53 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
ভূমিকা
তখন আমেরিকার ফার্গো শহরে থাকি।জানুয়ারি মাস, হাড় কাঁপানো শীত। থার্মোমিটারে পারা নেমে গেছে শূন্যেরও কুড়ি ডিগ্রি নিচে। সকাল থেকেই তুষারপাত হচ্ছে। দৃশ্য খুবই সুন্দ..
TK. 525TK. 394 You Save TK. 131 (25%)
Product Specification & Summary
ভূমিকা
তখন আমেরিকার ফার্গো শহরে থাকি।জানুয়ারি মাস, হাড় কাঁপানো শীত। থার্মোমিটারে পারা নেমে গেছে শূন্যেরও কুড়ি ডিগ্রি নিচে। সকাল থেকেই তুষারপাত হচ্ছে। দৃশ্য খুবই সুন্দর তবে বাইরে বের দেখার দৃশ্য না। ঘরে বসে জানালা দিয়ে দেখার দৃশ্য।
এমন দুর্যোগের দিনেও বিকেল থেকেই আমার বাসায় অতিথিরা আসতে শুরু করল। নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশী ছাত্র। কারণ আজ আমার বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হচ্ছে। ইলিশ মাছ এসেছে বাংলাদেশ থেকে। সিল করা টিনে ইলিশ। যতদূর মনে পড়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পাইলট প্রকল্পের জিনিস। যে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত কাজ করে নি।
কৌটা খুলে দেখা গেল হলূদ রঙের আলূ ভর্তা জাতীয় পর্দাথ। সেই জিনিস তেলে ভাজা হল। সবাই চায়ের চামচের ছ, চামচ করে পেল। সবার মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত। যেন অমৃত চাখা হচ্ছ।
খাওয়াদাওয়ার পর রাতভর শুধুই ইলিশের গল্প। পদ্মার ইলিশের স্বাদ বেশি না যমুনার ইলিশের? সুরমা নদীতে যে ইলিশ ধরা পড়ে তার স্বাদ গভীর সমুদ্রের ইলিশের মতো।তার কী কারণ? এই নিয়ে গভেষণামূলক আলোচনা।একজন আবার শুনালেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের স্প্যানে ধাক্কা খাওয়ার ইলিশের গল্প। স্প্যানে ধাক্কা খেয়ে ইলিশ মাছের নাক থেঁথো হয়ে যায়। সেই সব নাম ভাঙা ইলিশই আসল পদ্মার ইলিশ।
এরপর শুরু হল ইলিশ রান্নার গল্প। দেখা গেল সবাই ইলিশ রান্নার কোনো-না-কোনো পদ্ধতি জানে।ভাপে ইলিশ, চটকানো ইলিশ, শুধু লবণ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে সিদ্ধ ইলিশ। গভীর রাত পর্যন্ত গল্প চলতেই লাগল।
পঁচিশ বছর আগের আমেরিকার এক দুর্যোগের রাতের সঙ্গে এখনকার অবস্থা মিলানো যাবে না। এখন আমি ঢাকা শহরে বাস করি। ইলিশ মাছ কোনো ব্যাপার না । প্রায় রোজই রান্না হয়। নতুন নতুন পদও হয়। ঐতো সেদিন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত শেফ টমি মিয়া নিজে রান্না করে ইলিশ মাছের একটা পদ খাওয়ালেন-স্মোকবিহীন “স্মোক্ড্ হিলসা।” সাহেবদের পছন্দের খাবার।
স্মোক্ড্ হিলসা খেতে খেতেই শুনলাম অবসর প্রকাশনার সংস্থার আলমগীর রহমান শতাধিক পদের ইলিশ রান্নার একটি বই কম্পোজ করে রেখেছেন। কাউকে দিয়ে ভূমিকা লেখানো যাচ্ছে না বলে বইটি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “ভূমিকা আমি লিখে দেব।”
সাধারনত দেখা যায় লেখদের লেখার ক্ষমতা পুরোপুরি শেষ হবার পর তারা ভূমিকা এবং সমালোচনা জাতীয় রচনা লেখা শুরু করেন। যে আগ্রহে ভূমিকা লিখতে রাজি হয়েছি তাতে মনে হয় আমার ঘন্টা বেজে গেছে। আচ্ছা বাজুক ঘন্টা-আমি ভূমিকাতেই থাকি।
শুরুগম্ভীর ভূমিকা লেখার বিশেষ কায়দা আছে। প্রথমেই নামের উৎপত্তিতে যেতে হয়। ইলিশ নামটা কীভাবে এল, কেন এল। এই প্রজাতির মাছ পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়। যেসব মাছ সমুদ্রে থাকে এবং ডিম পাড়ার জন্যে মিঠা পানিতে আসে তাদের শ্রেনীবিন্যাস। সেই বিন্যাসে ইলিশের স্থান কোথায় সে বিষয়ে আলোচনা। এরপর আসে ইলিশের ইলিশের ইতিহাস।বাংলা আদি সাহিত্যে(চর্যাপদে) ইলিশ মাছের উল্লেখ কেন নেই সে বিষয়ে গবেষণামূলক সুচিন্তিত মতামত। মোগল রসুইখানায় ইলিশের অনুপস্থিতিরি কারণ ব্যাখ্যা........ আমি এইসব কিছু জানি না। আমি শুধু জানি বাংলা বর্ণমালার শিশু শিক্ষা বইয়ে ‘অ’-তে হয় অজগর।‘আ’-তে আম..... ‘ই’-তে ইলিশ.....এই তথ্যই কি ইলিশ রান্না বিষয়ক একটি বইয়ের ভূমিকার জন্যে যথেষ্ট নয়?
হুমায়ূন আহমেদ
দখিন হাওয়া, ধানমন্ডি