19 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
এক
চণ্ডীগড়ে চণ্ডী বহু প্রাচীন দেবতা। কিংবদন্তী আছে রাজা বীরবাহুর কোন্ এক পূর্বপুরুষ কি একটা যুদ্ধ জয় করিয়া বারুই নদীর উপকূলে এই মন্দির স্থাপিত করেন, এবং পরবর্তীকালে ক..
TK. 200TK. 172 You Save TK. 28 (14%)
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
Related Products
Product Specification & Summary
এক
চণ্ডীগড়ে চণ্ডী বহু প্রাচীন দেবতা। কিংবদন্তী আছে রাজা বীরবাহুর কোন্ এক পূর্বপুরুষ কি একটা যুদ্ধ জয় করিয়া বারুই নদীর উপকূলে এই মন্দির স্থাপিত করেন, এবং পরবর্তীকালে কেবল ইহাকেই আশ্রয় করিয়া এই চণ্ডীগড় গ্রামখানি ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হইয়া উঠিয়াছিল । হয়ত একদিন যথার্থই সমস্ত চণ্ডীগড় গ্রাম দেবতার সম্পত্তি ছিল; কিন্তু আজ মন্দির-সংলগ্ন মাত্র কয়েক বিঘা ভূমি ভিন্ন সমস্তই মানুষে ছিনাইয়া লইয়াছে। গ্রামখানি এখন বীজগার জমিদারিভুক্ত। কেমন করিয়া এবং কোন্ দুয়ে রহস্যময় পথে অনাথ ও অক্ষমের সম্পত্তি এবং এমনি নিঃসহায় দেবতার ধন অবশেষে জমিদারের জঠরে আসিয়া স্থিতিলাভ করে, সে কাহিনী সাধারণ পাঠকের জানা নিষ্প্রয়োজন। আমার বক্তব্যটা কেবল এই যে, চণ্ডীগড় গ্রামের অধিকাংশই এখন চণ্ডীর হস্তচ্যুত। দেবতার হয়ত ইহাতে যায়-আসে না; কিন্তু তাঁহার সেবায়েত যাঁহারা, এ ক্ষোভ তাঁহাদের আজিও যায় নাই; তাই আজিও বিবাদ-বিসংবাদ ঘটিতে ছাড়ে না এবং মাঝে মাঝে সেটা তুমুল হইয়া উঠিবার উপক্রম করে। অত্যাচারী বলিয়া বীজগাঁয়ের জমিদার-বংশের চিরদিনই একটা অখ্যাতি আছে; কিন্তু বৎসরখানেক পূর্বে অপুত্রক জমিদারের মৃত্যুতে ভাগিনেয় জীবানন্দ চৌধুরী যেদিন হইতে বাদশাহী লাভ করিয়াছেন, সেদিন হইতে ছোট-বড় সকল প্রজার জীবনই একেবারে দুর্ভর হইয়া উঠিয়াছে। জনশ্রুতি এইরূপ যে, ভূতপূর্ব ভূস্বামী কালীমোহনবাবু পর্যন্ত এই লোকটির উচ্ছৃঙ্খলতা আর সহিতে না পারিয়া ইহাকে ত্যাগ করিবার সঙ্কল্প করিয়াছিলেন, কিন্তু আকস্মিক মৃত্যু তাঁহার সে ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করিতে দেয় নাই ।
সেই জীবানন্দ চৌধুরী সম্প্রতি রাজ্য-পরিদর্শনচ্ছলে চণ্ডীগড়ে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন । গ্রামের মধ্যে একটা সামান্য রকমের কাছারিবাড়ি বরাবরই আছে, কিন্তু বাঁকুড়া জেলার এই অসমতল পাহাড়-ঘেঁষা গ্রামখানির স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যথেষ্ট সুনাম থাকায়, এবং বিশেষতঃ বালুময় বারুইয়ের জল অত্যন্ত রুচিকর বলিয়া এই জীবানন্দেরই মাতামহ রাধামোহনবাবু গ্রামপ্রান্তে নদীতীরে শান্তিকুঞ্জ নাম দিয়া একখানি বাংলো-বাটী প্ৰস্তুত করাইয়াছিলেন, এবং প্রায়ই মধ্যে মধ্যে আসিয়া বাস করিয়া যাইতেন; কিন্তু তাঁহার পুত্র কালীমোহন কোনদিন এখানে পদার্পণ করেন নাই। সুতরাং একদিন যে গৃহের রূপ ছিল, ঐশ্বর্য ছিল, মর্যাদা ছিল—চারিদিকের যে উদ্যান দিবারাত্রি ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ থাকিত, তাহাই আবার আর একদিন আর এক হাতে অযত্ন-অবহেলায় জীর্ণ মলিন ও আগাছায় ভরিয়া গিয়াছিল। এখানে মালী ছিল না, রক্ষক ছিল না, আশেপাশে লোকালয় ছিল না, কেবল বারুইয়ের শুষ্ক উপকূলে মস্ত একটা ভাঙ্গাচোরা বাড়ি বনজঙ্গলের মাঝখানে দাঁড়াইয়া অবমানিত গৌরবের মত অহর্নিশি শূন্য খাঁখাঁ করিত । কতকাল ধরিয়া যে এখানে কেহ প্রবেশ করে নাই, কতকাল ধরিয়া যে কাছারির প্রধান কর্মচারী সদরে কেবল মিথ্যা কৈফিয়ত পেশ করিয়া আসিতেছে, তাহা হিসাব করিয়া লইবার কেহ নাই ।
এই যখন অবস্থা, তখন অকস্মাৎ একদিন সায়াহ্নবেলায় মাত্র জন-দুই লোক সঙ্গে লইয়া নূতন ভূস্বামী আসিয়া গ্রামের কাছারিবাটীর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন; পালকি হইতে অবতরণ পর্যন্ত করিলেন না, কেবল গোমস্তা এককড়ি নন্দীকে ডাকিয়া বলিয়া দিলেন যে, তিনি দিনকয়েক শান্তিকুঞ্জে বাস করিবেন এবং পরক্ষণেই গন্তব্যপথে চলিয়া গেলেন। আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় এককড়ির মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল।