2 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
ভূমিকা
বাংলা সাহিত্যের এক আশ্চর্য প্রতিভা অপরাজেয় কথাশিল্পী ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮) খ্রীঃ। সাহিত্যের জগতে আনন্দের ভোজে শরৎচন্দ্র যে পাত্র সাজিয়েছেন স্বাদে গন..
TK. 175TK. 151 You Save TK. 24 (14%)
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
Product Specification & Summary
ভূমিকা
বাংলা সাহিত্যের এক আশ্চর্য প্রতিভা অপরাজেয় কথাশিল্পী ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮) খ্রীঃ। সাহিত্যের জগতে আনন্দের ভোজে শরৎচন্দ্র যে পাত্র সাজিয়েছেন স্বাদে গন্ধে তা বহুদিন আবুল করবে বাঙালী পাঠককে। বাংলা সাহিত্যে যারা খাঁটি ও বোদ্ধা পাঠক তাদের মাঝে মধ্যে পিছনে ফিরে তাকাতে হয় তাদেরই দিকে যারা কোনদিন পুরনো হবেন না।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। তার রক্তধারায় বৈরাগ্যভাব ছিল বলেই প্রথম জীবনে সন্ন্যাসী বেশে ভারতের বহুস্থানে পর্যটন করেন। জীবিকার অন্বেষনে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র বার্মায় যান এবং সেখানে মন্দির (১৯০৫) গল্প লিখে পুরস্কৃত হন। তারপর ‘বড়দিদি’ ‘ভারতী’ নামক প্রখ্যাত পত্রিকায় ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হলে বিপুল প্রসংশা লাভ করেন। তারপর আর পেছনে ফেরা নয়। অতি অল্প সময়েই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সমর্থ হন। সেই সময়ে শরৎচন্দ্রই একমাত্র সাহিত্যিক যিনি সাহিত্য সাধনাকেই একমাত্র পেশা হিসেবে বেচে নিয়েছিলেন।
শরৎচন্দ্র জানতেন কি করে গল্প বলতে হয়, কি করে আবেগকে নিয়ে খেলা করতে হয় এবং এরই মাঝে কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের বিষ্ময়কর জনপ্রিয়তার মূল সূত্রটি নিহিত। শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে মানুষ এবং মানুষের হৃদয়ই ছিল অনুসন্ধানের ক্ষেত্র। তাঁর রচনায় উচ্ছাসের বাহুল্য আছে। হৃদয়ের রহস্য আত্ম প্রকাশ করেছে কিন্তু নিজেকে মাধুর্য ও সংযমে রিক্ত করেনি। এমনই একটি উপন্যাস শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ।
শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ উপন্যাস দ্বিধান্বিত সত্তার তীব্র আত্মক্ষয়ী আর্তনাদ ‘অচলা’ চরিত্রটি ঘিরে প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হয়েছে। উপন্যাস শুরু হয়েছে মহিম অর অচলার বিয়ে দিয়ে বিয়ের পরই কাহিনীর যথার্থ সূত্রপাত। মহিম এবং সুরেশের প্রতি অচলার দো-টানা আকর্ষণের মধ্য দিয়ে কাহিনী এগিয়েছে। বিয়ের পর মহিমকে ছেড়ে অচলা সুরেশের কাছে আত্মসমর্পন করেছে। আবার সুরেশের প্রতি মোহভঙ্গের পর মহিমের উপস্থিতিতে অচলার ভয়ানক একাকিত্ব ও দুঃসহ শূন্যতার মধ্যে উপন্যাসের কাহিনীর ইতি ঘটেছে। একই ব্যক্তির প্রতি কখনও আসক্তি কখনও অনীহা এটা মনস্তত্ত্বের নিগূঢ় তত্ত্ব যা অচলা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে।
গৃহদাহ উপন্যাসে অচলা, মহিম, সুরেশ প্রত্যেকের জীবন অর্থনৈতিক পটভূমি, শিক্ষা দুর্বলচিত্ত ও পরিবেশগত ভিন্নতার চাপে অবিন্যাস্ত হয়েছে।
এই উপন্যাসে হৃদয়, সমাজ, স্বামী সংস্কার আর ভালোবাসার শিখায় দাহ হয়েছে অচলার সমস্ত জীবন। অচলা মাতৃহীন পিতৃগৃহে মানসিক অসম্পূর্ণতায় লালিত। কেদার বাবুর সংসার অসংগঠিত। তিনি নিজেই অস্থির চিত্ত। তিনি এমার্সন পড়েন, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে মন ভারমুক্ত হলে বায়োস্কাপও দেখতে যান। পেটি বর্জোয়া প্যাটার্নে তার চিন্তাভাবনা আচার আচরণ বিন্যস্ত। অচলা ছোট বেলা থেকেই তার বাবার দেয়া শিক্ষায় শিক্ষিত। তাই তার সত্ত্বা, চিত্ত, মন সবই দোলাচলে আন্দোলিত। তাই প্রথম দিকে সুরেশের অসংযত আবেগদীপ্ত ব্যবহার বিরক্ত করেনি এবং তার প্রতি আমন্ত্রণও ছিল না প্রত্যাখ্যানও না। বিয়ের পর মহিমের সাথে গ্রামে এসে মৃনাল ও মহিমের সম্পর্কে কদর্য সন্দেহ, সর্বোপরি মহিমের নিঃস্নেহ কঠোর কর্তব্য পরায়নতা তার মনেপ্রাণে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মহিম সব সময়ই ছিল নিরুত্তাপ আবেগহীন। অচলা মহিমকে একান্তভাবে পেয়েও তার প্রোমোচ্ছল হৃদয়েখানি মেলে দিতে পারেনি। এরই সাথে সুরেশের আগমন এক সর্বব্যাপক অগ্নিশিখা তার লেলিহান জিহ্বা বিস্তার করে ক্রমাগত সুরেশ ও মহিমের জীবনকে যেমন গ্রাস করেছে তেমনি প্রজ্বলন্তশিখায় অচলার জীবন হৃদয় দ্বিধান্বিত সত্ত্বা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে। নিজের অজান্তেই অচলা সুরেশের প্রবৃত্তিকে ইন্ধন যুগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা টলস্তয়ের আন্না কারেনিনার ‘আন্না’ চরিত্রের সামঞ্জস্য লক্ষ্য করি। অবশ্য ‘আন্না’ উপন্যাসের শেষে আত্মহত্যা করে এই যন্ত্রণার অবসান করে তোলে। উপন্যাসের শেষে অচলার অনিশ্চিত জীবন আবার নতুন করে তার হৃদয় যন্ত্রণার সূচনা করে।
গৃহদাহ উপন্যাসে শরৎচন্দ্র অচলা, মহিম, সুরেশ এই ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন। মহিম ও সুরেশের মতো দুই বিপরীত ধর্মী চরিত্রের সংযোজন করে তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ ঘটিয়ে কাহিনীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে অচলার ট্র্যাজিক পরিণতি সুনিপুণ গল্প বিন্যাসে সাজিয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কথা সাহিত্যের ভাষা প্রকাশভঙ্গি বিষয় আশয় এবং শিল্প বিন্যাসে গৃহদাহ শরৎচন্দ্রের এক অপূর্ব সৃষ্টি।
সালমা বেগম
সহযোগী অধ্যাপক
বাংলা বিভাগ
ঢাকা কলেজ
প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক
ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।