9 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
ফকির সন্নাসী বিদ্রোহে মদদ দেওয়ার কারণে চৌধুরী আসাদুজ্জামানের শেষ বংশধরদের হন্যে হয়ে খুঁজছে ব্রিটিশ-চর। তাদের নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো মুন্সি আব্দুল বশির একদিন নওয়াব মোহাম্মদ আলীর কাছে এস..
TK. 600TK. 450 You Save TK. 150 (25%)
Product Specification & Summary
ফকির সন্নাসী বিদ্রোহে মদদ দেওয়ার কারণে চৌধুরী আসাদুজ্জামানের শেষ বংশধরদের হন্যে হয়ে খুঁজছে ব্রিটিশ-চর। তাদের নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো মুন্সি আব্দুল বশির একদিন নওয়াব মোহাম্মদ আলীর কাছে এসে নাগিব আহমেদ এবং তার বোন ছোট্ট মাহজাবিনের জন্য আশ্রয় চাইলেন। নওয়াব এই কন্যাটির চোখে কী এক আলো দেখে তাকে ‘প্রিন্সেস মাহজাবিন’ বলে সম্মোধন করলেন। এই প্রিন্সেস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ডঃ পি কে মুখার্জী, সৈয়দ মুজতবা আলীসহ নিজের অধ্যাপক স্বামীকে নিয়ে তৈরী করছে বাংলার মহান ভাষা-আন্দোলন, এবং পুন্ড্র সভ্যতার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য স্বাধীনতা-যুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব। আর এই প্রস্তুতির অনুসংগ হিসেবে সে তৈরী করে শুভ্র নামের একজন গল্প বলিয়ে যে গল্পের মাধ্যমে ত্রিমোহিনীবাসীর অন্তর্লোক বিনির্মাণ করছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে মাহজাবিন-কন্যা নাজ তিতির পাকিস্তানী ক্যাম্প-কমান্ডার ক্যাপ্টেন জামশেদকে সেই গল্পবলিয়ের গল্পের মন্ত্রজালে বুঁদ করে রেখে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে সক্ষম হলেও নাগিবের স্ত্রী এবং দীপন আহমেদ তুষারের মা বিখ্যাত গজল গায়িকা মেহের নিগার দিশাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিগেডিয়ার তোজাম্মুলের ক্যাম্পে। ত্রিমোহিনীর গল্পবলিয়ে শুভ্রর স্ত্রী সিফাতকে বন্দি রেখে দীর্ঘদিন ধর্ষণ করে অবশেষে মৃত এবং নগ্ন সিফাতকে শিবলিঙ্ঘের উপর বসিয়ে রাখা হয় শিবমন্দিরের পুরোহিত নিরঞ্জন এবং মাহজাবিনের এককালের খাজাঞ্চি এবং রাজাকার সুফিয়ানের বুদ্ধিতে। যুদ্ধ শেষ হয়েও শুরু হয় নতুন এক যুদ্ধ। ভ্রাতুষ্পুত্র দীপন আহমেদ তুষারকে এক রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তোলার সাধনায় নিমগ্ন হন মাহজাবিন। যুদ্ধশেষে নিজের চোখ নিজে অন্ধ করে ফেলা গল্পবলিয়ে শুভ্র তার সব গল্প সে শুনায় আগ্রহী এক কিশোরকে।
তার অনেক অনেক বছর পর। বড় হয়ে ইতিহাস-প্রিয় ঔপন্যাসিক হয়ে উঠা সেই কিশোর একদিন সহযাত্রী নওরিনকে দেখে চমকে উঠে। এ যে ‘প্রিন্সেস মাহজাবিন’! নির্ঝরকে সেই কৈশোর থেকে মাঝে মাঝেই যিনি স্বপ্ন-ঘোরে সম্রাট অশোকের সমাধীস্থল দেখানোর কথা বলে নিয়ে যান অচেনা এক জগতে। নির্ঝরের কাছ থেকে এক পান্ডুলিপি পড়তে নিয়ে নওরিন জড়িয়ে যায় নির্ঝরের সাথে। সারথী হয় দরিদ্র শিশুদের জন্য তার নির্মিত আশ্রমের সাথে। যে আশ্রম রক্ষার সংগ্রামে তারা যখন মরিয়া তখনই আশ্রমের দলিল ভেবে সন্ত্রাসীরা নিয়ে যায় খামের প্যাকেটে মোড়া নির্ঝরের লেখা উপন্যাসের পান্ডুলিপি। ল্যাপটপসহ উপন্যাসের পান্ডুলিপি উদ্ধারে ঔপন্যাসিক নির্ঝর ফ্লার্টিং শুরু করে স্থানীয় সাংসদ কন্যা্র সাথে। প্রাচীন টেথিস সাগরের নাম অনুকরণে তিনি যার নাম রেখেছেন, টিথিয়া আহমেদ দীপ্তি। গ্রন্থ দিয়ে গড়া, মা-হীনা দীপ্তির অন্তর্লোক নিয়ে খেলতে গিয়ে নির্ঝর করে বসে জীবনের চরমতম ভুল।
কিন্তু নির্ঝর যাকে দখলদার ভেবে তার কন্যার সাথে প্রেমাভিনয় করছে সে আর কেউ নয়, মাহজাবিনের তিল তিল স্বপ্নে গড়া এক রাজনীতিবীদ এবং মহান একজন মুক্তিযোদ্ধা দীপন আহমেদ তুষার। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, নওরিন নিজেকে এক শিক্ষকের কন্যা জানলেও সে আসলে সেই রাজনীতিকের মেয়ে! অর্থাৎ সম্পর্কে সে প্রিন্সেস মাহজাবিনের নাতনী। রহস্যের সকল ডানা গিয়ে মিলেছে ‘ত্রিমোহিনী’তে। ওদিকে ত্রিমোহিনীর অন্তর্লোকে নিজের অবস্থান শূন্য দেখে দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠা রাজাকার সুফিয়ান গল্পবলিয়েকে খুন করার পরিকল্পনা আঁটছে।
এই উপন্যাসে পুন্ড্রসভ্যতার পাশাপাশি আছেন গৌতম বুদ্ধ, সম্রাট অশোক, রাণী ভবানী, অষ্টম শতাব্দীর জয়াপীড় এবং কমলা নাম্নী প্রাচীন এক নর্তকী চরিত্র! সিকরীর মান-বাঈয়ের দাসী মোহিনীর সাথে কমলার যোগসূত্র ছাড়াও গবেষকের মতো অত্যন্ত সংগতভাবে ২৫ কোটি বছর আগে থেকে ভারতবর্ষের জাতিসত্তার উত্থান প্রসংগও তুলে আনা হয়েছে জটিল বুঁনন অথচ গতিময় কাব্যিক ভাষার ‘ত্রিমোহিনী’র বিশাল ক্যানভাসে। অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্রের সাথে এক ডজন শক্তিশালী প্রধান চরিত্রের কর্ম-সমারোহে কাজী রাফি এমন এক বিস্তৃত এবং মোহাচ্ছন্ন জগত তৈরী করেছেন যা একই সাথে রহস্যময়, আমাদের জাতিসত্তার চিহ্ন বহনকারী গবেষণালব্ধ দলিল, আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ধারণকারী এক গতিময় কাব্যব্যঞ্জনা।