34 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"গীবত বা পরনিন্দা" বইটির প্রসঙ্গ কথা অংশ থেকে নেয়াঃ
গীবত 'হিংসা অত্যন্ত গুরুতর ও জঘন্য পি কাজ, যা ইসলামে অবৈধ ও পরিত্যাজ্য ঘােষিত হয়েছে। মানবচরিত্রে যেসব খারাপ ..
TK. 170TK. 119 You Save TK. 51 (30%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"গীবত বা পরনিন্দা" বইটির প্রসঙ্গ কথা অংশ থেকে নেয়াঃ
গীবত 'হিংসা অত্যন্ত গুরুতর ও জঘন্য পি কাজ, যা ইসলামে অবৈধ ও পরিত্যাজ্য ঘােষিত হয়েছে। মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক রয়েছে এর মধ্যে গীবত হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকর। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অশান্তিকর ও বিষময় করে তােলে। এতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে। হিংসা-বিদ্বেষের সাথে গর্ব-অহংকৗর, ঈর্ষা-পরশ্রীকাতরতা, অন্যের অনিষ্ট কামনা ও শত্রুতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। হিংসা-বিদ্বেষের প্রকাশ হচ্ছে নিজেকে বড় মনে করে অন্যকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা করা, শত্রুতার মনােভাব পােষণ করা এবং অপরের অনিষ্ট ও অকল্যাণ কামনা করা। অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে আরবীতে ‘হাম” অর্থাৎ হিংসা বলা হয়। ইসলাম অপরের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ, লােভ-লালসা, শঠতা-কপটতা, অশান্তি, হানাহানি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারের পথ পরিহার করে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হবে এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পরিচালিত জীবনবােধে উদ্বুদ্ধ হবে-এটাই ধর্মের মূলকথা। আর হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের সৎকর্ম ও পুণ্যকে তার একান্ত অজান্তে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে। তাই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন,
তােমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কেননা হিংসা মানুষের নেক আমল বা পুণ্যগুলাে এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।'
-(আবু দাউদ)
হিংসা-বিদ্বেষ মানবাত্মার জন্য একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি। মানুষের হীন মন-মানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মােহ, পদমর্যাদার লােভ-লালসা থেকে হিংসা-বিদ্বেষের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ হয়। হিংসুক ব্যক্তি অপরের ভালাে কিছুই সহ্য করতে পারে না, কাউকে কোন উন্নতি বা ক্ষমতায় অভিষিক্ত দেখলে অন্তরে জ্বালা অনুভব করে। এ হেন অশােভন আচরণ ইসলামের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ধর্মপ্রাণ মানুষের চরিত্র গঠনে হিংসা-বিদ্বেষ বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে মানুষে মানুষে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, হানাহানি ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উদ্ভব ঘটে। সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। পক্ষান্তরে সমাজে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, মায়া-মমতা, সহানুভূতি, সম্প্রীতি ও ভালবাসা সামাজিক জীবনকে, শান্তিময় ও মধুময় করে তােলে। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে বিশ্বের সব সৃষ্টির সেবা ও জনকল্যাণ কামনাই হচ্ছে সত্যিকারভাবে ইসলামের অনুশীলন। মহানবী (সা) সর্বজনীন কল্যাণ কামনার শিক্ষা দিয়ে বলেছেন যে,
পরস্পর সদিচ্ছা বা শুভ কামনাই দ্বীন'।
কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ পােষণকারী লােকেরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এ মহান বাণীর পরিপন্থী কাজ করে দ্বীন ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করে। বাহুবলে হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকারতা ও শত্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক জীবনে শান্তি ফিরে আসে না। তাই মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের স্থলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা সতর্ক করে বলেছেন,
“অথবা আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সে জন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে?
(সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৪)
ঈর্ষা বা হিংসা মানুষকে কত অধপতনে নিয়ে যায় এর কোন সীমা-পরীসামা নেই। ঈর্ষা ও হিংসা প্রায় একই রকম আবেগ, তবে হিংসাকে বলা হয় ঈর্ষার চরম বহিপ্রকাশ। ঈর্ষাকারতা হিংসার পর্যায়ে চলে গেলে আক্রোশবত মানুষ হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকে তখন তাকে পরিত্যাগ করা অবশ্য কর্তব্য। এজন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য ইসলামে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে যেসব বস্তু থেকে মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চাওয়ার তাগিদ রয়েছে এর মধ্যে পরশ্রীকাতরতা ও হিংসা-বিদ্বেষ মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ চরিত্র ধ্বংস করছে। হিংসা-বিদ্বেষ দ্বীন ইসলামের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ঈমানদারদের মন থেকে সব ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সমাজের সবার সাথে শান্তিতে মিলেমিশে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। রাসূলুল্লাহ (সা) এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বলেছেন,
তােমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলাের মুণ্ডনকারী (ধ্বংসকারী) রােগ ঘৃণা ও হিংসা তােমাদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে আসছে। আমি চুল মুণ্ডনের কথা বলছি না, বরং তা হচ্ছে দ্বীনের মুণ্ডনকারী।
(তিরমিযী ও আহমাদ)
অতএব, ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী কোনাে কিছু নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ করতে নেই। জীবন তাে মহান আল্লাহর দান। শারীরিক সৌন্দর্য, চারিত্রিক মাধুর্য, ধন-দৌলত, অর্থ-সম্পদ, মান-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও পদমর্যদা-সবকিছুই আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নিয়ামত। এজন্য সবাইকে আল্লাহ্ রাব্বল আলামিনের কাছে শােকরিয়া আদায় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। নিজের যা কিছু আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অপরের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পােষণ করে হিংসার আগুনে জ্বলে-পুড়ে ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। তাই আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হলে ধর্মপ্রাণ সবাইকে অবশ্যই। সর্বাবস্থায় গীবত, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে।