3 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
মহাকালের সাথে পথ চলিতে চলিতে যাহারা কালোতীর্ণ হইয়া সময়কে জয় করিয়াছেন, সেইসব মহামানব-মানবীর পদ ধ‚লিতে গৌরবদীপ্ত ভ‚মি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লইয়া কিছু লিখিব সে যোগ্যতা আমার নাই। তবে জী..
TK. 700TK. 525 You Save TK. 175 (25%)
Product Specification & Summary
মহাকালের সাথে পথ চলিতে চলিতে যাহারা কালোতীর্ণ হইয়া সময়কে জয় করিয়াছেন, সেইসব মহামানব-মানবীর পদ ধ‚লিতে গৌরবদীপ্ত ভ‚মি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লইয়া কিছু লিখিব সে যোগ্যতা আমার নাই। তবে জীবনের পরম সৌভাগ্যের কাছে মাথা নত করিয়া এইখানে যেইসব স্মরণীয় দিনগুলো অতিবাহিত করিয়াছি, তাহা বর্ণে বর্ণে মিলাইয়া ভাষায় প্রকাশ করিব বলিয়া আজি এই ক্ষণে কলম ধরিয়াছি। অনেকদিন ধরিয়া মনের ভিতর তাড়না করিয়া ফিরিতেছিল কিছু ঘটনাবলি, তাহা একদিকে যেমন সত্য সুন্দরে পরিস্ফুটিত, অন্যদিকে নীতিহীন অমানবিকতার চর্চায় ভরপুর। সেই সৃষ্টির শুরু হইতে যেমন শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনায় এই বিদ্যাপিঠ চরম উৎকর্ষ সাধন করিয়া জাতিকে উন্নত করিয়াছে, আবার অতীত ঘটনা প্রবাহে এমন সব ঘটনার জন্ম দিয়াছে এবং দিতেছে, যাহা শুধু বাঙালি জাতীর জন্য কলঙ্কজনক নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করিয়া তোলে। br
পাঠক-পাঠিকাগণের নিকট জোড়হস্তে ক্ষমা চাহিয়া বলিতেছি যে, আমি কোনো সা¤প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ হইতে লিখিতেছি না। যাহা লিখিতেছি তাহা বাস্তবতামাত্র।
বাংলার দুই শ্রেষ্ঠ সন্তান নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ এবং এ.কে. ফজলুল হকের কী অপরীসিম প্রচেষ্টার বিনিময়ে এই বিশ্বপাঠশালার জন্ম হইয়াছিল তাহা আজিকে বাঙালি ভুলিতে বসিয়াছে। বিশ্বকবির মতো মহামনীষীও সেইদিন এই বিশ্বপাঠশালার বিপক্ষে প্রচারণা করিতে ইতস্ততা বোধ করেন নাই। যাহাইহোক এইসব লইয়া মূল আলোচনায় বিস্তারিত ভাবে লিখিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হইতে এই অবধি তাহার বয়স হিসাব করিলে আমার অবস্থানের মুহ‚র্তকে ক্ষণিককালের মনে হইবে। কিন্তু আমার বয়সের সময়টা বিবেচনা করিলে দেখা যাইবে, জীবনের সবচাইতে সোনালি ও সম্ভাবনাময় দিন পার করিয়া আসিয়াছি। তাই এই সময়কে অতি অল্পকাল আমি বলিতে পারি না, বরংচ ইহাকে আমি অতি দীর্ঘকাল বলিয়া এর রূপ, রস, গন্ধকে পাঠক-পাঠিকাদের সম্মুখে উপস্থিত করিব। এই সুদীর্ঘ পথ চলার বর্ণনা দিতে যাইয়া যদি কখনো পদচুতি ঘটে তাহা হইলে আপনারা ধৈর্য হারাইবেন না। আবার আমি ফিরিয়া আসিব।
আবাল্য শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের নব প্রভাতের প্রথম জৌবনের গান একই সাথে গাহিতে না পারিয়াই আমার এই লেখাকে দুইটি অধ্যায় ও একটি উপঅধ্যায়ে ভাগ করিয়াছি। যেইখানে প্রথম অধ্যায় জুড়িয়া আমার পরিবার, পাঠশালা, স্কুল, কলেজ, শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের রঙিন স্বপ্নে ভরা জীবনের সাথে আছে দুঃখ-দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত কয়েকটি বুভুক্ষ হৃদয়ের চির না পাওয়ার স্ব-করুণ আর্তনাদ। প্রথম অধ্যায় পাঠরত পাঠক পাঠিকারা হয়তো আমার বইয়ের নামকরণের সার্থকতা খুঁজিয়া না পাইয়া হতাশ হইয়া পড়া ত্যাগ করিতে পারেন। তাই তাহাদের জন্য লিখিতেছি যে, আপনারা ধৈর্য হারা না হইয়া আর একটু পথ আগাইয়া যান। কেননা, এতো সময় ধরিয়া আপনারা যাহা পড়িতেছেন ইহা আমার বিদ্যার মহা সাগরে ভাসিবার ভেলা বানানোর উপকরণ। একটু পরেই আমি যে বিদ্যার মহারণে নামিবো, সেইখানে যুদ্ধ সামগ্র্রী সরবরাহ করিবার কারখানাতো আমার পাঠশালা, স্কুল, কলেজ আর আমার পরিবার। ভেলা ছাড়া যেমন মহাসাগরে ভাসা যায়না, যুদ্ধ সামগ্র্রী ছাড়া যেমন যুদ্ধ করিবার উপায় নাই, তেমনই আমার পরিবার, পাঠশালা, স্কুল, কলেজ বাদদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা একেবারেই সম্ভব নহে।
বইয়ের দ্বিতীয় ভাগে রহিয়াছে আমার দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ইতিহাস। যেইখানে আছে আমার এই চর্মচোখে দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ‚লিকণা হইতে শুরুকরিয়া ঐ উপাচার্য ভবন পর্যন্ত সকল নিয়ম-অনিয়মের কথা। এই নিয়ম-অনিয়মের কথা বলিতে যাইয়া অনেক সময় আমার অনেক প্রিয় মানুষ সম্পর্কে অপ্রিয় সত্য কথা বলিতে হইয়াছে, যেইখানে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী কেহই বাদ যায়নাই। এইজন্য আগে ভাগে ক্ষমাপ্রার্থী।
মূলত উপঅধ্যায় ভাগে রহিয়াছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনগুলির কথা আর বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বাহির হইবার পরের কিছু কথা। ইহা ছাড়া লেখাকে পূর্ণতা দিবার জন্য আরো কিছুতো লিখিতে হইয়াছে।
লেখার সার্থকতা ও বিফলতা লইয়া আলোচনা-সমালোচনা করিবার পূর্ণ অধিকার পাঠক-পাঠিকাগণের উপর থাকিল।