23 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
গজেন্দ্র কুমার মিত্রের রচনাবলী (১-৯ম খন্ড)
ভূমিকা
শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যের জন্য যেমন প্রয়োজন বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী, তেমনি গরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কল্পনার সহযোগিতা। শ্রী..
TK. 6840
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Product Specification & Summary
গজেন্দ্র কুমার মিত্রের রচনাবলী (১-৯ম খন্ড)
ভূমিকা
শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যের জন্য যেমন প্রয়োজন বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী, তেমনি গরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কল্পনার সহযোগিতা। শ্রীযুক্ত গজেন্দ্রকুমার মিত্রের গল্প-উপন্যাসে এই দুই ধারার যথার্থ' মিলন হয়েছে, তা তাঁর রচনাবলীর এই খণ্ডে দুটি উপন্যাসের ( ‘রাত্রির তপস্যা’—১৯৪৮, ‘কলকাতার কাছেই – ১৯৫৭ ) কথাবস্তু আলোচনা করলেই বোঝা যাবে। একটিতে ('রাত্রির তপস্যা') বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণ ঘটেছে উপন্যাসের স্বাভাবিক রীতিতে। আর একটিতে ( ‘কলকাতার কাছেই' ) কল্পনাবর্জিত নিছক বাস্তবতা, তিক্ত জীবন- ধারণের গ্লানি ও নৈরাশ্য এবং বঞ্চনা প্রতিটি মহত কে দঃসহ করে তুলেছে ।
‘রাত্রির তপস্যা’ গজেন্দ্রকুমারের সাহিত্যকৃতির প্রথম পর্বের সার্থক সৃষ্টি। ইতিপূর্বে— তাঁর অনেকগুলি গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে এবং তাতে তাঁর রচনারীতি ও মনঃপ্রকৃতি পূর্ণতা লাভ করেছে। ‘রাত্রির তপস্যা' এই পর্বে র সর্বাধিক পরিণত উপন্যাস ।
ভূপেন্দ্র আদর্শবাদী দরিদ্র ছাত্র, নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যৌবনে উপনীত হল এবং মফঃস্বলের শিক্ষকজীবনকে বৃত্তি বলে গ্রহণ করল, কিন্তু কাজে যোগ দিয়ে এবং শিক্ষকবৃত্তির অধঃপতন দেখে বিস্মিত ও বিষণ্ণ হল । দিনগত পাপক্ষয়ের বৃত্তিকে নীচতা ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য সমস্ত বিরুদ্ধতার বিরদ্ধে তার নিঃসঙ্গ সংগ্রাম এই উপন্যাসের মূল কথা। কঠোর বাস্তব ঘটনা ও ক্লেদাক্ত নীচতার পাষাণপ্রাচীরে আহত হয়ে অনেকেরই শিক্ষক- বৃত্তির স্বপ্নের ফলগগুলি ফাটবার অবকাশ পায় না। কেউ আশাহীন আনন্দহীন বৃত্তি ত্যাগ করে অন্য জীবনে চলে যায়, কেউ বৃথা বাদ-প্রতিবাদের মধ্যে না গিয়ে সেই অপ্রীতিকর জীবনকেই আঁকড়ে ধরে কায়ক্লেশে বেঁচে থাকে। আবার মষ্টিমেয় দু-একজন শত্রু যে শিক্ষার উচ্চতম আদর্শ' আঁকড়ে থাকে তা নয়, দূষিত পরিবেশ ও ভ্রষ্টাচার থেকে শিক্ষকদের সেই আদর্শের ছত্রছায়ায় আনতে চেষ্টা করে। হয়তো তারা ব্যর্থ হয়, কিন্তু কখনো নৈরাশ্যের বলি হয় না । ভূপেন্দ্র মরচে-ধরা লৌহপিণ্ডবৎ শিক্ষকজীবনকে স্বর্ণ খণ্ডে রূপান্তরিত করতে
চেষ্টা করেছিল। গজেন্দ্রকুমার এই উপন্যাসে এমনি একটি যুবকের স্বপ্নকে সার্থক করতে চেয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে এই উপন্যাসে তিনি শিক্ষা, শিক্ষকজীবন ও গ্রাম্য পরিবেশের যে নিঃশ্বাসরোধী ধূম্রজালের বাতাবরণ এঁকেছেন তার নিষ্প্রাণ, নিরৎসক ও প্রায়-নিঃস্পন্দ পরিবেশ ও চরিত্র আমাদের চেতনাকেও যেন অসাড় করে ফেলে। শিক্ষকজীবনের এই জ্বালা-যন্ত্রণা, হতাশা ও আদর্শ - হীনতার ধূমাঙ্কিত কালিমা ভূপেন্দ্র নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলেছে । প্রতিকলে গ্রাম্য পরিবেশ ও আদর্শ ভ্রষ্ট শিক্ষকদের সাহচর্যে থেকেও সে নতুন প্রভাতের স্বপ্ন দেখেছে। হয়তো দুটি-একটি ব্যক্তি, দু-একজন বালক শিক্ষার্থী তার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসে শিক্ষার যথার্থ তাৎপর্য উপলব্ধি করেছে, দু-একটি মনে সে প্রদীপ জ্বালাতে সমর্থ হয়েছে। সেইট কুই তার প্রাপ্তি, তাতেই সে সার্থক ।
এই খণ্ডের অন্তর্গত ‘কলকাতার কাছেই' উপন্যাসে যে পরিবারের কাহিনী শহর, হয়েছে, তারপরেও সে ধারা আরো দুটি উপন্যাসে ( ‘উপকণ্ঠে’–১৯৬১, ‘পৌষ-ফাল্গুনের পালা' – ১৯৬৪ ) প্রবাহিত হয়েছে। একটি দরিদ্র পরিবারের তিনপুরুষের দুঃখ-বেদনা হতাশা-ব্যর্থতায় শ্রীহীন আখ্যান দীর্ঘ কালপরিবেশে চেনা অচেনা চরিত্রের ভিড়ের মধ্য দিয়ে যেভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।