলা ২০২৫
পটভূমি
দীর্ঘ দেড় দশকের অপশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪।
একে বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান, শিক্ষার্থী জনতার অভ্যুত্থান, ফ্যাসিস্ট বিদায় ইত্য..
পটভূমি
দীর্ঘ দেড় দশকের অপশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪।
একে বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান, শিক্ষার্থী জনতার অভ্যুত্থান, ফ্যাসিস্ট বিদায় ইত্যাদি অনেক নামে সজ্ঞায়িত করছে। সবারটাই হয়তো ঠিক। তবে হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের এত আকস্মিক সমাপ্তি, এত কলঙ্কজনক ও ভয়াবহ লজ্জাজনক পরিণতি হয়তো কেউই বুঝতে পারেনি। এখানেই প্রকৃতির বিশালতা, তার ক্ষমতা আর আমাদের সীমাবদ্ধতা।
গত এক—দেড় দশক ধরেই আওয়ামী শাসকদল গুম, খুন, হত্যা, পেশীশক্তি, অস্ত্রের মহড়া ও তার ব্যবহার, নিপীড়ন, ভিন্নমতের মানুষের সাথে সর্বোচ্চ খারাপ ব্যবহার করে, প্রশাসন ও পুরো দেশের অবকাঠামোটাকেই দলীয়করণ ও একটা মাফিয়াতন্ত্র গড়ে তোলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বিরোধী রাজনৈতিক মত, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ নানান ধর্ম—বর্ণ—শ্রেণিও পেশার মানুষের সাথে নানান অমানবিকতা, আয়না ঘর নামক টর্চার সেল গঠন করা ইত্যাদি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিরোধীদলের বড় বড় সব সমাবেশ দল ও প্রশাসন দিয়ে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে দেড় দশক ধরে। অর্থ, ক্ষমতা, যশ তাদের অন্ধ করে দিয়েছিল। চার দেওয়ালের বাইরে কী ঘটে যাচ্ছে তারা ছিল বেখবর।
কয়েক বছর আগে সরকারি চাকরিতে কোটার পরিমাণ নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন হলে সরকার চাকরিতে সকল কোটা বাতিল করে দেয়। তারপর অনেক চড়াই—উতরায় পার করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আপিল করে কোটার পক্ষে। এ নিয়ে সরকার ও আদালত, শিক্ষার্থী এবং দেশের মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। এ নিয়ে এবছর জুন ২৪ থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সরকার ও আদালত আবার টালবাহানা শুরু করে। যার ফলে দেশের মানুষের মধ্যে কোটা নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
জুলাই ২০২৪ এর প্রথম সপ্তাহে মাত্র গুটিকয়েক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতি বরাবর স্বারকলিপি প্রদানের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেয়। যার ফলে দেশব্যাপী তাদের ছোট ছোট আন্দোলনেও বাধা আসতে শুরু করে। তারপর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা বাদে অন্যদের রাজাকার সম্বোধন করে, হেয় করে বক্তব্য প্রদানের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও জোরালো হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে লেলিয়ে দেন । সাথে যোগ দেয় সকল আওয়ামী মতাদর্শের হায়েনার দল। বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া মেয়েদের গায়ে হাত তোলা হয়, তাদের বেইজ্জতি করা হয়, তাদের রক্তাক্ত করা হয়। সাথে যোগ দেয় আওয়ামী পুলিশ নামের আরেক পিচাশবাহিনী।
১৬ জুলাই ২৪ রংপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদকে নিরস্ত্র অবস্থায় খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড সারা বিশে^র বিবেক নাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আওয়ামী শকুনরা যেন আরও শক্তি পায়। খুনি প্রশাসনের সাথে তারাও হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। নিজ দেশের নিষ্পাপ কোমলমতি সন্তানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেমে তারা কী প্রমাণ করল নিজেকে?
পাখির মতো গুলি করে শিশু, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষকে তাদের শিকার হতে হয়। বাসাবাড়িতে শিশু সন্তানও হত্যার শিকার হয়। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়। হাজার হাজার বুলেট, টিআর শেলের ঝাঁঝালো বাতাসে পুরো জুলা্ই মাস ছিল অসহনীয়। তারপর হাজারো মানুষের রক্তের রঙে, গন্ধে গুমোট একটা দম বন্ধ করা আতঙ্কের সময়। অফিসে, পাড়ায় মহল্লায় আতঙ্কে মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে। তারপর কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সময়টাতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ক্ষমতায় থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে সেনাবাহিনীকেও নামানো হয়। বিচ্ছিন্নভাবে সেনাবাহিনীও গুলি চালিয়ে হতাহত করে (মোহাম্মদপুর, ঢাকাÑ আমি নিজে প্রত্যক্ষদর্শী), বিডিআর তাদের শক্তি প্রদর্শনের ভয় দেখায়।
Report incorrect information